নিজস্ব প্রতিনিধি: মুকুল রায়কে ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে জটিলতা অব্যাহত। তিনি যা বলছেন, যা দাবি করছেন তা তাঁর রাজনৈতিক পদক্ষেপ নাকি অসুস্থতার লক্ষণ তা নিয়ে বিতর্ক ওঠার পাশাপাশি তিনি এখন ঠিক কোন দলে রয়েছেন তা নিয়েও বিতর্ক ছড়িয়েছে। আর এইসব বিতর্কের মাঝেই রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন, মুকুল রায় পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটিতে থাকতে না চাইলে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। যার অর্থ খুব শীঘ্রই বড়সড় বদল আসতে চলেছে রাজ্য বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি বা পিএসিতে।
মুকুলকে ঘিরে যাবতীয় বিতর্ক নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে শুক্রবার ঘটে যাওয়া দুটি ঘটনার জেরে। প্রথমটি হল রাজ্য বিধানসভায় মুকুলের দলবদলের ঘটনাকে ঘিরে চলা বিষয়টিতে শুনানির সময় মুকুলের আইনজীবী সায়ন্তক দাস দাবি করেছেন, মুকুল বিজেপিতেই আছেন। তিনি তৃণমূলে যোগ দেননি। যে সময়ের কথা শুভেন্দু অধিকারীর তরফে বলা হয়েছে সেই সময় তাঁর স্ত্রী মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। তার জেরে আবেগবশত তিনি তৃণমূলের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেটাকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া বলা যাবে না। মুকুলের আইনজীবীর এই দাবি নিয়ে যখন রাজ্য রাজনীতিতে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে ঠিক তখনই গতকাল অপর একটি ঘটনা ঘিরে বিতর্ক ছড়িয়েছে। বোলপুরের ডাকবাংলো মাঠে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে যে বিকল্প পৌষ মেলার আয়োজন করা হয়েছে, সেখানে গতকাল অংশ নিতে যান মুকুল। বোলপুরের সার্কিট হাউস থেকে বেরিয়ে মেলা প্রাঙ্গনের দিকে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হন মুকুল। সেখানেই তিনি অনুব্রত মণ্ডলের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘পৌর নির্বাচনে সারা পশ্চিমবাংলা জুড়ে জয়ী হবে ভারতীয় জনতা পার্টি।’ তাঁর এমন মন্তব্যে হকচকিয়ে যান পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তৃণমূল নেতারা। পাশ থেকে সেই সময় তৃণমূল নেতারা মুকুলের ভুল শুধরে দেওয়ার চেষ্টা করলেও তিনি স্বর নামিয়ে বলেন, ‘ভারতীয় জনতা পার্টি মানেই তৃণমূল।’
এই দুই ঘটনা ঘিরেই এখন বিতর্ক চরমে উঠেছে। তার জেরেই এদিন পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘উনি শারীরিকভাবে সুস্থ নন। ভারসাম্যহীনভাবে কথা বলছেন। ওনার সুস্থতার কামনা করি। ওনার শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে, উনি যদি পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটিতে না থাকতে চান, তাহলে দল বিচার করবে। তবে দল তাঁর কথায় সহমত পোষণ করে না। উনি দলের কোনও পদেও নেই। বোলপুরে মুকুল রায় যে কথা বলেছেন তা দল অনুমোদন করে না। তাঁর এই বক্তব্য দলের বক্তব্য নয়। দল এই কথা সমর্থন করে না। মুকুল রায়ের কথা থেকে বোঝা যায় তাঁর মানসিক ভারসাম্যের সমস্যা হচ্ছে। মানসিক ভারসাম্যের সমস্যা থেকে তিনি এই সব মন্তব্য করেছেন।’ এই অবস্থায় বাবার হয়ে ব্যাটিং করতে নেমেছেন মুকুলপুত্র শুভ্রাংশু রায়। তবে তাঁর দাবি ঘিরেও এখন বিতর্ক দেখা দিয়েছে।
শুভ্রাংশু এদিন জানিয়েছেন, ‘বাবা অসুস্থ, বাবা যা বলেছেন, তা দলের কথা নয়। বাবার চিকিৎসা চলছে। আমার বাবা দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসে ভুগছেন। সম্প্রতি মা চলে গিয়েছেন, বাবাও কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তারপর থেকেই বাবা অসুস্থ। বাবাকে সুস্থ হওয়ার সময় দিন। বাবার বক্তব্য নিয়ে দল যা সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই মেনে নেওয়া হবে। তবে ওনার মন্তব্যের সঙ্গে যে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। বাবা সত্যি শারীরিক ভাবে অসুস্থ। উনি বিভিন্ন রকম কথা বলে ফেলছেন। পার্টি যা সিদ্ধান্ত নেবে তাই হবে। গতকাল বোলপুরে দলের কোনও অনুষ্ঠান ছিল না। সরকারি কর্মসূচিও ছিল না। বাবাকে ডাক্তার বলছেন, একটু বাইরে বেরোতে। হাওয়া বদলের কথা বলছেন। আমার মায়ের মৃত্যু এবং কোভিডের পর বাবার পটাশিয়াম-সোডিয়াম লেভেল ওঠানামা করছে। কোথাও কী করছে, কী বলছে, নিজেও বুঝতে পারছে না। এটা দলের বক্তব্য নয়। পুরোটাই বাবা ভুল বলেছে। আমি সংবাদমাধ্যমকে অনুরোধ করব, বাবার এই বক্তব্যগুলি বেশি না দেখানোর জন্য। কারণ, বাবার মানসিক অবস্থাও ঠিক নেই। সে কারণেই এগুলি হচ্ছে।’
তবে এই গোটা ঘটনা নিয়ে এদিন কটাক্ষ হেনেছেন বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেছেন, ‘যেটা সবাই জানত, সেটা এখন তাঁর ছেলে বলে দিয়েছে। এমনিতেই শারীরিক অবস্থা ঠিক ছিল না ওঁর। যেভাবে তাঁকে অপব্যবহার করা হয়েছে. অপমান করা হয়েছে, আমার মনে হচ্ছে শেষ জীবনে এটা ঠিক নয়। ওঁ একজন সিনিয়র মানুষ। ওঁর শেখা উচিত। শেষজীবনে এটা ওঁর বোঝা উচিত। শেষ জীবনে এত কষ্ট পাওয়া, এত অপমানিত হওয়া… আমার মনে হয় যাঁরা এই ধরনের রাজনীতি করেন, তাঁদের বোঝা উচিত।’