নিজস্ব প্রতিনিধি: যাবতীয় টানাপোড়েনের অবসান ঘটে গিয়েছে আগেই। আর তারপরেই চমক দিয়ে তিনি হয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফরের সঙ্গী। নজরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল সাংসদ দীপক অধিকারী থুড়ে টলি হিরো দেব(Dev) এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। এদিন অর্থাৎ সোমবার কলকাতা থেকে হুগলির আরামবাগে সভা করতে যাওয়ার পথে দেবকে সঙ্গী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে সেই সভায় যাওয়ার আগে হাওড়ার ডুমুরজলা থেকে সন্দেশখালি নিয়ে বার্তা দিলেন মমতা। সাংবাদিকেরা তাঁকে প্রশ্ন করেছিল রাজ্যপাল এবং রাজ্যের বিরোধী দলনেতার সন্দেশখালি(Sandeshkhali) যাত্রা নিয়ে। সেই প্রশ্নের উত্তরেই মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘যে যেখানে খুশি যেতেই পারেন। আমিও রাজ্য মহিলা কমিশনকে পাঠিয়েছিলাম। তারা রিপোর্ট দিয়েছে। আর যাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ, তাদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। যারা ওখানে অশান্তি করেছে তাঁদের সবাইকে গ্রেফতার করা হবে।’ তবে সেখানে শাহজাহান শেখ নিয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী।
গত সপ্তাহ থেকেই শাহজাহান বিরোধী বিক্ষোভে উত্তপ্ত সন্দেশখালি। তাঁকে এবং তাঁর অনুগামী শিবপ্রসাদ হাজরা, উত্তম সর্দারদের গ্রেপ্তারির দাবিতে মহিলারা বিক্ষোভে শামিল। তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে তোলাবাজি, জমি দখল, মহিলাদের ওপর অত্যাচারের মতো একাধিক অভিযোগে তোলপাড় এলাকা। এরই মধ্যে উত্তম সর্দারকে সাসপেন্ড করেছে তৃণমূল। তাঁকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও বিক্ষোভ কমছে না। এদিন রাজ্য বিধানসভায় সন্দেশখালি নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সহ বিজেপির ৬ বিধায়ক চলতি বাজেট অধিবেশনের জন্য সাসপেন্ড হয়েছেন। আবার রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস(C V Anand Bose) কেরল থেকে কলকাতায় ফিরেই এদিন সন্দেশখালি যেতে গিয়ে একাধিকবার রাস্তায় বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন। ১০০ দিনের কাজের বকেয়া মেটানোর দাবিতে মিনাখাঁর বামনবাজারের কাছে তাঁর কনভয় আটকানো হয়। কালো পতাকা, প্ল্যাকার্ড নিয়ে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ দেখান মহিলারা। ফলে বেশ কিছুক্ষণ আটকে পড়েন তিনি। বেশ কিছুক্ষণ আটকেও ছিলেন তিনি। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে সেখান থেকে নিরাপদে বেরিয়ে যায় রাজ্যপালের গাড়ি।
তবে এদিন সব থেকে বেশি নজর কাড়ছেন দেব, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর জেলা সফরের সঙ্গী হয়ে। সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন মুখ্যমন্ত্রীর যেখানে সভা আছে সেই আরামাবাগের কাছেই রয়েছে ঘাটাল। আর সেই সূত্রেই মুখ্যমন্ত্রী নিজে দেবকে অনুরোধ করেন তাঁর সফরসঙ্গী হতে। সেই অনুরোধ ফেলতে পারেননি দেব। তবে এদিনের সফরে বার হওয়ার আগেই দেব জানিয়ে দিয়েছেন তিনি ২৪’র ভোটে ফের ঘাটাল থেকেই তৃণমূলের প্রার্থী হচ্ছেন এবং ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়িত করাই তাঁর প্রধান লক্ষ। দেব জানিয়েছেন, ‘ঘাটাল নিয়ে সংসদে শেষ দিন আমি যা বলেছিলাম সেটা আবেগ থেকেই। আমার মধ্যে ঘাটাল নিয়ে আবেগ আছে। সেই জন্যই আমি আবার মনে হয় ঘাটাল থেকে দাঁড়াব। আমি ভেবেছিলাম এবার আর দাঁড়াব না। গত ১০ বছরে আমি তেমন কোনও কাজও করিনি। তবে আমি চাইনি কখনও আমার জন্য দলের নাম খারাপ হয়। আমি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুজনকেই তাই বলেছি, আমি চলে গেলেও দলের হয়ে প্রচার করব। অভিষেক আর দিদি এর পর আমায় ঘাটালের মানুষের কথা ভেবে এমন একটা প্রস্তাব দেন যা ঘাটালের ৭০ বছরের স্বপ্ন। তখন আমার মনে হল যে, এটার জন্য আমি সারা জীবন রাজনীতি করতে চাই। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান(Ghatal Master Plan) নিয়ে যদি কেন্দ্র সরকার কিছু না করে তাহলে হয়তো রাজ্য সরকার করবে। মুখ্যমন্ত্রী বলবেন। পরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রচারে গেলে বলবেন। অন্যকে ছোট করে, তার ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে নিজেকে বড় করার রাজনীতি আমি করি না।