এই মুহূর্তে

নিজের যত্ন নেওয়া স্বার্থপরতা নয়

নিজস্ব প্রতিনিধি: শারদোৎসব শেষ হতে না হতেই আজ বাদে কাল লক্ষ্মী পুজো। আমাদের সংস্কৃতিতে মাকে ভগবানের আসনে বসানো হয়েছে। এমন একটি আসনে, যেখানে বসে তিনি কোনো ভুল করতে পারেন না। তিনি সবসময় তার সন্তান সমেত গোটা পরিবারের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। তিনি নিজেকে বঞ্চিত করে সর্বদা অন্যের ভালোর জন্য ভাবেন। একজন মা প্রাণপাত করে তার সন্তানকে বড় করে তোলেন।

ছোটোবেলা থেকে এই ধরনের ধারনা নিয়ে আমরা প্রত্যেকে বড় হই। সমাজ একজন মেয়ের কাছে ঠিক এইরকমই একজন স্নেহময়ী, মমতাময়ী মা কে দাবি করে। প্রত্যেক নারী মা হওয়ার পর থেকে সমস্ত কিছু ভুলে কিভাবে তার সন্তানকে প্রতিমুহূর্তে সুখ দেওয়া যায় সেই নিয়ে ভাবতে থাকেন। নিজের সন্তান এবং পরিবারকে দেখাশোনা করার মাঝে তিনি ভুলে যান যে, নিজের প্রতি যত্ন নেওয়াটা ঐচ্ছিক নয় প্রয়োজনীয়তা। বাচ্চাদের দেখাশোনা, খাবার প্রস্তুত করা, ঘর পরিষ্কার, দোকানপাট ইত্যাদির মাঝে মায়েরা কোথাও নিজেদের হারিয়ে ফেলেন। কোথাও দাঁড়িয়ে তাঁদের মনে হয় যে ৩০ মিনিটের জন্য হলেও, তারা যদি এই সবকিছু ছেড়ে কোথাও যেতে পারতেন। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে এরকম ভাবনার জন্য তারা নিজেদের দোষী মনে করেন। একরকম অপরাধবোধে ভোগেন, কারণ সমাজ আমাদেরকে শিখিয়েছে, মায়েদের ক্লান্ত হতে নেই। মায়েদের নিজের জন্য ভাবতে নেই। একটা অপরাধবোধের সাথে সাথে নিজেদের জীবন ক্রমশঃ দুর্বিষহ হতে থাকে, এক কুয়াশাচ্ছন্ন অন্ধকার দিনের মত, যেখানে একটু রোদের আলোর জন্য মনটা ছটফট করে।

আমরা মা’কে ঈশ্বররূপে পুজো করি। কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে মা হিসেবে নিজেদের কতটা খেয়াল রাখি?

কি করবেন

১) প্রথমেই মাথায় রাখতে হবে নিজে ভালো না থাকলে আপনি আপনার ভালোটা অন্যকে দিতে পারবেন না। অন্যকে আপনার সর্বোচ্চ টুকু দিতে গেলে নিজেকে ভালো রাখতে হবে। নিজের জন্য কিছুক্ষণ সময় বার করতে গিয়ে যদি কিছুক্ষণের জন্য আপনার সন্তানদের থেকে দূরে থাকতে হয়, তাহলে সেটাই প্রয়োজন। অপরাধবোধের কিছু নেই। আপনি আপনার সবটা দিতে গিয়ে যদি নিঃশেষ হয়ে যান, যদি খিটখিটে, বদমেজাজি হয়ে যান, তাহলে আপনার কাছে আপনার সন্তানরা কখনোই ভালো থাকতে পারবে না। তাই বুঝে নিন যে নিজের যত্ন নেওয়াটা ঐচ্ছিক নয় প্রয়োজনীয়তা।

২) প্রথম এবং সহজ পদ্ধতি হচ্ছে প্রয়োজনে সাহায্যের জন্য পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বলুন। সমস্ত দায়িত্বটা নিজে একা সামলাতে অসুবিধা হলে খুলে বলুন। অন্যান্য সদস্যদের সাথে দায়িত্ব ভাগ করে নিন।

৩) আপনার পারিবারিক কাজের একটি সীমানা নির্ধারণ করুন। পরিবারকে সামলানোর দায়িত্ব আপনার এবং আপনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু আপনি ততটাই করুন যতটা আপনার সাধ্যে কুলায়। সাধ্য অতিরিক্ত প্রতিশ্রুতি দেবেন না। ঠিক ততটাই দায়িত্ব নিন, যতটা আপনি সামলাতে পারবেন।

৪) প্রতিদিন নিজের জন্য সময় বার করুন। এই সময়ে আপনি দুই ভাবে কাটাতে পারেন। প্রথমতঃ কিছু সময় আপনি উপভোগ করুন। যা করতে ভালো লাগে তাই করুন। দ্বিতীয়তঃ এমন কিছু করুন, যাতে আপনি ভেতর থেকে তৃপ্তি অনুভব করেন। এই আত্মতৃপ্তির কাজ আপনাকে ভালো রাখবে। ফলে আরও ভালোভাবে আপনি নিজের সন্তান এবং পরিবারকে দেখাশোনা করতে পারবেন।

৫) ছোটো ছোটো ঘটনার মধ্যে আনন্দ খোঁজার চেষ্টা করুন। সেটা একটা টবে গাছ লাগানো হতে পারে, আপনার ড্রয়িংরুমটা একটু নতুন করে সাজানো হতে পারে, একটা নতুন রান্না করা হতে পারে। রোজ রোজ একই কাজ করতে করতে আমাদের অনেক সময় একঘেয়ে এবং বিরক্তিকর লাগে। সেই ছোটো ছোটো কাজ গুলোকে কিভাবে একটু অন্যরকম ভাবে করা যায় সেটা ভেবে দেখুন। ছোটো ছোটো দৈনন্দিন পরিবর্তন আমাদেরকে আনন্দ দেয়।

৬) নিজের সন্তান এবং সংসার আঁকড়ে বাঁচবেন না। নিজের আলাদা জগৎ তৈরি করুন। সামাজিক যোগাযোগ বাড়ান। নিজের বন্ধুবান্ধব, আত্মীয় স্বজনের সাথে যোগাযোগ রাখুন।

একজন মায়ের ভূমিকা সহজ নয়। কিন্তু মনে রাখবেন, মায়েরও চাহিদা আছে। আপনি যদি আপনার পরিবারের ভালভাবে যত্ন নিতে চান, তাহলে নিজের ভালভাবে যত্ন নিন। এই যত্নই আপনাকে কুয়াশা পেরিয়ে রোদের আলো দেখাবে এবং পরবর্তী জীবনের জন্য আপনাকে প্রস্তুত করবে।

লেখক : পুষ্পিতা মুখার্জি (মনোবিদ ও শিক্ষিকা)

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

চৈত্র সেলে বাজার কাঁপাচ্ছে এই ৪ ধরণের শাড়ি

অন্ত্রকে সুস্থ রাখতে কোন কোন খাবার খাওয়া উচিত?

রোজা রাখতে গিয়ে মুখে দুর্গন্ধ হচ্ছে, কীভাবে দূর করবেন এই সমস্যা?

দোলের রঙ মুখ থেকে উঠছে না, চিন্তা নেই, এই নিয়মগুলি মানুন……

দোলের দিন চোখ বাঁচিয়ে রং খেলুন

সুরাপ্রেমীদের জন্যে খারাপ খবর! হোলিতে খোলা থাকছে না মদের দোকান

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর