নিজস্ব প্রতিনিধি: একুশের ভোটে বাংলা দখলের আশ নিয়ে দিল্লি থেকে যে ডেলি প্যাসেঞ্জারি শুরু করেছিলেন দেশের শাসক নরেন্দ্র মোদি, তা জনতার রায়ে কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। বাংলার রায় ছিল প্রধানমন্ত্রীর গালে সপাটে এক চড়। সেই হারের শোধ তুলতে আগেই প্রতিহিংসার রাজনীতি শুরু করেছিল কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন মোদি সরকার। এবার তারই বর্ধিত রূপ বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর রোম সফরের অনুমতি না দেওয়া। আসন্ন অক্টোবর মাসের ৬ ও ৭ তারিখ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইতালির রাজধানী রোমে যাওয়ার কর্মসূচী ছিল। সেই কর্মসূচীতে যোগ দেওয়ার জন্য দরকার ছিল কেন্দ্রের অনুমতি। কিন্তু মোদি সরকার সেই অনুমতি দিল না। আর সেটাও একদম শেষ মুহুর্তে। শুক্রবার গভীর রাতে বিদেশ মন্ত্রকের এক যুগ্মসচিব চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, যে কর্মসূচিতে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বিদেশমন্ত্রক মনে করে, ‘এই অনুষ্ঠান একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর অংশগ্রহণের জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’
ইটালির রাজধানী রোমে একটি বেসরকারি সংগঠনের আয়োজিত ওই কর্মসূচিতে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। মমতার পাশাপাশি জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মের্কেল, পোপ জর্জ মারিও এবং ইটালির শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী সেই আমন্ত্রণ গ্রহণও করেছিলেন। সেই মতো তাঁর সফরসূচিও চূড়ান্ত করা হয়ে গিয়েছিল। ঠিক ছিল, ভবানীপুরের উপনির্বাচনের পর তিনি রোম সফরে যাবেন। সেই মতো প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন মমতা। কিন্তু শুক্রবার রাতে আচমকাই এক লাইনের একটি চিঠি পাঠিয়ে বিদেশমন্ত্রক জানিয়ে দিলে কেন্দ্র সরকার এই সফরের অনুমতি দিচ্ছে না। এই ঘটনার জেরে তৃণমূলের তরফে দাবি করা হচ্ছে, কেন্দ্রের এই মনোভাব কার্যত প্রতিহিংসার রাজনীতি। ইচ্ছাকৃতভাবেই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। কেননা টাইমস ম্যাগাজিন সম্প্রতি বিশের যে ২০জন সেরা ও প্রভাবশালী রাজনীতিকদের নাম প্রকাশ করেছে সেখানে নরেন্দ্র মোদির পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও ছিল। সেই সঙ্গে ওই লেখায় মমতার যেমন ভূয়ষী প্রশংসা করা হয়েছিল তেমনি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নরেন্দ্র মোদির তীব্র সমালোচনাও করা হয়েছিল। সেই সমীক্ষা রিপোর্টই দেখিয়ে দিয়েছে মোদির ওপর আস্থা হারাচ্ছে ভারত সহ বিশ্ব আর সেখানেই মোদির বিকল্প হিসাবে উঠে আসছেন মমতা।
তৃণমূলের একাংশের মতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমেরিকা সফরের ঠিক পরে পরেই মমতা ইউরোপ সফরে গেলে তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ হতো। বিশেষত, যখন সেই কর্মসূচিতে মমতার সঙ্গেই থাকবেন পৃথিবীর অর্থডক্স খ্রিস্টান চার্চের প্রধান। থাকার কথা কায়রোর গ্রেট ইমামেরও। তাঁদের উপস্থিতিতে মমতা রাজনৈতিক ভাবে দেশের বর্তমান শাসকদলকে বিভিন্ন কারণে আক্রমণ করলে তা কেন্দ্রের পক্ষে বিড়ম্বনা তৈরি করবে। সে কারণেই বিদেশমন্ত্রক একেবারে শেষমুহূর্তে মমতাকে রোম সফরে যাওয়ার অনুমতি দিল না। যে সংগঠনটির তরফে মমতা-সহ অন্যদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, তার বয়স পঞ্চাশের ওপর। সারা পৃথিবীর ৭০টি দেশে তাদের সদস্য রয়েছেন। সদস্যসংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি। সমাজের বিভিন্ন পরিসরে সংস্থাটি কাজ করে। এই রকম এক সংস্থার অনুষ্ঠানে মমতা উপস্থিত থাকলে আন্তর্জাতিক মহলেও মমতার গুরুত্ব, পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা বাড়বে। উজ্জ্বল হবে তাঁর ভাবমূর্তি। নানা কারনে নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা এখন তলানিতে ঠেকতে চলেছে। সেখানে মমতার উত্থান চোখের বালি হয়েছে গেরুয়া শিবিরের কাছে। তাই কার্যত মোদির মুখ পোড়া দশা ঠেকাতেই মমতার সফরে রাশ টানলো বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্র সরকার।