নিজস্ব প্রতিনিধি: ধাক্কার পর ধাক্কা। প্রথমে চাকরি গেল, এবার জালিয়াতি মামলার মুখে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিল। নজরে ববিতা সরকার(Babita Sarkar), যিনি একসময় কার্যত বাংলা বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিলেন মন্ত্রীকন্যার চাকরি মামলা করে কেড়ে নেওয়ার মধ্যে দিয়ে। যিনি এক সময় দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মুখ হয়ে উঠেছিলেন তিনিই এবার পড়তে চলেছেন জালিয়াতির মামলার মুখে। সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ(WBCHSE) তার বিরুদ্ধে আদালতে জালিয়াতির মামলা করতে চলেছে। আর সেই মামলার করার অন্যতম হাতিয়ার হতে চলেছে এদিন অর্থাৎ মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের(Calcutta High Court) বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যে রায় দিয়েছেন সেই রায়েরই অংশ বিশেষ।
আরও পড়ুন এগরার বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ, মৃত ৩
রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পরেশচন্দ্র অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীর(Ankita Adhikari) চাকরি পাওয়া নিয়ে অভিযোগ তুলে আদালতে মামলা দায়ের করেছিলেন ববিতা। সেই মামলায় জয় পেয়ে কার্যত রাজ্যে রীতিমত বিখ্যাত হয়ে যান ববিতা। আদালতের রায়ে ববিতা পেয়ে যান অঙ্কিতার চাকরিও। সেই সঙ্গে আদালতের নির্দেশ ছিল অঙ্কিতা চাকরি করা অবস্থায় যে বেতন পেয়েছিলেন তার পুরোটাই তুলে দিতে হবে ববিতার হাতে। সেই বেতনের মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা। আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পরে অঙ্কিতা ২ দফায় সেই টাকা ববিতাকে দিয়েও দেন। ববিতা চাকরিতেও যোগ দেন। কিন্তু তারপরে পরেই ববিতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন চাকরির আরেক দাবিদার অনামিকা রায়(Anamika Roy)। তাঁর দাবি ছিল, School Service Commission বা SSC’র কাছে আবেদন করার সময় ববিতা স্নাতক স্তরের শতকরা নম্বর বাড়িয়ে দেখিয়েছেন। যার ফলে তাঁর ‘অ্যাকাডেমিক স্কোর’ বেড়ে গিয়েছে। অনামিকার অভিযোগ ছিল, স্নাতক স্তরে ৮০০ নম্বরের মধ্যে ৪৪০ নম্বর পেয়েছিলেন ববিতা। অর্থাৎ, শতকরা হিসাবে ৫৫ শতাংশ। অথচ, স্নাতক স্তরের প্রাপ্ত নম্বরের শতকরা হিসাব ৬০ শতাংশ বা তার বেশি উল্লেখ করা হয়েছে তার আবেদনপত্রে। অর্থাৎ, ‘ভুল’ সেখানেই! যে কারণে ববিতার ‘অ্যাকাডেমিক স্কোর’ গণনায় ভুল হয়েছে।
আরও পড়ুন One Nation, One Station, কর্ণাটকের ধাক্কায় বদলাচ্ছে নীতি
সেই অভিযোগকে ঘিরে দায়ের হওয়া মামলায় এদিন রায় দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই রায়ে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, ববিতার চাকরি পাবেন অনামিকা। সেই সঙ্গে অঙ্কিতার যে টাকা ববিতা পেয়েছিলেন সেই ১৬ লক্ষ টাকা অনামিকার হাতে তুলে দেবেন ববিতা। তবে ববিতা যে কয়দিন চাকরি করেছেন সেই সময়কার বেতন ফেরত দিতে হবে না। কিন্তু এখন সূত্রে জানা যাচ্ছে, রাজ্যের উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ এই রায়কে হাতিয়ার করেই জালিয়াতির অভিযোগ এনে মামলা করতে চলেছে ববিতার বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে প্রশ্ন যেটা দাঁড়াচ্ছে, যে জালিয়াতি করে চাকরি পেয়েছিল সে কেন তার বেতনের টাকা ফেরত দেবে না? অর্থাৎ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যেমন অঙ্কিতার ক্ষেত্রে নির্দেশ দিয়েছিলেন বেতনের পুরো টাকা ফেরত দিতে হবে সেই একই চাকরির মামলায় তিনি ববিতাকে ছাড় দিলেন কেন? একই ঘটনায় দুইজনের কেন পৃথক পৃথক সাজা? অঙ্কিতাকে যদি বেতনের টাকা ফেরত দিতে হয় তাহলে ববিতা কেন তার বেতনের টাকা ফেরত দেবে না? কার্যত এদিন বিচারপতির রায় নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে আইনজীবী মহলে। ববিতাকে কেন ছাড় দেওয়া হচ্ছে সেই প্রশ্ন তুলে মামলা করতে চলেছে সংসদও, অন্তত সূত্রে তেমনটাই জানা গিয়েছে।