এই মুহূর্তে




অলক্ষ্যে হাসে মহাকাল! সিরাজের বিরুদ্ধে চক্রান্তকারীদের শেষ পরিণতি বিধাতা পুরুষ লিখেছিলেন আগেই




নিজস্ব প্রতিনিধি: “দাঁড়া রে! দাঁড়া রে ফিরে! দাঁড়া এইক্ষণ
দাঁড়াও ক্ষত্রিয়গণ!
যদি ভঙ্গ দেও রণ,
গর্জিলা মোহনলাল, নিকটে শমন”

নবীন চন্দ্র সেনের এই কবিতা পলাশীর যুদ্ধ নিয়ে। পলাশীর যুদ্ধ, ভারতের শেষ স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হওয়ার সময়। ভারত ইতিহাসের এক অভিশপ্ত সময় ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন। পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার পলাশীর আম্রকাননে বণিকের মানদণ্ড রাজদণ্ডে পরিণত হয়েছিল।

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও নবাব সিরাজউদ্দৌলার মধ্যে সংঘটিত পলাশীর যুদ্ধে নবাবের সেনাদল ছিল বিশাল, প্রায় ৫০ হাজার। আর ব্রিটিশদের নামমাত্র, ৩ হাজার। তবুও পরাজয় ঘটেছিল বাংলাদেশের নবাবের। পরাজয়ের নেপথ্য অস্ত্র হিসাবে কাজ করেছিল বিশ্বাসঘাতকতা। সেনাপতি মীরজাফর থেকে শুরু করে উমিচাঁদ, জগৎ শেঠ, রায় দুর্লভ, রাজা রাজবল্লভ, ইয়ার লতিফ কে ছিলেন না সেই তালিকায়! বিশ্বাসঘাতকতায় নৌকায় উঠে আর পরাজয়ের নদী পেরোনো হয়নি সিরাজের। মীরমদন, মোহনলালের মতো বিশ্বস্ত অনুচর থাকা সত্ত্বেও বিশাল সেনাবহর নিয়েও যুদ্ধে হেরে যান নবাব।

স্ত্রী পুত্র নিয়ে পালানোর সময় ধরা পড়ে যান নবাব। শোনা যায়, প্রাণ বাঁচাতে মুকুট ছেড়ে বোরখা পড়েছিলেন তিনি। শুধু ভুলে গিয়েছিলেন রাজকীয় নাগরাই জুতোটি খুলতে। নৌকা করে যাওয়ার সময় এক মাঝির চোখে পড়ে যায় নবাবের করা ছোট্ট ভুলটি। পরোক্ষে সেই ধরিয়ে দেয় সিরাজকে। এ নিয়ে কোনও প্রামাণ্য ইতিহাস নেই। বিবিধ জন বিবিধ কথা বলে। কেউ কেউ বলেন যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালানোর সময় ভগবানগোলায় মীরজাফরের জামাতা মীরকাশিমের হাতে সপরিবারে গ্রেফতার হন সিরাজউদ্দৌলা। এরপর মীরজাফর পুত্র মীরনের ইশারায় মহম্মদী বেগ সিরাজের মা আমিনা বেগমের সামনে ছেলের শিরচ্ছেদ করে হত্যা করে। শোনা যায়, নবাবের দেহ গাধার পিঠে চাপিয়ে ঘোরানো হয়েছিল গোটা মুর্শিদাবাদ। এরপর মীরজাফর এবং মীরকাশিম বাংলার নবাব পদে বসেছিলে ঠিকই, তবে তাঁরা পরিণত হন ইংরেজদের হাতের পুতুলে।

সিরাজ হত্যার দিনই হয়তো অলক্ষ্যে হেসেছিল মহাকাল। কথায় বলে, মানুষ যা করে তা ফেরত পায়। সে রাজাই হোক বা ফকির। এক্ষেত্রেও অন্যথা হয়নি।  সিরাজকে হত্যা করার দায়িত্ব যিনি নিয়েছিলেন সেই মহম্মদী বেগের মস্তিষ্ক বিকৃতি দেখা দেয় কিছুদিন পরেই। তিনি গভীর কুয়োর মধ্যে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এরপর আসা যাক মীরজাফরের কথায়। তিনি আক্রান্ত হয়েছিলেন দুরারোগ্য কুষ্ঠ রোগে। শেষ নিঃশ্বাস পড়ার আগে পর্যন্ত জুটেছিল ঘৃণা আর অবহেলা। বুড়িগঙ্গা নদীতে বজ্রপাতের শিকার হয়ে মারা যান মীরন। ভিন্নমত, লর্ড ক্লাইভের চক্রান্তে অত্যন্ত শোচনীয় মৃত্যু হয়েছিল মীরনের।

বাংলায় প্রথম ফাঁসি হয়েছিল মহারাজা নন্দকুমারের। ছোটবেলার ইতিহাস বই তাঁকে বাংলার প্রথম শহিদ হিসাবে গন্য করলেও সিরাজের বিরুদ্ধে চক্রান্তকারী মহারাজা কি সত্যিই এতখানি শ্রদ্ধার অধিকারী? নন্দকুমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল তহবিল তছরুপের। জগৎ শেঠকে গঙ্গাবক্ষে ডুবিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিলেন ইয়ার লতিফ। তিনি নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিলেন। ঢাকার দেওয়ান রাজা রাজবল্লভ পদ্মায় ডুবে মারা যান। রায়দুর্লভ ভগ্ন স্বাস্থ্য নিয়ে কারাগারে মৃত্যুর অপেক্ষা করতে করতে মারা যান।

উমিচাঁদ উন্মাদ অবস্থায় পথে পথে ঘুরে করুণ মৃত্যু বরণ করেন। রবার্ট ক্লাইভ, পলাশির যুদ্ধে যাকে নাটের গুরু বলা যায়, তিনি মানসিক অবসাদে ভুগে গলায় ক্ষুর চালিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। তাঁর সঙ্গী ওয়াটসন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়ে মনের দুঃখে ও অনুশোচনায় মারা যান। স্ক্র্যাপ্টন বাংলায় লুটপাট করে বিলেতে ফেরার পথে জাহাজডুবিতে মারা যান।

ইংরেজদের হাতের পুতুল হয়ে থাকতে চাননি মীর কাশিম। তাই তিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বক্সারের যুদ্ধ করেন। বক্সারের যুদ্ধে পরাজিত হয়ে তিনি কার্যত ফকিরাবস্থায় রাস্তায় ঘুরতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত কপর্দকশূন্য হয়ে পথেই মৃত্যু হয় তাঁর।




Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

ডাইনি অপবাদে পূর্ণিয়ায় একই পরিবারের ৫ জনকে জ্যান্ত পুড়িয়ে খুন

পরকীয়ায় বাধা! প্রেমিকের সঙ্গে মিলে প্রতিবন্ধী স্বামীকে গলা টিপে খুন করলেন তিন সন্তানের মা

৮৫৪ কোটি টাকা বেতনে Meta-য় যোগ আইআইটি কানপুরের প্রাক্তনী ত্রিপত বনশলের

আইসিইউতে জনপ্রিয় গায়িকা ফরিদা পারভীন, ইউনূস সরকারের সাহায্য নিতে অস্বীকার

দেবভূমি উত্তরাখণ্ডে মানুষও পূজিত ঈশ্বর রূপে, জেনে নিন অজানা মন্দিরের কাহিনি

জেনে নিন, কী ভাবে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নর পরবর্তী জন্মে মুক্তি লাভ হয়েছিল

Advertisement




এক ঝলকে
Advertisement




জেলা ভিত্তিক সংবাদ