-273ºc,
Sunday, 4th June, 2023 10:29 am
নিজস্ব প্রতিনিধি: বাম জমানায় তাঁর দাপটে বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খেত। এলাকায় বিরোধিতার ‘ব’টাও থাকত না। খুন হয়ে যেতেন বিরোধী তৃণমূলের(TMC) নেতা থেকে কর্মীরা। বাদ পড়তেন না সেই দলের সমর্থকেরাও। গণহত্যা(Mass Killing) আর গণধর্ষণ ছিল বিরোধীদের জন্য বরাদ্দ। নিখোঁজ তৃণমূলকর্মীদের দেহ খুঁজেও পাওয়া যেত না। বাম জমানার অবসানের পরে সামনে আসে একের পর এক নিখোঁজ তৃণমূলকর্মী আর নেতাদের কঙ্কাল উদ্ধারের ঘটনা। আর সেই ঘটনার মাথা ছিলেন তিনি, মানে সুশান্ত ঘোষ(Sushanta Ghosh)। জেলে গিয়েও প্রমাণের অভাবে ছাড়া পেয়েছেন। কিন্তু তিনি যে গড়বেতা(Garbeta) সহ পশ্চিম মেদিনীপুর(Paschim Midnapur) জেলার কতবড় মূর্তিমান ত্রাস সেটা মানুষ মাত্রই জানেন। সেই সুশান্তের পরিবারেরই ২০জন সরকারি চাকরি(Government Service) পাওয়ার ঘটনা এবার সামনে চলে এল।
আরও পড়ুন ৭১ হাজারের বেশি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে LPG সংযোগ দিচ্ছেন মমতা
বাম আমলে ‘চিরকুটে’ চাকরি পাওয়া নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে রাজ্য রাজনীতি। অভিযোগ, নিজের পরিবার ও আত্মীয়দের অনেককেই স্রেফ ‘সুপারিশে’র জোরে চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন বাম নেতারা। সেই তালিকায় উঠে এসেছে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষের নামও। চাকরি প্রাপকদের একটি তালিকাও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই তালিকায় সুশান্ত ঘোষের এমন ২০জন নিকট আত্মীয়ের নাম রয়েছে, যাঁরা বিভিন্ন সরকারি দফতরে চাকরি করেন বা করতেন বলে দাবি করা হয়েছে। এপ্রসঙ্গে তৃণমূলের জেলা কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতি জানিয়েছেন, ‘এতদিন চুপ ছিলাম। কিন্তু সিপিএম নেতারা ইদানীং বড্ড লাফালাফি করছে। লাল পতাকার তলায় লুকিয়ে সিপিএম যে কত দুর্নীতি করেছে, তা বোধহয় দলের নেতারা ভুলে গিয়েছেন। আমি শিক্ষামন্ত্রীকে ঘটনার সঠিক তদন্তের জন্য আবেদন জানাব। কীভাবে চাকরি হয়েছে, তা জনগণের জানা প্রয়োজন।’
আরও পড়ুন বাজারে চালু নোটের মাত্র ১২ শতাংশ ২ হাজার টাকার
সিপিএমের(CPI-M) দাপুটে নেতা সুশান্ত ঘোষ বাম জামানায় দীর্ঘদিনের মন্ত্রী ছিলেন। বিরোধীরা বলতেন, ঝড় হলেও সুশান্ত ঘোষের নির্দেশ ছাড়া গড়বেতায় গাছের পাতা নড়ে না! এতটাই ছিল তাঁর প্রভাব। সেই সুশান্ত ঘোষ বাম আমলে ক্ষমতা ও প্রভাব খাটিয়ে নিকটাত্মীয়দের চাকরি পাইয়ে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করছে তৃণমূল। ভাইরাল হওয়া ওই তালিকায় দাবি করা হয়েছে, বাম জমানায় স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পেয়েছিলেন সুশান্ত ঘোষের স্ত্রী। সুশান্তবাবুর বোনেদের মধ্যে অনেকেই সরকারি চাকরি করতেন। কেউ স্কুলে শিক্ষকতা করেন, কেউ আইসিডিএস-এ সুপারভাইজার। শুধু তাই নয়, প্রভাব খাটিয়ে বোনেদের স্বামীদেরও চাকরি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, এক বোনের স্বামী মেদিনীপুর প্রাইমারি বোর্ডে চাকরি করেন। আর এক বোনের স্বামী প্রাইমারি স্কুলে এবং এক ভগ্নিপতি সেচদপ্তরে চাকরি করেন। এছাড়াও সুশান্ত ঘোষের মামার বাড়ির পরিবারে একাধিকজন সরকারি চাকরি করেন। এক ভাগ্নে হাইস্কুলের লাইব্রেরিয়ান, আর এক ভাগ্নে সেচদফতরে চাকরি করেন। সুশান্তবাবুর পিসতুতো ভাই, মাসতুতো ভাইয়েদেরও কেউ পরিবহণ দফতরে, কেউ স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি করেন।
আরও পড়ুন পঞ্চায়েতের কাজে নজরদারির জন্য হাজির PMIS Software
এখানেই শেষ নয়, সুশান্ত ঘোষের শ্যালক, শ্যালিকাদের প্রায় প্রত্যেকেই সরকারি চাকরির সঙ্গে যুক্ত। এমনকী শ্যালিকার স্বামীর ভাইয়েরা পর্যন্ত সরকারি চাকরি করেন। সুশান্তবাবুর বড় শ্যালক অরবিন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় আবার জেলা কমিটির সদস্য ছিলেন। ওই তালিকায় দাবি করা হয়েছে, তত্কালীন জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের অপত্য স্নেহে এইসব কাজের পাশাপাশি ২০০৮, ২০০৯ এবং ২০১০ সালে প্রাইমারিতে লক্ষ লক্ষ টাকায় চাকরি বিক্রি করেছেন সুশান্তবাবু। তালিকার তথ্যকে সমর্থন জানিয়ে তৃণমূলের গড়বেতার ব্লক সভাপতি সেবাব্রত ঘোষ জানিয়েছেন, ‘গড়বেতা একটি দুধের শিশুও এইসব ইতিহাস জানে। মন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর সুপারিশে কেউ ফায়ার ব্রিগেড, কেউ এসবিএসটিসি, কেউ আবার কলেজে চাকরি পেয়েছেন।’