নিজস্ব প্রতিনিধি: তিনি যখন উধাও হয়েছিলেন তখন একবার রাজ্যজুড়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। এখন তিনি আছেন গারদের ওপারে। কিন্তু এবার উধাও হয়ে গেলেন তাঁর স্ত্রী আর ছেলে। তিনি নদিয়া জেলার নাকাশিপাড়া(Nakashipara) বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য(Manik Bhattacharya)। কলকাতার যাদবপুরে মানিকবাবুর ২টি বাড়ি আছে। নাকাশিপাড়াতে আছে ১টি। কিন্তু এই ৩টি বাড়িই আপাতত তালাবন্দ। ৩টি বাড়ির কোনওটিতেই দেখা মেলেনি মানিকবাবুর স্ত্রী ও পুত্রের। আর এখানেই শোরগোল পড়েছে কোথায় গেলেন তাঁরা? কেনই বা গেলেন? আর শোরগোল পড়ার পিছনে অন্যতম কারণ এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট(ED) বা ইডির আধিকারিকেরা তাঁদের হন্যে হয়ে খোঁজ করে চলেছেন। মানিক-পুত্র সৌভিক(Souvik Bhattacharya) তদন্তে অসহযোগিতা করছেন বলে ইতিমধ্যে আদালতে নালিশ করেছেন তদন্তকারী অফিসার। একাধিক বার তলব করা সত্ত্বেও সৌভিক ইডি-র মুখোমুখি হচ্ছেন না বলে তদন্তকারীদের অভিযোগ। তাঁদের বক্তব্য, মানিকের স্ত্রী শতরূপাকেও(Shatarupa Bhattacharya) খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনিও তদন্তে সহযোগিতা করছেন না বলে ইডি-র অভিযোগ।
আরও পড়ুন ভয় পেয়েছে শুভেন্দু, টুইটারে প্রচার শুরু তৃণমূলের
ইডি সূত্রের দাবি, মানিকের ছেলের দু’টি সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের একটিতে ২’কোটি ৬৪ লক্ষ এবং অন্যটিতে ২’কোটি ৪৭ লক্ষ টাকার হদিস পাওয়া গিয়েছে। বেসরকারি বিএড-ডিএলএড কলেজ এবং তাদের সংগঠন অল বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং অ্যাচিভার্স অ্যাসোসিয়েশনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে সরাসরি ওই টাকা সৌভিকের দু’টি সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে। কোন চুক্তির ভিত্তিতে ওই টাকা দেওয়া হয়েছিল, সেই বিষয়ে সৌভিককে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান তদন্তকারীরা। কিন্তু নাগাল পেলে তো জিজ্ঞাসা করবেন! তাঁদের তো নাগাল পাওয়াই যাচ্ছে না। আর সেই সূত্রেই জানা গিয়েছে, ইডি এদের সন্ধান পেতে ভিন্ন পথে হাঁটা দিতে পারে। প্রয়োজনে রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি ভিন্ন রাজ্যের পুলিশের দ্বারস্থ হতে পারেন তাঁরা। আদালতের দ্বারস্থ হয়ে এদের প্রথমে নোটিস ও তাতেও হাজিরা না দিলে গ্রেফতারি পরওয়ানা জারির পথে হাঁতা দিতে পারে ইডি।
আরও পড়ুন মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেই ঝাড়গ্রামে মিটল জলের সমস্যা, পৌঁছেছেন সরকারি আধিকারিকরা
ইডির আধিকারিকদের দাবি, সৌভিক খাদ্য দফতরের একজন চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী হলেও দামী মার্সিডিজ গাড়ি ব্যবহার করতেন। এই গাড়ি কেনার টাকা সে পেল কোথা থেকে? একই সঙ্গে মানিক-পত্নী শতরূপার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এখনও পর্যন্ত ৩ কোটি টাকার হদিস পাওয়া গিয়েছে। শুধু ছেলে বা স্ত্রী নয়, মানিকের মেয়ে ও জামাই এবং মেয়ের শ্বশুরের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও তাঁদের আতশ কাচের নীচে। ইডি-র দাবি, মানিকের পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়দের সঙ্গে যৌথ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকার লেনদেনের হদিস পাওয়া গিয়েছে। সেই কারণেই সৌভিক ও শতরূপাকে জিজ্ঞাসাবাদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দুইজনেরই মোবাইল সুইচড অফ। ৩টি বাড়িতে লাতা ঝুলছে। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশী কেউ তাঁদের কোনও সন্ধান দিতে পারছে না। আর তাই আর কিছুদিন দেখে দুইজনকেই পলাতক বলে ঘোষণা করে তাদের গ্রেফতার করার জন্য আদালতে পরোয়ানা জারির আবেদন করতে চাইছে ইডি।