নিজস্ব প্রতিনিধি: সুবিচার পেলেন নন্দদুলাল বাগ(Nandadulal Bag)। বাড়িতে বসেই ফেরত পেলেন ১২ লক্ষ টাকা। নেপথ্য অবশ্যই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়(Abhishek Banerjee)। যার নির্দেশে শুক্রবার রাত ১১টা নাগাদ নন্দদুলালবাবুর বাড়িতে ৩ ব্যক্তি গিয়ে ১২ লক্ষ টাকা ফেরত দিয়ে আসে। কে এই নন্দদুলাল বাগ? পূর্ব মেদিনীপুর(Purba Midnapur) জেলার নন্দকুমার(Nandakumar) ব্লকের মধ্যে থাকা কল্যাণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মাধবপুর গ্রামে নন্দদুলালবাবুর বাড়ি। তিনি টানা ১২বছর মাধবপুরে তৃণমূলের বুথ কমিটির সভাপতি। পাশাপাশি দলের ব্লক কমিটিরও সদস্য ছিলেন। তিনি তা৬র ছেলের স্ত্রী অনিতা বাগের প্রাথমিক শিক্ষিকা পদের চাকরির জন্য ১২ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান রাজদুলাল মাইতিকে(Rajdulal Maity)। কিন্তু অনিতার চাকরি হয়নি কেননা অনিতা টেট পাশ করতে পারেননি। আবার চাকরি না হওয়ার পরেও নন্দদুলালবাবু তাঁর দেওয়া টাকা ফেরত পাননি। সেই টাকা বার বার চেয়েও ফেরত না পাওয়ায় তিনি বিষয়টি সংবাদমাধ্যমের সামনে আনেন। সেই সঙ্গে বিষয়টি ED-কে জানিয়ে চিঠি দেন। বিষয়টি জানান তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। তারপরেই ১২ লক্ষ টাকা ফেরতের ঘটনা ঘটেছে।
আরও পড়ুন ১২ লক্ষ টাকা দিয়েছি, তাতেও চাকরি হয়নি, নালিশ অভিষেককে
টাকা ফেরত পেয়ে খুবই খুশি নন্দদুলালবাবু। তাঁর মূলত অভিযোগ ছিল এলাকার ৩ বারের তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার দে(TMC MLA Sukumar Dey) এবং কল্যাণপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান রাজদুলাল মাইতির বিরুদ্ধে। কেননা, টাকা দিয়ে চাকরি কেনার প্রস্তাব তিনি প্রথমে দিয়েছিলেন সুকুমারবাবুকেই। পরে সেই বিষয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন রাজদুলাল। এই রাজদুলালের হাতেই পরে ১২ লক্ষ টাকা তুলে দিয়েছিলেন নন্দদুলাল। এখন অবশ্য টাকা ফেরত পেয়ে নন্দদুলালের কিছুটা সুরও বদলে গিয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, ‘শুক্রবার রাতে বিধায়ক, পঞ্চায়েত প্রধান এবং অঞ্চল সভাপতি আমার বাড়িতে এসেছিলেন। তাঁরা ১২লক্ষ টাকা ফিরিয়ে দিয়েছেন। এখন আর আমার কোনও অভিযোগ নেই। আমি টাকা ফেরতের জন্য লড়াই করেছিলাম। অবশেষে টাকা ফেরত পেয়েছি। ভাইপোর কাছ থেকে ১০লক্ষ এবং বেয়াইয়ের কাছ থেকে আরও ২ লক্ষ টাকা ধার নিয়েছিলাম। সেই টাকা কিছুতেই শোধ করতে পারছিলাম না। ১২লক্ষ টাকা ফেরত পাওয়ায় আমি ধার করা টাকা শোধ করব।’
আরও পড়ুন সল্টলেকে ইডির নতুন কার্যালয় তৈরি হচ্ছে, আনা হলো নাইট ভিশন ক্যামেরা
এই ঘটনায় বিধায়ক সুকুমার দে জানিয়েছেন, ‘চাকরি দেওয়ার নামে টাকাপয়সা নেওয়ার ব্যাপারে আমার কোনও যোগ নেই। আমাদের দলের কয়েকজন নন্দদুলাল বাগকে প্ররোচিত করে অভিযোগ করিয়েছিল। আমার নাম পরিকল্পনা করে জড়ানো হয়েছিল। দলে কিছু বদমাশ লোকজন আছে। এসব তাদেরই কাজ। নন্দদুলালবাবু আমাদের কার্যালয়ে এসে এধরনের অভিযোগ করার জন্য আমার কাছে দুঃখপ্রকাশও করেছেন।’ তবে ED সূত্রে জানা গিয়েছে, যেহেতি নন্দদুলালবাবু নিজে তাঁদের চিঠি দিয়ে গোটা বিষয়টি জানিয়েছেন তাই তাঁরা ঘটনাটি নিয়ে এখন তদন্ত করবেন। কেননা টাকা দিয়ে বা ঘুষ দিয়ে চাকরি কেনা যেমন অপরাধ তেমনি সেই টাকা নেওয়াও সমান অপরাধ। এক্ষেত্রে নন্দদুলাল এবং রাজসুলাল ও সুকুমার প্রত্যেকেই অপরাধী। তাই তাঁদের বিরুদ্ধেই এবার তদন্ত শুরু করতে চলেছে ED। ৩জনকেই কলকাতায় ডাকা হতে পারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। সেখানে ED’র সঙ্গে সহযোগিতা করলে ভাল না হলেই গ্রেফতারি। একই সঙ্গে গোটা বিষয়টি ED কলকাতা হাইকোর্টেও জানাতে চলেছে। কেননা এই ঘটনাটি রাজ্যের নিয়োগ দুর্নীতির ঘটনায় হাতেগরম প্রমাণ যা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা হারাতে চায় না। তাঁরা জানতে চান কার নির্দেশে এই টাকা নন্দদুলালবাবুর কাছ থেকে চাওয়া হয়েছিল? কার নির্দেশেই বা সেই টাকা ফেরত দেওয়া হল? একইসঙ্গে এই টাকা এতদিন কার কাছে ছিল সেটাও তাঁরা জানতে চাইছেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়ে নন্দদুলালবাবু হয়তো টাকা ফেরত পেলেন কিন্তু এবার তাঁকে ED’র তদন্তের মুখে দাঁড়াতে হবে। একই ভাবে ED’র মুখোমুখি হতে হবে নন্দকুমার বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার দে এবং কল্যাণপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান রাজদুলাল মাইতিকেও।