নিজস্ব প্রতিনিধি: কলকাতা পুরনিগম সহ রাজ্যের ১১৪টি পুরসভার নির্বাচন এখনও বকেয়া রয়েছে। ২০২০ সালেই এই নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোভিডের কারনে ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করেও তা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। সেই বকেয়া নির্বাচন নিয়ে রাজ্য সরকার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশন যখন নতুন করে প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছে ঠিক তখনই কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে যাতে দ্রুত এই ১১৪টি পুরসভায় নির্বাচন করানো হয় এই আর্জি নিয়ে। আগামী ১৭ নভেম্বর এই মামলার শুনানির দিন ধার্য হয়েছে। মজার কথা এদিনই রাজ্য বিজেপির তরফে জানানো হয়েছে, রাজ্যের সব ক’টি পুরসভার বকেয়া ভোট এক সঙ্গে না হলে মামলা করা হবে। সোমবার সাংবাদিক বৈঠক করে এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বঙ্গ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। আর এই হুমকির জেরেই প্রশ্ন উঠেছে হঠাৎ করে এহেন হুমকি কেন দিলেন বঙ্গ বিজেপির সভাপতি? সেটা কী দলের দৈন্য দশা ঢাকা দেওয়ার জন্য?
ইতিমধ্যেই নানা সূত্রে সামনে এসেছে যে, রাজ্য সরকার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশন পুরভোটের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছে। সম্ভবত আগামী ডিসেম্বর মাসে কলকাতা ও হাওড়া পুরসভায় ভোট করাতে চাইছে রাজ্য সরকার। বাদ বাকি পুরসভার নির্বাচন হতে পারে আগামী বছরের প্রথম দিকে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ৩ বা ৪ দফায়। কিন্তু তার আগেই হাইকোর্টে যেমন মামলা দায়ের হয়েছে তেমনি বঙ্গ বিজেপির সভাপতিও আরও একটি মামলা করার হুমকি দিয়ে বসে রইলেন। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে তাঁরা আসলে চাইছেনটা কী? এদিন যে মামলা কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হয়েছে তার পিছনে কী বিজেপির মাথাই কাজ করছে? নাকি উভয় পক্ষ মিলে পুরনির্বাচনটাই ভেস্তে দিতে চাইছে? ভুললে চলবে না, একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পরে রাজ্যে যে ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রে নির্বাচন হয়েছে সেই ৭টি আসনেই বিজেপি শুধু হেরেছে তাই নয়, ৩টি আসনে তাঁরা জামানত খুইয়ে বসে আছে। কার্যত রাজ্য জুড়ে বিজেপি থেকে আমজনতা মুখ ফেরাতে শুরু করে দিয়েছেন। নিত্যদিন দল ছাড়ছেন নেতা ও কর্মীরা। দল ছাড়ছেন সাংসদ ও বিধায়কেরাও। এই অবস্থায় পুরনির্বাচনে বিজেপি সব জায়গায় প্রার্থী দিতে পারবে কিনা তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
সোমবার বিকেলে সুকান্ত মজুমদার সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, ‘রাজ্যে সব কটি পুরসভায় বকেয়া ভোট এক সঙ্গেই করাতে হবে। নইলে আদালতে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করবে বিজেপি। আর যদি নিরাপত্তার কারণে একান্তই এক সঙ্গে ভোট করানো না যায়, তা হলে ভোটের ফলাফল যাতে এক দিনে ঘোষণা করা হয়। ভোট এক সঙ্গে হলে বিজেপির লড়ার ক্ষমতা রয়েছে।’ এখানেই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কয়েক দফায় ভোট হলে বিজেপি কী লড়াই করতে পারবে না? তাঁদের কী সেই সাংগঠনিক ক্ষমতা আর নেই? কলকাতা ও হাওড়ায় আগে ভোট হলে সেখানে যদি বিজেপি সব আসনে প্রার্থী দিতে না পারে আর প্রার্থী দিয়েও যদি জিততে না পারে বা জামানত বাঁচাতে না পারে তাহলে তার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়তে দেখা যাবে পরের ধাপের পুরনির্বাচনগুলিতে। আর সেই জায়গাতেই নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতেই কী সুকান্ত এহেন হুমকি দিয়ে বসলেন? এই প্রশ্নটাই কিন্তু এখন উঠে এসেছে।