নিজস্ব প্রতিনিধিঃ পদ্মশ্রী ফেরালেন ‘গীতশ্রী’ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। মঙ্গল সন্ধ্যায় কেন্দ্রের তরফে এই বর্ষীয়ান শিল্পীকে পাঠানো হয় ‘পদ্মশ্রী’ সম্মান। যা নিতে অস্বীকার করলেন কিংবদন্তী শিল্পী।
এদিন তাঁর কন্যা সৌমি সেনগুপ্ত মায়ের ‘পদ্মশ্রী’ প্রত্যাক্ষানের বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে জানান, ”১২ বছর বয়স থেকে ‘গীতশ্রী’ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় সঙ্গীতচর্চা করেন। এতবছর পর তাঁকে পদ্মশ্রী দেওয়া অপমানের। এই সম্মান আরও অনেক আগে তাঁর প্রাপ্য ছিল। একজন তরুণ সঙ্গীতশিল্পীকে এই সম্মান দেওয়া হলেও আপত্তির কিছু ছিল না। কিন্তু তাঁর মত একজন নবতিপর শিল্পীর জন্য এ অসম্মান ও অবমাননার সমান। তিনি এ সম্মান গ্রহণ করবেন না। ইতিমধ্যেই এই সম্মান তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন।” তিনি আরও জানিয়েছেন, যে ”এই পদ্মশ্রী সম্মান তাঁকে পাঠানোর আগে কেন্দ্রের তরফে কোনওরকম যোগাযোগ তাঁর সঙ্গে করা হয়নি। তাঁদের এই সম্মান নিয়ে কোনও রকম ধারণাই নেই ” কারণ একটাই, দীর্ঘ ৭৮ বছর ধরে এই সঙ্গীতময় জীবনের অধিকারিণী তিনি। কিন্তু তখন তাঁর কাছে এই প্রাপ্য সম্মান আসেনি। তাই, এই জীবন সায়াহ্নে এসে এমন সম্মান তাঁর কাছে অসম্মানের সমান। তাই তা না নিয়ে ফিরিয়ে দিলেন শিল্পী।
স্বর্ণযুগের সিনেমা মানেই ‘গীতশ্রী’ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কন্ঠে একের পর এক মন জুড়িয়ে দেওয়া গান। যা প্রেম, সম্পর্ক, দাম্পত্যের অভিধাই পাল্টে ফেলেছিল। আজ এত বছর পেরিয়ে এসেও সেই গানগুলি চর্চার শিখরে। কিন্তু যে শিল্পীস্বত্বা ও শিল্পের প্রতি আনুগত্য ছিল, তাতে অনেক আগেই ‘গীতশ্রী’ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের প্রাপ্তির ঝুলি ভরে যাওয়ার কথা। কিন্তু তা হয়নি। বাঙালি শ্রোতা তাঁকে সম্মান জানালেও কেন্দ্রের তরফে অনেক দেরিতে তাঁকে পাঠানো হল তাঁর প্রাপ্য সম্মান।
যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘গীতশ্রী’ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠতা বারবার প্রত্যক্ষ করা গিয়েছে। রাজ্যসরকারের নানা সংস্কৃতিমূলক অনুষ্ঠানে তাঁকে দেখা গিয়েছে। তাঁকে যোগ্য সম্মান দিয়েছেন বাংলার মেয়ে ও অবশ্যই এই রাজ্যের মানুষ। কিন্তু বড় দেরি করে ফেলল কেন্দ্র। যে সম্মান অনেক আগে দেওয়া উচিত ছিল তা পৌছাল অনেক দেরিতে।
তবে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় একা নন। এর আগেও এই ‘বিরল ঘটনা’র নজির রয়েছে। মৃত্যুশয্যায় ৯৮ বছর বয়সে হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা অচৈতন্য নারায়ণ দেবনাথের হাতেও অনেক দেরিতে এসে পৌঁছেছিল ‘পদ্মশ্রী’ সম্মান। তবে তিনি তা ফিরিয়ে দেওয়ার অবস্থাতেই ছিলেন না। বলা ভালো তাঁকে যে সম্মানিত করা হচ্ছে তা বোঝার মত অবস্থাতেও ছিলেন না শিল্পী। নেটদুনিয়ায় সেই ছবি ভাইরাল হতেই রোষের মুখে পড়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কমেন্ট বক্স ভরে গিয়েছিল সময় মত তাঁকে প্রাপ্য সম্মান না দিয়ে মৃত্যুশয্যায় বিরক্ত করা নিয়ে। আসলে এই দেশে শিল্পীর সেই মর্যাদা আজও নেই। নেই তাঁর সম্মান।