নিজস্ব প্রতিনিধি: কথা ছিল আমসত্ত্ব আর গোলাপজাম মিষ্টি নিয়ে সাইকেল চালিয়ে মালদা(Malda) থেকে কালিঘাটে(Kalighat) আসবে সায়ন্তিকা। দেখা করবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) সঙ্গে। জেলা প্রশাসন থেকে রাজ্য পুলিশ সর্বস্তরেই মিলেছিল অনুমতি। কিন্তু একদম শেষ মুহুর্তে মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছাতে সেই পরিকল্পনায় বদল ঘটানো হয়। বুধবার রাতেই মালদা টাউন স্টেশন থেকে গৌড় এক্সপ্রেসে উঠে পড়ে বছর ৮’র সায়ন্তিকা দাস(Sayantika Das)। যার ইচ্ছা হয়েছিল বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মালদা আমসত্ত্ব খাওয়ানোর আর দুই দিদির পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়ে ওঠা ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্প চালু জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দেওয়ার। সেই সায়ন্তিকার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর দেখা হল বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর কালিঘাটের বাড়িতে।
নানা সংবাদমাধ্যম ও প্রশাসনের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানতে পেরেছিলেন সায়ন্তিকা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চায়। তাঁকে আমসত্ত্ব খাওয়াতে চায়, তাঁকে ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্প চালু করার জন্য ধন্যবাদ দিতে চায়। সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী এটাও জানতে পেরেছিলেন পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে মালদার ইংরেজবাজার থেকে সাইকেল চালিয়ে কলকাতার(Kolkata) কালিঘাটে আসবে সায়ন্তিকা। সঙ্গে বাইকে করে থাকবে তার বাবা-মা প্রদীপ দাস ও উমা দাস। সেই সাক্ষাতের কথা ছিল আগামী ২৯ মে। কিন্তু ৩০ তারিখ মুখ্যমন্ত্রী পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলা সফরে যাবেন। তাই নিজেই সেই সাক্ষাতের সময়কে এগিয়ে আনলেন। তাঁর নির্দেশে মালদা জেলা প্রশাসনের তরফে সব ব্যবস্থা করে বুধবার রাতেই সায়ন্তিকা ও তাঁর বাবা-মাকে পুলিশ তুলে দেয় গৌড় এক্সপ্রেসে। সেই ট্রেন ধরেই সায়ন্তিকা বাবা-মার সঙ্গে বৃহস্পতিবার ভোরে এসে নামে শিয়ালদা স্টেশনে। তারপর সেখান থেকে সোজা সাইকেলে কালীঘাটে। যানজটপূর্ণ, জনবহুল কলকাতার রাস্তায় সায়ন্তিকার সাইকেল চালিয়ে যেতে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সে ব্যাপারে আগে থেকেই তৎপর ছিল প্রশাসন। সায়ন্তিকা শিয়ালদা নামতেই রীতিমতো এসকর্ট করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় কালীঘাটে। সাইকেল চালিয়েই সায়ন্তিকা সাতসকালে পৌঁছে যায় মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে। বাড়ির উঠোনে সায়ন্তিকার সাইকেল পৌঁছতেই ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন মুখ্যমন্ত্রী।
এরপর প্রায় এক ঘন্টা চলে মুখ্যমন্ত্রী ও সায়ন্তিকার আলাপচারিতা। মুখ্যমন্ত্রীকে আমসত্ত্বও খাওয়ায় সায়ন্তিকা। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর কাছ থেকে জানতে চান ভবিষ্যতে সে কী হতে চায়। জবাবে সায়ন্তিকা জানায় সে আইএএস অফিসার হবে। আর তা শুনে মুখ্যমন্ত্রী জানান, সায়ন্তিকার স্বপ্ন পূরণে যাতে কোনও বাধা না আসে সে দিকে তিনি লক্ষ্য রাখবেন। সায়ন্তিকার বাবা-মাকে তিনি জানান, সায়ন্তিকার পড়াশোনায় কোনও সমস্যা হলে তাঁকে যেন অবিলম্বে জানানো হয়। মুখ্যমন্ত্রীর এই আশ্বাস পেয়ে অভিভূত সায়ন্তিকার বাবা প্রদীপ দাস ও মা উমা দাস। তাই মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি থেকে বেরিয়ে আবেগজড়ানো কণ্ঠে প্রদীপবাবু জানান, ‘পুরোটাই স্বপ্নের মতো লাগছে। এখনও ঘোর কাটছে না।’ এদিন মুখ্যমন্ত্রী সায়ন্তিকাকে উপহার হিসাবে তার হাতে তুলে দেন বই, মিষ্টি ও চকলেট। দিয়েছেন একটি বিশ্ববাংলার ব্যাগও। শেষে গাল টিপে আদরও করে দেন তাকে।