নিজস্ব প্রতিনিধি: পার্থ চট্টোপাধ্যায়(Partha Chattopadhay) আপাতত ক্লোজড চ্যাপ্টার তৃণমূলের(TMC) অন্দরে। বৃহস্পতিবারই তাঁর মন্ত্রীত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে। কেড়ে নেওয়া হয়েছে দলের সব পদ। করা হয়েছে সাসপেন্ড। এখন তিনি শুধুই বিধায়ক। সূত্রে খবর সেটিও হয়তো ছেড়ে দিতে দলের তরফ থেকেই তাঁকে চাপ দেওয়া হতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে এরপর কে? কেননা তৃণমূলের এখন যা হাবভাব তাতে অনেকেই মনে করছেন দলে যাদের ঘিরে বিতর্কের পাহাড় জমে উঠছে তাঁদের এবার আস্তে আস্তে ঝেড়ে ফেলা হবে। দলে রেখেও কার্যত গুরুত্বহীন, কোনঠাসা করে রাখা হবে। তাতে যদি তাঁদের পরিবর্তন হয় তো ভাল নাহলে তাঁকেও ক্লোজড চ্যাপ্টার করে দেওয়া হবে। আর এখানেই প্রশ্ন পার্থ’র পর কে? এই প্রশ্নের মুখেই যার নাম এখন তৃণমূলের অন্দরে সব থেকে বেশি ঘুরছে তিনি আর কেউ নন, নির্মল মাজি(Nirmal Maji)। কেননা বৃহস্পতিবার রাতে তাঁকে ধাক্কা দিয়েছে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার।
কলকাতা হাইকোর্ট(Calcutta High Court) নির্দেশ দিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ মেডিকেল কাউন্সিলের(West Bengal Medical Council) অস্থায়ীভাবে পরিচালনার জন্য অ্যাড হক কমিটি গঠন করতে হবে। সেই নির্দেশ মেনেই বৃহস্পতিবার রাতে রাজ্য সরকার এই অ্যাড হক কমিটিএ নাম সামনে আনে। সেখানে সভাপতি করা হয়েছে হুগলি জেলার শ্রীরামপুর বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক তথা চিকিৎসক সুদীপ্ত রায়কে। সেই সঙ্গে কমিটিতে সদস্য হিসাবে ঠাঁই পেয়েছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা (শিক্ষা) দেবাশিস ভট্টাচার্য, গোপালকৃষ্ণ ঢালি, অভীক দে, সুমন মুখোপাধ্যায়, দীপাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, তাপস ঘোষ এবং চিকিৎসক দীপাঞ্জন হালদার। বিদায়ী কমিটিতে সভাপতি ছিলেন নির্মল মাজি। অনেকেই ভেবেছিলেন এবারেও হয়তো তাঁকে মাথায় রেখেই কমিটি তৈরি হবে। কিন্তু কমিটির নাম সামনে আসার পর দেখা গেল তাঁর নাম চেয়ারপদে থাকা তো দূর, সাধারন সদস্য হিসাবেও কমিটিতে তাঁর নাম রাখা হয়নি। আর এই ঘটনাই কার্যত নির্মলবাবুর কাছে বড় ধাক্কা। কলকাতা মেডিকেল কলেজের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদ থেকে আগেই সরানো হয়েছিল নির্মলকে। এবার সরানো হল পশ্চিমবঙ্গ মেডিকেল কাউন্সিল থেকেও। আর ছবিটাই কিন্তু বলে দিচ্ছে হয়তো পার্থ’র পরে এবার নির্মলও ক্লোজড চ্যাপ্টার হতে চলেছেন তৃণমূলে। অন্তত জোড়ফুল সূত্রে তেমন ইঙ্গিতই মিলেছে।
রাজ্য সরকারকে অ্যাড হক কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। সেই নির্দেশিকায় সাফ বলা হয়েছিল, ১ অগাস্ট থেকে নতুন কমিটি পশ্চিমবঙ্গ মেডিকেল কাউন্সিলের দায়িত্ব নেবে। সেই কমিটির তত্ত্বাবধানেই হবে নির্বাচন। অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করতে হবে। এরপর নভেম্বর থেকে সেই কাউন্সিলের দায়িত্ব নেবে নতুন কমিটি। আর যতক্ষণ না পর্যন্ত সেই নির্বাচন সম্পন্ন হচ্ছে ততক্ষণ পশ্চিমবঙ্গ মেডিকেল কাউন্সিল পরিচালনা করবে অ্যাড হক কমিটি। তাই ১ আগস্টের আগেই রাজ্য সরকারকে সেই কমিটির নাম সামনে আনতে হত। তাৎপর্যপূর্ণ হল এটাই যে, যেদিন পার্থকে দল থেকে সাসপেন্ড করা হল, তাঁর সব দলীয় পদ কেড়ে নেওয়া হল, তাঁকে রাজ্যের মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেওয়া হল, সেদিনই নির্মলকে বাদ রেখেই পশ্চিমবঙ্গ মেডিকেল কাউন্সিলের অ্যাড হক কমিটির নাম ঘোষণা করে দেওয়া হল। অনেকেই বলছেন, ‘সামঝনে বালো কে লিয়ে ইশারা হি কাফি হ্যায়’। এটাও ঘটনা পার্থ’র মতোই নির্মলও কিন্তু এখন শুধুই বিধায়ক। সেখানেও দাঁড়ি টেনে দিতে পারে তৃণমূল যে কোনওদিন, যদি না নির্মল নিজে শুধরে যান।