নিজস্ব প্রতিনিধি: মুকুল রায় দিয়ে যে তালিকার জন্ম হয়েছিল সেই তালিকা এখন ক্রমবর্ধমান। তাতে একে একে যোগ হয়েছে বিশ্বজিৎ দাস, তন্ময় ঘোষ, সৌমেন রায়ের নাম। আগামী দিনে তাতে হয়তো যোগ হতে চলেছে কৃষ্ণ কল্যাণী ও হিরণ চট্টোপাধ্যায়ের নামও। তবে তালিকা সেখানেই থেমে যাচ্ছে না। আগামী দিনে তা বেড়েই চলবে। এই ইঙ্গিত শুধু যে পদ্ম শিবির থেকেই মিলেছে তা নয়, রাজ্যের শাসক দলের তরফেও মিলেছে। মূল লক্ষ্য বঙ্গ বিজেপিকে রাজ্য বিধানসভায় ৩০ এর নীচে নামিয়ে দেওয়া ও তাঁদের কাছ থেকে বিরোধী দল ও শুভেন্দু অধিকারীর কাছ থেকে বিরোধী দলনেতার তকমাটুকু কেড়ে নেওয়া। সেই লক্ষ্যেই তৃণমূল কাজ করে চলবে ঘাসফুল শিবির ভাঙানোর জন্য। রাতারাতি না হলেও আগামী ৩ বছরের মধ্যেই এই লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে চায় শাসকদল। বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব দলের বিধায়কদের দলত্যাগের এই বিষয়টিকে নিয়ে কার্যত কোনও মাথাই ঘামাতে চাইছে না। কিন্তু তাঁদের এই নীতি নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে দলেরই অন্দরে।
যে সব বিধায়ক বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলের দিকে পা বাড়াচ্ছেন তাঁদের প্রতি বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব বেশ কড়া মনোভাব নিচ্ছেন। এই বিশয়ে সবথেকে বেশি অগ্রণী রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি এখন যেমন উঠে পড়ে লেগেছেন মুকুল রায়ের বিধায়ক পদ বাতিল করতে তেমনি এই পথে হেঁটে আগামী দিনে তিনি বিজেপি ছুট বিধায়কদের পদ বাতিলের দিকেও হাঁটা দেবেন। কিন্তু তাঁর এই পদক্ষেপ আর তাতে বঙ্গ বিজেপির সন্মতি দলের অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না। এই মানতে না পারা অংশটির দাবি, শুভেন্দুর এই পদক্ষেপে কার্যত বিজেপি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে একধার থেকে। লাভবান হবে তৃণমূল। এই দাবির পিছনে ওই শিবিরের অভিমত, যে সব বিধায়কের পদ বাতিল হবে সেই সব আসনে আবারও উপনির্বাচন করাতে হবে। আর সেই উপনির্বাচনে বিজেপির জয় কার্যত অসম্ভব। কেননা একুশের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল সকলের সামনে চলে এসেছে। তাই এখন আর কেউ আগ বাড়িয়ে বিজেপিকে ভোট দিতে আসবে না। তাই বিজেপির কোনও বিধায়ক পদত্যাগ বা তাঁর বিধায়ক পদ খারিজ হলে আখেরে তাতে লাভ তৃণমূলেরই। শুভেন্দু অধিকারী কী তৃণমূলের সেই সুবিধা করে দিতেই দলছুট বিধায়কদের পদ বাতিলের জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন? এই প্রশ্ন বঙ্গ বিজেপির সেই বিক্ষুব্ধ অংশের।
এই শিবিরের আরও দাবি, দলছুট বিধায়কদের পদ বাতিল না করলে তাঁরা বিধায়ক থাকবেন ঠিকই, শাসক শিবিরে থাকবেন সেটাও ঠিক, কিন্তু একই সঙ্গে খাতায়কলমে তাঁরা বিজেপির বিধায়কই থাকবেন। দল যদি কোনও বিষয়ে হুইপ জারি করে তাহলে সেই হুইপ মেনে ওই বিধায়ক কাজ করতে বাধ্য থাকবেন। ফলে ওই বিধায়কের ওপর দলের কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ থাকবে। কিন্তু বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের মৌন সন্মতি নিয়ে শুভেন্দু যে পথে এগোচ্ছেন তাতে ওই দলছুট বিধায়কের ওপর থেকে দলের নিয়ন্ত্রণ তো চলেই যাচ্ছে সম্পূর্ণ ভাবে সেই সঙ্গে দলের বিধায়ক সংখ্যাও কমে চলেছে। কেননা উপনির্বাচনে শাসক শিবিরের জয়ই হয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে। শুভেন্দুর পদক্ষেপ তাই পক্ষান্তরে তৃণমূলকেই সুবিধা পাইয়ে দিচ্ছে বলে বঙ্গি বিজেপির বিক্ষুব্ধ অংশের দাবি। সূত্রে জানা গিয়েছে আগামী ৩০ অক্টোবর রাজ্যের যে ৪টি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হবে তার ফলাফল কী হয় তা দেখে বিষয়টি দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সামনে আনা হবে বলে বঙ্গ বিজেপির ওই বিক্ষুব্ধ অংশ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উল্লেখ্য ও ৪টি আসনের মধ্যে শান্তিপুর ও দিনহাটায় জয়ের মুখ দেখেছিল বিজেপি। উপনির্বাচনে সেই জয়ের রেশ বিজেপি ধরে রাখতে না পারলে শুভেন্দুর পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য বঙ্গ বিজেপিতে। আর যে হারে বিধায়কেরা দল ছাড়তে শুরু করেছেন তাতে করে আগামী দিনে রাজ্যসভাতেও বিজেপি প্রার্থী পাঠাতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ থাকছে।