নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজ্যের বিশিষ্টজনেরা প্রয়াত হলে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই শোকবার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য তথা দেশের সাড়া জাগানো প্রাক্তন ফুটবলার ও কোচ সুভাষ ভৌমিকের মৃত্যুর পরেও সেই ক্ষেত্রে কোনও ব্যতিক্রম হল না। শোকবার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই শোকবার্তায় মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘বিশিষ্ট ফুটবলার ও কোচ সুভাষ ভৌমিকের প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি আজ কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। সুভাষ ভৌমিক ইস্ট বেঙ্গল, মোহনবাগান ক্লাব ছাড়াও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৭০ সালে এশিয়ান গেমসে ভারতের ব্রোঞ্জজয়ী দলের সদস্য ছিলেন তিনি। এ ছাড়াও তিনি কলকাতার তিন প্রধান ফুটবল দলের কোচের দায়িত্ব সুচারু ভাবে পালন করেছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০১৩ সালে তাঁকে ‘ক্রীড়াগুরু’ সম্মানে ভূষিত করে। তাঁর প্রয়াণে ক্রীড়া জগতের এক অপূরণীয় ক্ষতি হল।’
শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার সময় কলকাতার একবালপুরে ৭৩ বছর বয়সে প্রয়াত হন সুভাষ ভৌমিক। দীর্ঘ দিন ধরেই তিনি সুগার ও কিডনির অসুখে ভুগছিলেন। গত প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে তাঁকে নিয়মিত ডায়ালিসিস নিতে হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত বুকে সংক্রমণ নিয়ে তিনি ভর্তি হন একবালপুরের ওই নার্সিংহোমে। পরে আক্রান্ত হন কোভিডেও। সেই ভাইরাসই কেড়ে নিল তাঁর প্রাণ। তবে রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এদিন জানিয়েছেন, কোভিডবিধি মেনেই শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে এই বিশিষ্ট ফুটবলার ও কোচের। সেই কারনেই অত্যন্ত জনপ্রিয় হওয়া সত্ত্বেও সুভাষবাবুর মরদেহ ময়দানের কোথাও নিয়ে যাওয়া হবে না। এমনকি তাঁর বাড়িতেও না। নিমতলা মহাশ্মশানে এদিন বিকালেই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হবে। পরিবারের তরফে থেকে সেখানে কোভিডবিধি মেনে মাত্র পাঁচজন উপস্থিত থাকতে পারবেন।
এদিন সকালে একবালপুরের ওই নার্সিংহোমে সুভাষবনাবুর পরিজনদের সঙ্গে দেখা করার পর শেষকৃত্যের পরিকল্পনার খবর জানান ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তিনি আরও বলেন, ‘ওঁর ভবিষ্যৎ চিকিৎসার ব্যাপারে পরিকল্পনা করেই রেখেছিলাম। কিন্তু কিছুরই সুযোগ দিলেন না।’ অরূপবাবুকে বারবার ফোন করে খোঁজ নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুভাষের পরিবারের সঙ্গেও তিনি ফোনে কথা বলেছেন বলে এদিন সাংবাদিকদের জানান অরূপবাবু। ইস্টবেঙ্গলের কোচ হিসেবেই সব থেকে বেশি সাফল্য পেয়েছেন সুভাষ ভৌমিক। দলকে যেমন আশিয়ান কাপ জিতিয়েছেন, তেমনই পরপর দু’টি আই লিগও দিয়েছেন। শনিবার তাঁর প্রয়াণের পর একবালপুরের নার্সিংহোমে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন লাল-হলুদ কর্তা দেবব্রত সরকার। পরে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানালেন, ‘সুভাষবাবুর কীর্তিকে স্মরণীয় করে রাখতে একাধিক পরিকল্পনা নেওয়া হবে। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৪টের সময় ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে প্রয়াত সুভাষ ভৌমিকের স্মরণসভা আয়োজন করা হবে। প্রাক্তন খেলোয়াড়, ওঁর সতীর্থরা উপস্থিত থাকবেন। পুরোটাই হবে কোভিড বিধি মেনে। এ ছাড়াও সুভাষদার বিভিন্ন কীর্তি নিয়ে একটি মিউজিয়াম তৈরি করা হবে। আশিয়ান কাপ হাতে নিয়ে ওঁর একটি স্ট্যাচুও থাকবে সেখানে। সেই কাজও শেষ হয়ে এসেছে।’