নিজস্ব প্রতিনিধি: দেশজুড়ে ঝড় তোলা ‘অগ্নিপথ’(Agnipath) প্রকল্প নিয়ে এবার দেশের রাজধানীর বুকে ঝড় তোলার সিদ্ধান্ত নিল বাংলার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস(TMC)। আর সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষীতে। কার্যত মমতাই নির্দেশ দিয়েছেন দলের সাংসদদের ‘অগ্নিপথ’ ইস্যুতে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন মোদি সরকারকে চেপে ধরতে। তৃণমূল যে ইস্যুতে মোদি সরকারকে চেপে ধরবে সেটা ইতিমধ্যেই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংকে(Rajnath Singh) তৃণমূলের তরফে জানিয়ে দেওয়াও হয়েছে। ঠিক হয়েছে, তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়(Sudip Banerjee) রাজনাথের সঙ্গে দেখা করবেন। অগ্নিপথ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে কী কী সমস্যা হতে পারে সেই বিষয়ে রাজনাথকে অবহিত করবেন তিনি। কিন্তু তারপরেও যদি কেন্দ্র সরকার এই প্রকল্প থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে তৃণমূল দিল্লিতে(New Delhi) এই প্রকল্পের ক্ষেত্রে তীব্র বিরোধীতা শুরু করবে। আগামী ৮ জুলাই রাজনাথের সঙ্গে দেখা করবে তৃণমূলের প্রতিনিধিদল।
মোদি সরকারের ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পকে ঘিরে কয়েকদিন আগেই দেশের ১০-১২টি রাজ্য রীতিমত উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। কার্যত আগুন লেগেছিল বিহার, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, তেলেঙ্গানার মতো রাজ্যগুলিতে। যুবসামাজের বিক্ষোভ দাবানলের মতো হিংসাত্মক আকার নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল একের পর এক রাজ্যে। তবুও সেই বিক্ষোভের মধ্যেই কেন্দ্র সরকার ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু তারপরেও ক্ষোভের আগুন এখনও ধিকিধিকি জ্বলছে। এই পরিস্থিতিতে আগামী ৮ জুলাই বৈঠক ডেকেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের উপদেষ্টা কমিটি। সেই বৈঠকে থাকবেন রাজনাথ সিং। সেই বৈঠকে যোগ দিতে দিল্লি যাচ্ছেন তৃণমূল সংসদীয় দলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পের বিষয়ে তৃণমূলের আপত্তির বিষয়টি রাজনাথকে জানাবেন সুদীপ।
তবে শুধু দেশের রাজনৈতিক দলগুলি নয়, ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প নিয়ে দেশের সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত অনেক আধিকারিকই আপত্তি তুলেছেন। তাঁরা মূলত বেশ কিছু প্রশ্ন তুলেছেন ও এই প্রকল্পের ক্ষেত্রে আগামী দিনে যে সব সমস্যা মাথাচাড়া দিতে পারে সেই সব বিষয়গুলি তুলে ধরেছেন। তার মধ্যে অন্যতম হল কর্মসংস্থানগত সমস্যা। চার বছর পর এতগুলি তরুণ কী করবেন? কোথায় যাবেন? পেনশন তহবিলের আর্থিক বোঝা এড়াতে এই বিকল্প পথে দেশের সমাজে হিতে বিপরীত হবে না তো? এই প্রশ্ন কিন্তু তাঁরা সবার আগে তুলে ধরছেন। দ্বিতীয়ত এই প্রকল্পে যোগদানকারীদের প্রশিক্ষণগত সমস্যার মুখে পড়তে হতে পারে। কেননা দেশের সেনাবাহিনীতে একজন জওয়ানের দু’বছরেও সম্পূর্ণ প্রশিক্ষণ অহয় না সেখানে এইন প্রকল্পে যোগদানকারীরা কীভাবে ৪ মাসের মধ্যে প্রশিক্ষিত হয়ে উঠবেন? একজন সেনা জওয়ানকে সঠিকভাবে তৈরি করতে যে সময় লাগে, যতদিনে তাকে আধুনিক অস্ত্র ধরার উপযোগী করা হয়, তা এ ক্ষেত্রে মিলবে না। সেনাবাহিনীর চাকরিতে প্রশিক্ষণ থেকে কর্মজীবন, একটি নির্দিষ্ট মানসিকতার মধ্যে দিয়ে কাজ করতে হয়। ঝুঁকি নিয়ে লড়াই করতে হয়, আক্রমণের কৌশল শিখতে হয়, পরস্পরকে বাঁচাতে জান কবুল করতে হয়, এসবের কিছুই ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পে যোগদানকারীরা পাবেন না। ফলে তাঁদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর মূল জওয়ানদের একটা ফারাক থেকে যাবে যা সেনাবাহিনীর ঐক্যের প্রশ্নে বিপদ ডেকে আনতে পারে। যদিও দেশের বর্তমান সেনা প্রধানরা এই সব বিষয়কে সমস্যা বলে মানতেই চাইছেন না।