নিজস্ব প্রতিনিধি: রবিবার রাত থেকে শুরু হয়েছিল বৃষ্টি। চলে সোমবার বিকাল পর্যন্ত। তারপরও মঙ্গল ও বুধবার দফায় দফায় বিক্ষিপ্ত ভাবে বৃষ্টি ঝরেছে শহর কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায়। আর তার জেরেই বাগুইহাটি, কেষ্টপুর এলাকার একটা বড় অংশ টানা ৪-৫দিন ধরে জলবন্দি হয়ে রয়েছে। বাগুইআটির জ্যাংড়া, জর্দাবাগান, বিদ্যাসাগরপল্লি, রবীন্দ্রপল্লি, সাহাপাড়া, কাঠপোল ও শচীন্দ্রলাল সরণির মতো বিভিন্ন এলাকা ভারী বৃষ্টিতে কার্যত বিচ্ছিন্ন সব দ্বীপে পরিণত হয়েছে। একই অবস্থা কেষ্টপুরের প্রফুল্লকানন এলাকারও। কোথাও হাঁটু জল আবার কোথাও কোমর সমান জল। আরও চমকে দেওয়ার মতো ঘটনা এটাই যে, বৃষ্টি না হয়েও বেশ কিছু এলাকায় জল ঢুকে পড়ছে বাগজোলা খালের জল ব্যাক-ফ্লো হয়ে। আর এই পরিস্থিত জন্য বিস্তীর্ন এলাকার মানুষ এখন দুষছেন তাপস চট্টোপাধ্যায়কে।
রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভা ২০১৫ সালে বিধাননগর পুরসভার সঙ্গে যুক্ত হয়ে এখন বিধাননগর পুরনিগম এলাকা বলেই চিহ্নিত হয়েছে। সেই পুরনিগমের প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র তথা নিউটাউনের বর্তমান বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায় দীর্ঘদিন ধরেই রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার পুরপ্রধান ছিলেন। কার্যত বাম জমানার সিপিএম নেতা তাপসবাবুর দাপটে তখন বাঘে গরুতে একঘাটে জল খেত। এখন জলবন্দি বাগুইহাটি-কেষ্টপুরের ভুক্তভোগী মানুষ এখন কার্যত সরব হয়েছেন, তাপসবাবুর আমলে রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভা বাগুইহাটি-কেষ্টপুর এলাকায় মুড়ি মুড়কির মতো যত্রতত্র বহুতল বাড়ি নির্মাণের ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছিল। তার জেরে এলাকায় জলাভূমি বলে তো কিছু অবশিষ্ট নেই, সেই সঙ্গে জলনিকাশী ব্যবস্থাও সম্পূর্ণ ভাবে ভেঙে পড়েছে। সব থেকে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বাগজোলা খালের ধারে অজস্র বহুতল মাথা তুলে দাঁড়ানোয় খালের জল এখন ব্যাক-ফ্লো হয়ে ঢুকে পড়ছে বাগুইহাটি-কেষ্টপুর এলাকায়।
ভুক্তভোগী জনতার এই অভিযোগ একদম উড়িয়ে দিতেও পারছে না বর্তমান বিধাননগর পুরনিগম কর্তৃপক্ষও। কার্যত তাঁরা স্বীকারও করে নিচ্ছেন বাগজোলা বাইপাস ওয়ান বা বিবি-১ এবং বাগজোলা বাইপাস টু বা বিবি-২ খাল দু’টির জলবহন ক্ষমতা কার্যত শেষ। আর তার মূলে দুই খালেরই ধার ঘেঁষে অপরিকল্পিত ভাবে তৈরি হওয়া অসংখ্য বহুতল। ২০১৫ সালের আগে ওই সব বহুতলের নকশার অনুমোদন দিয়েছিল রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভা। সেই সময় দেখা হয়নি জলাজমিতে বা খাল ধারের নীচু জমিতে ওই সব বহুতল তৈরি হলে সেখানকার জল কীভাবে বার হবে। কার্যত এখন অবস্থা এমনটাই দাঁড়িয়েছে যে, বাগজোলা খালের থেকে নীচে হয়ে গিয়েছে ওই সব বহুতল থাকা এলেকাগুলি। ফলে দেখা যাচ্ছে একটু বৃষ্টি হলেই সেখানে হাঁটু সমান জল দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। আর রবিবারের বৃষ্টির পর থেকে তো ওই সব এলাকায় কোথাও টানা ৩দিন কোথাও টানা ৪দিন জল দাঁড়িয়ে রয়েছে। শুধু যে দাঁড়িয়ে রয়েছে এমনই নয়, অজস্র বাড়িতে জল ঢুকে পড়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্তও বাগুইহাটি-কেষ্টপুর এলাকার ওই সব জলবন্দি পাড়াগুলি কার্যত বিদ্যুৎহীন, পানীয় জলহীন অবস্থায় রয়ে গিয়েছে। আর তার সঙ্গে চূড়ান্ত দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন সেখানকার বাসিন্দারা।
তাপসবাবু অবশ্য এই ঘটনার দায় নিজের কাঁধে নিতে চাননি। তিনি জানিয়েছেন, ‘খালের অনেক দূরে হওয়া সত্ত্বেও নিউটাউনে বহু বাড়িতে জল ঢুকেছে। আমরা যতটা সম্ভব পরিকল্পনা করেই এগিয়েছিলাম। নয়ানজুলি ভরিয়েই তো বাগুইআটি সার্ভিস রোড হয়েছে। উন্নয়ন কি হবে না? অতীত থেকে শিক্ষা নিয়েই এগোতে হবে। নিম্নচাপের জেরে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। খালগুলি জল বইতে পারছে না। সেচ দফতর, নগরোন্নয়ন দফতর, পুরসভা-সহ বিভিন্ন দফতর মিলে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা চলছে।’ তবে বাগজোলা খাল নিয়ে এবার নতুন করে ভাবনাচিন্তা করতে শুরু করে দিয়েছে হিডকো কর্তৃপক্ষও। কেননা এই খালের জেরে এখন নিউটাউনের বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আপাতত ঠিক হয়েছে, বালির বস্তা দিয়ে বাগজোলা খালের জল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। তবে আগামী দিনে বাগজোলা খালপাড় উঁচু করার পথেই হাঁটবে হিডকো। বিধাননগর, নিউটাউন, রাজারহাট এবং ভাঙড়ের জল নিকাশিতে বাগজোলা খালের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এ বার জলস্তর এত বেড়েছে যে, খালের জল নদীতে না-মিশে ধাক্কা খেয়ে লোকালয়ে ফিরে আসছে অর্থাৎ ব্যাক ফ্লো করছে। সেই জন্যই বেড়েছে ভোগান্তি। আবার বৃষ্টি থামলেও রাস্তা মেরামতির কাজ করা যাচ্ছে না জল জমে থাকায়। সব মিলিয়ে তাই খালপাড় উঁচু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হিডকো। তাঁদের আশা তাতে নিউটাউন বা বিধাননগর এলাকায় জল জমার ভোগান্তি কমবে। যদিও এতে বাগুইহাটি-কেষ্টপুর এলাকার মানুষের জলযন্ত্রণার অবসান ঘটবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।