নিজস্ব প্রতিনিধি: তখনও আলো ভালো করে ফোটেনি। ঘড়ির কাঁটা সওয়া পাঁচটার আশেপাশে। হঠাতই দুলে উঠল খাট, নড়ে উঠল চেয়ার, টেবল, কেঁপে উঠল বাড়ি। মনে হল কে যেন এসে ধাক্কা দিয়ে গেল। কিন্তু সেই অনুভূমির সময় খুবই কম। মাত্র ৩০ সেকেন্ড। অভিজ্ঞরা অবশ্য বুঝতে পেরেছিলেন ক্ষণিকের তরেও কেঁপে উঠেছিল ধরত্রী। হেমন্তের ভোরে শুক্রবার সকালে কলকাতাবাসীর ঘুম ভাঙল ভূমিকম্পের মধ্যে দিয়ে। দেশের জাতীয় ভূতাত্ত্বিক কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, এদিন ভোরে হওয়া ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৬.১। ভূমিকম্পের জেরে শুধু কলকাতাই নয় কেঁপে উঠেছে হুগলি, হাওড়া, দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর জেলাও। কেঁপেছে উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলাও। কম্পন বেশি মাত্রায় অনূভূত হয়েছে বাংলাদেশ ও মায়ানমারে। ভূমিকম্পের উৎসস্থল মিজোরামের থেনজল থেকে ৭৩ কিমি দক্ষিণ-পূর্বে মাটির ১২ কিমি গভীরে। আর তাই উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রায় সব রাজ্যেই কম্পন বেশ জোরালো ছিল। তবে কোথাও থেকে কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর মেলেনি।
কলকাতায় যারা নাইট ডিউটি করছিলেন তাঁরা বেশ ভালই ভূমিকম্পের অনুভূতি টের পেয়েছিলেন। কম্পন বুঝতে পেরে অনেকেই বাইরে বেরিয়ে আসেন। তবে এবারে সেভাবে শঙ্খধ্বনি যেমন শুনতে পাওয়া যায়নি তেমনি পাখি বা কুকুরের ডাকও খুব একটা কানে আসেনি। তবে ঘটনা এটা যে বাংলাদেশ সহ ভারতেও ভূমিকম্পের ঘটনা ক্রমশই বেড়ে চলেছে। একটি ভূমিকম্পের থেকে অন্যটির ব্যবধানও খুব বেশি সময় হচ্ছে না। তবে মন্দের ভালো এটাই যে সব ভূমিকম্পই সেভাবে জোরদার নয়। তার জেরেই হয়নি কোনও ক্ষয়ক্ষতি বা প্রাণহানির ঘটনা। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে উত্তর-পূর্ব, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব বেল্টে ভূমিকম্পের সম্ভাবনা বেশি। কারণ এই দিক দিয়েই গিয়েছে প্লেট বাউন্ডারি লাইনটি। ৮০ শতাংশের বেশি কম্পন হয় প্লেট বাউন্ডারি লাইনগুলিতেই। বিগত কয়েক বছরে সেই লাইনেই ভূমিকম্পের জন্য বার বার কেঁপে উঠেছে দুই বাংলার বিস্তীর্ন এলাকা। এদিনের ভূমিকম্পকে বেশ শক্তিশালী হিসাবেই দেখছেন তাঁরা। তবে ভাগ্য ভাল যে সেভাবে কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।