নিজস্ব প্রতিনিধি: দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী কে? জওহরলাল নেহেরু নাকি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু? এই প্রশ্ন উঠে আসার মূলে রয়েছে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা এবং সাম্প্রতিককালে বাংলার শিক্ষামন্ত্রীর একটি মন্তব্য। সোমবারই ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নাম বাংলার পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছেন বাংলার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। বলেছেন, ‘১৯৪৩ সালে নেতাজি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে শপথ নেন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে। মাথায় রাখতে হবে, সেই সময় অখণ্ড ভারতবর্ষ ছিল। পরাধীন অখণ্ড ভারতবর্ষ। উপনিবেশকালে এটি তিনি করেছিলেন। নিজের ক্যাবিনেট গঠন করেছিলেন। এটি সিলেবাসে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও রাজনৈতিক বা সময়কালীন কোনও প্রশ্ন আছে কি না, সেটা আমরা সিলেবাস কমিটিকে বিবেচনা করতে বলব।’ সেই ঘোষণার পরে পরেই মঙ্গলবার রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’-তে সম্পাদকীয় বিভাগে কেন্দ্রকে আক্রমণ করে লেখা হল, নেতাজি-রহস্য উদঘাটনে উদ্যোগী নয় মোদী সরকার। ‘কেঁচো খুঁড়তে কেউটে ’বেরোনোর ভয়েই নেতাজি রহস্যভেদে আগ্রহ নেই দিল্লির।
মঙ্গলবার ‘জাগো বাংলা’র সম্পাদকীয় বিভাগে ‘কেঁচো খুঁড়তে কেউটে’ শীর্ষক সম্পাদকীয় কলমে লেখা হয়েছে, ‘বাংলার আবেগের সঙ্গে নেতাজি জড়িয়ে রয়েছেন। আর নেতাজিকে যথাযথ ভাবে সম্মান জানানোর প্রশ্নে বাংলার সঙ্গে লড়াই করার প্রশ্ন নেই। কেন্দ্রের নেতাজি প্রেম আসলে রাজনৈতিক, আর বাংলার আবেগের। শুধু এলগিন রোড বা কলকাতা পুরনিগমে নেতাজির স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে ভাবলে ভুল হবে। নেতাজি রয়েছেন বাঙালির ভাবাবেগে, বাঙালির ভাবাদর্শে। নেতাজি বর্তমান রাজ্য সরকারের পথপ্রদর্শকও। সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। অনেকেই এই তথ্য জানতেন না। শিক্ষা মহলের দাবি আগামী প্রজন্মের এই তথ্য জানা দরকার। তাই প্রধানমন্ত্রী সুভাষচন্দ্র বসুর অসমসাহসী দিনগুলির কথা পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। শিক্ষামন্ত্রীর স্পষ্ট বক্তব্য, নেতাজিকে শ্রদ্ধা জানানো মানে শুধুই মূর্তি স্থাপন নয়। আসলে শ্রদ্ধা জানানো তখনই হবে যখন নেতাজির কাজ ও ভাবাদর্শের বাস্তবায়ন হবে। সেই শুরুর ঝড়টা তুলে দিয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’
এরপরেই ওই সম্পাদকীয় স্তম্ভে লেখা হয়েছে, ‘কোনও কেন্দ্রীয় সরকারই নেতাজি রহস্য সমাধানে কড়া পদক্ষেপ নেয়নি। আর পাঁচটা তদন্ত কমিশনের মতোই তিন তিনটে কমিশন গড়া হয়েছে। আর রিপোর্ট হিমঘরে পচেছে। গুরুত্বপূর্ণ ফাইল প্রকাশ হলে নাকি বিদেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাবে। কেন্দ্রীয় সরকার আহম্মক হতে পারে, ভারতবর্ষের মানুষ নন। প্রায় আশি বছর আগের ঘটনার পর পৃথিবীর মানচিত্রটাই বদলে গিয়েছে। অনেক গবেষকই বলছেন, কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরোনোর ভয়।’ সন্দেহ নেই তৃণমূলের এদিনের এই দাবি শুধু যে মোদি সরকারকে আক্রমণ তাই নয়, আক্রমণ কংগ্রেসকেও। কার্যত মোদি ও বিজেপি অপেক্ষা কংগ্রেসই কিন্তু নেতাজি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ফাইল দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিল। তাই মনে করা হচ্ছে তৃণমূল সর্বভারতীয় রাজনীতিতে যে বিস্তার ঘটানোর পথে পা বাড়িয়েছে তার মূল বাধা কংগ্রেসের উপস্থিতি যারা এখন বেশ কিছু ক্ষেত্রে বিজেপিকে জমি ছেড়ে দিচ্ছে। সেই কংগ্রেসকে ধাক্কা দিতে তৃণমূল যে এবার নেতাজি ইস্যুকে হাতিয়ার করতে চলেছে সেটা এদিনের সম্পাদকীয়তেই স্পষ্ট।