নিজস্ব প্রতিনিধি: অপয়া বাড়িতে আর রণনীতি তৈরি করতে চাইছে না বিজেপি। এমনকি সেই বাড়ির ছায়াও আর তাঁরা মাড়াতে চাইছেন না। তাই লটবহর নিয়ে তলিতল্পা গুটিয়ে বঙ্গ বিজেপি ফিরে আসছে তাঁদের চিরাচরিত ঠিকানায়। মানে একুশের বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে কলকাতার হেস্টিংসে যে ‘আগরওয়াল হাউস’-এ বঙ্গ বিজেপির নির্বাচনী কার্যালয় তথা ‘ওয়ার রুম’ গড়ে উঠেছিল, সেই বহুতল ছেড়ে বঙ্গ বিজেপির ‘ওয়ার রুম’ ফিরে আসছে মুরলীধর সেন লেনে থাকা দলের রাজ্য কার্যালয়ে। এই কার্যালয় শুধু দীর্ঘদিনের পুরাতন তাই নয়, রীতিমত শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিবিজড়িত ভবন। সেখানেই ফিরে আসছে বিজেপির ‘ওয়ার রুম’।
কিন্তু হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত কেন? রাজ্য বিজেপির অন্দরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, হেস্টিংসের আগরওয়াল হাউসের বৈভব যত বেশিই হোক না কেন, সেই বাড়ি যত খোলামেলাই হোক না কেন, ওই বাড়িটি বঙ্গ বিজেপির নেতাদের কাছে এখন রীতিমত অপেয়া হয়ে গিয়েছে। সেই তুলনায় মুরলিধর সেন লেনের বাড়ি এখনও বঙ্গ বিজেপির কাছে অনেক পয়া। এই বাড়ি থেকেই বাংলার রাজনীতিতে একের পর এক রাজনৈতিক সাফল্যের মুখ দেখেছে বঙ্গ বিজেপি। তা সে অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলের সাফল্য হোক কী হালের মোদি জমানার ১৮জন সাংসদ জয়ের নিদর্শন হোক। কিন্তু একুশে বিধানসভা নির্বাচনের আগে ঢাকঢোল পিটিয়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করে হেস্টিংসের ‘আগরওয়াল হাউস’-এ দলের ‘ওয়ার রুম’ খোলা হলেও এই নির্বাচনেই দলকে মুখ থুবড়ে পড়তে হয়েছে। ‘আবকে বার ২০০ পার’ শ্লোগান তুলে মাত্র ৭৭ আসন পেয়েই দলকে থেমে যেতে হয়েছে। এরপর থেকে বিজেপির কোনও নেতাই ওই বাড়িতে যেতে চাইছেন না। তাই বিজেপি ওই বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তবে এর পাশাপাশি আরও একটি মত শোনা যাচ্ছে। বাংলা জয়ের জন্য বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যে কোটি কোটি টাকা জলের মতো যুগিয়ে গিয়েছিলেন সেই টাকার স্রোতই বন্ধ হয়ে গিয়েছে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে গোহারা হারের পরে। স্বাভাবিক ভাবেই এখন ‘আগরওয়াল হাউস’ এর ভাড়া যোগানো ক্টহিন হ্যে পড়েছে বঙ্গ বিজেপির কাছে। তাই ধীরে ধীরে ওই বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া মাস ৩-৪ আগেই শুরু হয়ে গিয়েছিল। এবার পাকাপাকি ভাবে বঙ্গ বিজেপির ‘ওয়ার রুম’ ফের মুরলিধর সেন লেনে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। এখান থেকেই এবারের পুরনির্বাচনের লড়াই লড়বে বিজেপি। তবে চ্যালেঞ্জ এখানেও কিছু কম নেই। একে তো খুবই ছোট বাড়ি। তারওপর রয়েছে ইঁদুরের উপদ্রব। ইঁদুরের দৌরাত্ম্যে সেখানে কার্যত নিত্যদিন নাস্তানাবুদ হচ্ছেন বিজেপির নেতারা। ইঁদুরের দৌরাত্ম্যে গোটা কার্যালয়ের অবস্থা দফারফা হচ্ছে নিত্যদিন। দলের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র বাঁচানো রীতিমতো দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে সকলের কাছে। এখন দেখার বিষয় এই ইঁদুরের সঙ্গে লড়াই করে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব কীভাবে তাঁদের ‘ওয়ার রুম’ সামলাতে পারে এই শতাধিক বছরের পুরাতন ভবন থেকে।