নিজস্ব প্রতিনিধি: দিন যত গড়াচ্ছে ততই যেন আরও বেশি করে বিদ্রোহী হচ্ছেন ব্যারাকপুরের(Barrackpore) বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং(Arjun Singh)। তাঁর সেই বিদ্রোহ বিজেপির(BJP) বিরুদ্ধেই। অনেকেই অনুমান করছেন তিনি হয়তো তৃণমূলে(TMC) ফিরতে চলেছেন। সেটা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র। কিন্তু সেই তৃণমূলের দিক থেকেই অর্জুনকে বেশ কড়া বার্তা দিয়ে দিলেন অর্জুনেরই সংসদীয় এলাকায় থাকা জগদ্দলের তৃণমূল বিধায়ক শমিনাথ শ্যাম। এদিন তিনি সাফ জানিয়েছেন, ‘তৃণমূল কোনও ধর্মশালা নয় যে যখন খুশি এলাম আর যখন খুশি বেড়িয়ে গেলাম। অর্জুন আসতেই পারে। কিন্তু চোখ নামিয়ে মাথা নীচু করে ফিরতে হবে। আর তার জন্য আবেদনও করতে হবে। আগে আবেদন করুক তারপর দেখা যাবে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বই এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।’ পাশাপাশি অর্জুনকে মুখ খুলেছেন রাজ্যের মন্ত্রী তাপস রায়ও(Tapas Roy)।
সোমবার দিল্লিতে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার সঙ্গে বৈঠক রয়েছে অর্জুনের। ঠিক তার আগেরদিন কার্যত বিস্ফোরক হয়েছেন অর্জুন। দলের বিরুদ্ধে উগরে দিয়েছেন যাবতীয় ক্ষোভ। বলেছেন, ‘বিজেপিতে যাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাঁদের অনেকেই কাজের না। সংগঠনের দায়িত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে কে কতটা শিক্ষিত তা দেখে লাভ নেই। কী স্ট্র্যাটেজি রয়েছে তার, সেটাই দেখতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়াতে রাজনীতি করে বড়ো নেতা হতে চায় বঙ্গ বিজেপির অনেকে। কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপ আর ফেসবুকে রাজনীতি করে এখানে সংগঠন করা যাবে না। বাংলায় রাজনীতি করতে হলে তৃণমূলস্তরে নেমে রাজনীতি করতে হবে। এখানে নিজের গ্রুপ বানানোর চেষ্টা হচ্ছে। দল বড় হলে গোষ্ঠাদ্বন্দ্ব থাকে। বিজেপিতেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আছে। কিন্তু অন্যদলে গোষ্ঠীকোন্দল থাকলেও তারা ভোটের সময় এক হয়ে যায়। আমাদের এখানে সব সময় দেখায় এক, কিন্তু ভোটের সময় আলাদা হয়ে যায়। ভোটের সময় অনেকে ভোট দিতেই যায় না। গেলেও বেইমানি করে। বুথস্তরেও বিজেপির সংগঠনে জল মেশানো।’
পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, ‘একটা সংগঠনই দলকে ক্ষমতায় নিয়ে আসে। বিজেপিতে যাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁরা বেশিরভাগই অযোগ্য। বিহার ও উত্তরপ্রদেশের রাজনীতি সম্পূর্ণ আলাদা। কোথাও জাত নিয়ে রাজনীতি হয়। আবার কোথাও ভোটের পরের দিন কেউ কাউকে পেটায় না। তবে এটা বাংলাতে বরাবরই ছিল। আসলে বাংলার রাজনীতি পুরোটাই আলাদা। মন্দিরে ভালো পণ্ডিতকে বসানো উচিত। কিন্তু, রাজনীতিতে কে কতটা পড়াশোনা জানেন তার কোনও প্রয়োজন নেই। আসলে তিনি কতটা ভালো স্ট্র্যাটেজি জানেন সেটাই সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। না হলে কখনও সাফল্য আসবে না। রাজ্যে দলের দায়িত্বে এমন কিছু মানুষ রয়েছেন, যাদের কোনও সাংগঠনিক ক্ষমতা নেই। তাঁরা অনেকেই কাজের নন। বরং সেই সমস্ত ব্যক্তিরা দলের ভিতরে থেকে ক্ষতি করছেন। দলের কর্মঠ কর্মীদের কাজে লাগানো হচ্ছে না। সঠিক লোককে সঠিক দায়িত্ব না দিলে, এ রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আসবে না। তৃণমূল ছেড়ে আসার জন্য এখনও পর্যন্ত আমাদের অনেক ক্ষেত্রেই বিশ্বাস করে না দল। ধরুন আমাকে চেয়ার ও কলম দেওয়া হল, কিন্তু সেই কলমে কালি নেই। তাহলে চেয়ার আর কলম দিয়ে লাভ কি আছে? শুধু চেয়ারে বসলেই তো আর হয় না। আমাদের হাল ওই, ঢাল নেই তরোয়াল নেই নিধিরাম সর্দারের মতো।’
অর্জুনের এই ক্ষোভের প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন রাজ্যের মন্ত্রী তাপস রায়। তিনিন জানিয়েছেন, ‘বিজেপি এখন শাখা প্রশাখায় বিভক্ত। নব্য বিজেপি, আদি বিজেপি, তৎকাল বিজেপি, পরিযায়ী বিজেপি ইত্যাদি ইত্যাদি। এত শত কিছু বুঝি না বোঝার দরকারও আছে বলে আমার মনে হয় না। আবকে বার ২০০ পার বলে যারা বাংলা দখল করতে এসেছিল তাঁরা নিজেরাই এখন একে অপরের বিরুদ্ধে লড়ছে। রাজনীতি করতে গেলে সবার আগে মানুষের পাশে থাকতে হয়। তাঁদের সুখে দুঃখের সঙ্গী হতে হয়। শুধু জয় শ্রীরাম শ্লোগান দিলে হয় না। তৃণমূল থেকে যেই যাক না কেন রাতারাতি আদি কর্মীদের ঘাড়ে, মাথায়, মাচায় কাউকে চাপিয়ে দিলে ক্ষোভ তো একতা হবেই। অর্জুনকে নিয়ে সেই ক্ষোভই এখন মাথাচাড়া দিয়েছে। উনি কী করবেন সেটা উনিই জানেন, বাকিটা দলের বিষয়।’