-273ºc,
Friday, 2nd June, 2023 9:43 pm
নিজস্ব প্রতিনিধি: অনুমান আগেই ছিল। সেটাই বাস্তব হয়ে গেল বৃহস্পতিবার দুপুরে। কলকাতা পুরনিগমের তিন শীর্ষপদে কোনও বদলই আনলেন না তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলনেত্রী হিসাবে তিনি আস্থা রাখলেন সেই ফিরহাদ হাকিম, মালা রায় ও অতীন ঘোষের ওপরেই। বিগত পুরবোর্ডে তাঁরাই ছিলেন মেয়র, চেয়ারপার্সন ও ডেপুটি মেয়র পদে। এবারেও সেই সমীকরণই বজায় রাখলেন তৃণমূলনেত্রী। এর একটা বড় কারন অবশ্যই তিনের মধ্যে কোনও নিজ বিবাদ না থাকা। তার সঙ্গে অবশ্যই কলকাতা পুরনিগমের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত থাকার দৌলতে সেখানকার কাজকর্ম ও প্রশাসন নিয়ে আগে থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের বিষয়টিও এই তিনজনের ক্ষেত্রে গুরুত্ব পেয়েছে।
ফিরহাদ হাকিম বরাবরই মমতার ঘনিষ্ঠবৃত্তে থেকেছেন। দলের অতিবড় দুর্দিনেও তিনি দল ছেড়ে যাননি। পরিবর্তনের অনেক আগে থেকেই তিনি কলকাতা পুরনিগমের কাউন্সিলর হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরিবর্তনের পরে তিনি রাজ্যের মন্ত্রীও হয়েছেন। শোভন চট্টোপাধ্যায় মেয়র পদ থেকে সরে গেলে কলকাতা পুরনিগমের মেয়র পদের দায়িত্ব নেন ফিরহাদ। চালু করেন ‘টক টু মেয়র’ নামের জনপ্রিয় অনুষ্ঠানটিও যেখানে আমজনতা পুরপরিষেবা নিয়ে তাঁদের অভাব অভিযোগের কথা সরাসরি মেয়রকে জানাতে পারতেন। কোভিড পরিস্থিতিতে গতবছর নির্দিষ্ট সময়ে কলকাতা পুরনিগমের নির্বাচন হতে না পারায় ফিরহাদকেই প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ করে রাজ্য সরকার। সেই সময় থেকেই তাঁকে ব্যক্তিগত স্তরে আক্রমণ করা শুরু করে বিজেপি। এমনকি প্রশাসক পদ থেকেও তাঁকে সরাতে কলকাতা হাইকোর্টের পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টেও মামলা দায়ের করে বিজেপি। কিন্তু কোথাও কোনও জয়ের মুখে দেখেনি তাঁরা। এবার ফিরহাদ জিততেই তাঁকেই আবারও মেয়র পদে বসিয়ে তৃণমূলনেত্রী কার্যত সেই সব কুৎসার যোগ্য জবাব দিলেন।
মালা রায় দীর্ঘদিনের রাজনীতিবিদ। বেশ কয়েকবার দল বদলও করেছেন। কিন্তু তৃণমূলনেত্রীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের রসায়ন একই থেকেছে। খুব বড় বেশি বিতর্কেও কখনও জড়াননি। তার জেরেই তিনি পরিবর্তনের পরে তৃণমূলে গুরুত্ব পেয়েছেন। কলকাতা পুরনিগমের ৮৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে মালা রায় এবার ষষ্ঠবারের জন্য জিতে ডবল হ্যাট্রিক গড়েছেন। তবে তার আগেই তিনি কলকাতা পুরনিগমের প্রথম মহিলা চেয়ারপার্সন হিসাবে রেকর্ড গড়ে ফেলেছেন। ২০১৫ সালেই তৃণমূলনেত্রী তাঁকে সেই পদে বসিয়েছিলেন। এবারেও সেই পদেই তাঁকে রাখলেন বাংলার অগ্নিকন্যা। একই সঙ্গে দল তাঁকে দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ হিসাবেও কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে। সেই হিসাবে মালা রায় শুধুই কলকাতা পুরনিগমের চেয়ারপার্সন নন, তিনি দক্ষিণ কলকাতার সাংসদও। আর তাঁর এই রাজনৈতিক কেরিয়ারের উত্তরণ প্রতিটি ক্ষেত্রেই কিন্তু ঘটেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই। সেই আস্থার রসায়ন এবারেও বজায় রাখলেন তৃণমূলনেত্রী।
২০০৫ সাল থেকে কলকাতা পুরনিগমের ১১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জিতে কাউন্সিলরের ভূমিকা পালন করছেন অতীন ঘোষ। ২০১৮ সাল থেকে তিনি কলকাতা পুরনিগমের ডেপুটি মেয়র। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তিনি কাশিপুর বেলগাছিয়া বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়ে বিধায়কও হয়েছে। তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কোনও দুর্নীতির অভিযোগ তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। ওঠেনি তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগও। ডেপুটি মেয়র পদের দায়িত্বও যথাযথ ভাবে তিনি সামলেছেন। এবারেও দল তাঁর ওপর আস্থা রেখে তাঁকে প্রার্থী করেছিল। সেই আস্থার মর্যাদা তিনি রেখেছেন বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে। এবারে আবারও তৃণমূলনেত্রী তাঁকে ডেপুটি মেয়রের পদে বসিয়ে সেই আস্থাকেই টেনে নিয়ে গেলেন।