নিজস্ব প্রতিনিধি: খালি চোখে রাজ্য বিধানসভার(West Bengal State Assembly) শীতকালীন অধিবেশনে মুখ্যমন্ত্রী ও বিরোধী দলনেতার সৌজন্য সাক্ষাৎ। কিন্তু রাজনীতির জল কী এতটা সোজা খাতেই বয়ে চলে যে খালি চোখেই তা ধরা পড়ে যাবে। তাই প্রশ্ন শুধু যে উঠছে তাই নয়, ছড়িয়ে পড়েছে তীব্র উৎকণ্ঠাও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) ডাকে সাড়া দিয়ে রাজ্য বিধানসভা ভবনে কার্যত সৌজন্যের ছবি। মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী(Suvendu Adhikari)। সঙ্গে আরও দুই বিজেপি নেতানেত্রী, মনোজ টিগ্গা ও অগ্নিমিত্রা পাল। আপাতত শুধুই চা-পান। ৩৪ বছরের গদি হারিয়ে বামেরাও এসেছিলেন নবান্নে মমতার কাছে। খেয়ে গিয়েছিলেন চা আর ফিশফ্রাই। বিজেপির(BJP) নেতারা এলেন রাজ্য বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে এমন একটা সময়ে যখন তৃণমূলের(TMC) সঙ্গে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন মোদি সরকারের সম্পর্ক ভিন্ন খাতে বইতে শুরু করে দিয়েছে। একের পর এক প্রকল্পের বকেয়া টাকা বাংলায় পাঠাচ্ছে কেন্দ্র। সৌজন্যের চা-চক্র কী শুধুই সেখানে বাড়তি উষ্ণতা, নাকি বঙ্গ রাজনীতি বহিতে চলিছে ভিন্ন খাতে। তবে বঙ্গ বিজেপিতে আপাতত শুধুই তীব্র উতকন্ঠা! শুভেন্দুর ঘর ওয়াপসি হচ্ছে নাকি? প্রশ্ন ঘুরছে সেখানে মুখে মুখে।
আরও পড়ুন মমতার রূপশ্রীর দৌলতে বিয়ের পিঁড়িতে মূক-বধির তরুণী
শুভেন্দু চিরকালীন দক্ষিণপন্থী নেতা। প্রথমদিকে কংগ্রেস, তারপর তৃণমূল, এবং এখন বিজেপিতে। মমতাও দক্ষিণপন্থী। প্রথমে কংগ্রেস, পরে তৃণমূল। কিন্তু দেশের অনেক রাজনীতিবিদ থেকে বিশারদরা মনে করেন মমতা বামেদের অপেক্ষা অনেক বেশি বামপন্থী। সেই মমতার ছত্রছায়ায় থেকেই রাজ্য রাজনীতিতে শুভেন্দুর উত্থান। নন্দীগ্রামের গণআন্দোলন সেই উত্থানপর্বকে আরও চাকচিক্য এনে দিয়েছে। অথচ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্থান তৃণমূলের রাজনীতিতে অনেকটাই বদল ঘটিয়ে দেয়। অনেকেই মনে করেন অভিষেকের উত্থান না হলে মমতার পরে তৃণমূলের রাশ চলে যেত শুভেন্দুর হাতেই। দলের অনেক নেতাকর্মী থেকে সমর্থক মমতার পরে তৃণমূলে শুভেন্দুকেই দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রাজনীতির স্রোত সেই পথে বয়ে যায়নি। অভিষেকই এখন তৃণমূলের বর্তমান ও ভবিষ্যত। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে শুভেন্দুর তৃণমূল ত্যাগ ও বিজেপিতে যোগদান অনেকের চোখেই দৃষ্টিকটু লাগলেও সেটা চুড়ান্ত বাস্তব। শুভেন্দুর কাঁধে ভর দিয়েই গেরুয়া শিবির এখন বঙ্গ দখলের পরিকল্পনা করছে। নরেন্দ্র মোদি হোক কী অমিত শাহ, দুইজনই অন্তত তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। আবার শুভেন্দুও মন দিয়ে বিজেপির হয়ে কাজ করে চলার পাশাপাশি একনাগাড়ে কখনও কখনও শালীনতার সীমা ছাড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী, অভিষেক, তৃণমূল, মুখ্যমন্ত্রী ও অভিষেকের পরিবারের অনান্য সদস্যদের আক্রমণ করে চলেছেন। কথায় কথায় গদি ওল্টানোর, কেন্দ্রীয় এজেন্সীর মাধ্যমে গ্রেফতারির হুমকি ধমকি দিচ্ছেন। তারই মাঝে হুট করে মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে চা-চক্রে যোগ প্রশ্ন তো তুলে দেবেই।
আরও পড়ুন আর নয় রাম-বাম জোট, কড়া বার্তা আলিমুদ্দিনের
প্রশ্ন হঠাৎ এই সৌজন্য কেন? শুভেন্দু কী নিজে থেকেই সেই ডাকে সাড়া দিয়েছেন, নাকি সেই ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফ থেকে নির্দেশ এসেছে। রাজনীতির কারবারিদের দাবি, দুটোই সম্ভব। ২০২৪ এর কথা মাথায় রেখে মোদি নিজে চান মমতা ও তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে তুলতে। তাই উগ্র মমতা বিরোধিতার পথে বঙ্গ বিজেপিকে চালাতে চান না তিনি। সেই সূত্রেই মমতার সৌজন্য ডাকে শুভেন্দুকে সাড়া দেওয়ার নির্দেশ এসেছে বঙ্গ বিজেপি সূত্রে। এর পাশাপাশি আরও একটা প্রশ্ন উঠে এসেছে। শুভেন্দু বিজেপিতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত পাচ্ছেনটা কী? প্রাপ্তি বলতে রাজ্যের বিরোধী দলনেতার পদ। সঙ্ঘ তাঁকে বঙ্গ বিজেপির সভাপতি পদে বসাতে নারাজ। কেন্দ্রের মন্ত্রীত্বও জোটেনি। এমনকি অদূর ভবিষ্যতে শুভেন্দুকে নারদকাণ্ডে সিবিআইয়ের মুখোমুখি হতে দেখলেও খুব একটা অবাক হওয়ার ব্যাপার থাকবে না। তাই ঘর ওয়াপ্সি ঘটতেই পারে। কে না জানে রাজনীতিতে অসম্ভব বলে কিছুই নেই।