নিজস্ব প্রতিনিধি: স্কুলস্তরেই শিক্ষার গেরুয়াকরণের পথ চুপিসারে নিশ্ছিদ্র করছে নরেন্দ্র মোদি(Narendra Modi) সরকার। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের(Political Science) কেন্দ্রীয় সিলেবাস থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে মহাত্মা গান্ধীর(Mahatma Gandhi) হত্যাকারী নাথুরাম গডসের(Nathuram Godse) হিন্দুত্ববাদী পরিচয়ও। কার্যত মুঘল সাম্রাজ্যের পর এবার কোপ গান্ধীহত্যার ইতিহাসেও! এই হত্যাকাণ্ডের পরবর্তীতে সাম্প্রদায়িকতার বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বা RSS-কে নিষিদ্ধ করেছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বল্লভভাই প্যাটেল। সেই বিষয়টির উল্লেখ পর্যন্ত দ্বাদশের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাঠ্যবই থেকে মুছে দিয়েছে ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং বা NCERT। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে গান্ধীজির আপসহীন অবস্থান থেকে দু’দশক আগের গুজরাত হিংসা—সবই এখন বাদের খাতায়। এককথায় মোদি সরকার তথা বিজেপিকে অস্বস্তিতে ফেলা যাবতীয় বিষয়ই আসন্ন শিক্ষাবর্ষ থেকে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে আর পড়াবে না CBSE এবং উত্তরপ্রদেশ স্কুলশিক্ষা বোর্ড।
আরও পড়ুন হনুমান জয়ন্তীতে অশান্তি রুখতে রাজ্যে তিন কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী
CBSE এবং উত্তরপ্রদেশ রাজ্য স্কুলশিক্ষা বোর্ডের তরফে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস বই থেকে মুঘল সাম্রাজ্যের অধ্যায় ছেঁটে ফেলার খবরে হইচই শুরু হয়েছে দেশজুড়ে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে শুধু মুঘল যুগকে কেটেছেঁটে ফেলে দিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছে না গেরুয়া শিবির। কার্যত নিঃশব্দে তাঁরা শিক্ষার গেরুয়াকরণের কাজও চালিয়ে যাচ্ছেন। গত বছর জুন মাসে NCERT সিলেবাসে রদবদলের যে তালিকা প্রকাশ করেছিল, তাতে গডসের পরিচয়, RSS-কে নিষিদ্ধ করার বিষয়গুলি ছিল না। বরং ছিল গুজরাত হিংসা, মুঘল দরবার, জরুরি অবস্থা, ঠান্ডা যুদ্ধ, মাওবাদী আন্দোলনের মতো অধ্যায়গুলি। তখন কোভিডে জর্জরিত দেশের ছাত্রছাত্রীদের বোঝা লাঘবের দোহাই দিয়েছিল NCERT। বলা হয়েছিল, নতুন বই ছাপার সময় নেই। তাই আগের বছরে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুসারে তৈরি সিলেবাস বহাল রাখা হয়েছে। কিন্তু আসন্ন ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের জন্য নতুন বই এখন ছেপে বাজারে চলে এসেছে, আর তাতেই সামনে এসেছে গান্ধী হত্যার ইতিহাস সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য বাদ দেওয়ার বিষয়টি।
আরও পড়ুন হনুমান জয়ন্তীর প্রাক্কালে শান্তির বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর
বিরোধীদের দাবি, জাতির জনকের হত্যাকাণ্ডে হিন্দুত্ববাদী শক্তিগুলির ভূমিকা ধামাচাপা দিতেই মোদি সরকারের এই পদক্ষেপ। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ইতিহাস-বিকৃতির অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস। গেরুয়া শিবিরের পক্ষে কলঙ্কজনক অধ্যায় স্কুলপাঠ্যের বাইরে বের করে দেওয়ায় গর্জে উঠেছেন বাংলার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও। তিনি বলেন, ‘RSS তো সত্যিই নিষিদ্ধ হয়েছিল। সেই ইতিহাস কী করে অস্বীকার করবে? মোদি যাঁর বিশাল মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন, সিদ্ধান্ত সেই বল্লভভাই প্যাটেলের। এটা ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা। গডসে যে হিন্দু মহাসভার সদস্য কিংবা গুজরাত হিংসার মতো ঐতিহাসিক সত্যকে চাপা দেওয়া হচ্ছে।’