ঐতিহ্যের প্রতীক কৃষ্ণনগরের ‘বুড়িমা’, জানুন এর ইতিহাস

Published by:
No Author

Ei Muhurte

11th November 2021 5:35 pm

নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: বয়সের ভার অনেক। তবুও ছেদ পড়েনি ঐতিহ্যে। আজও সেই একইভাবে কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে পূজিতা হন মা জগদ্ধাত্রী। তবুও কৃষ্ণনগরের ‘বুড়িমা’ যেন আলাদাই আকর্ষণ পূণ্যার্থী ও দর্শকদের মধ্যে। দুটিই কৃষ্ণনগরের প্রাচীন জগদ্ধাত্রী। একটি রাজবাড়ির পুজো অন্যটি বারোয়ারি। তবে বুড়িমা যেন সকলের উর্ধ্বে। কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর ঐতিহ্য ও আবেগের একটি নাম চাষাপাড়া ‘বুড়িমা’। কৃষ্ণনগর রাজবাড়ীর পুজোর প্রচলনের পর থেকেই চাষাপাড়া বারোয়ারি অর্থাৎ বুড়িমার পুজো শুরু হয় বলে জনশ্রুতি। এই পুজো নিয়ে একটি জনশ্রুতি আজও প্রচলিত। মা জগদ্ধাত্রী নাকি স্বয়ং রাজা কৃষ্ণচন্দ্রকে স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন।


কথিত আছে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র কোনও এক সময় রাজবাড়ির পুজোর বিপুল ব্যয়ভার নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। সেই সময়ই মা জগদ্ধাত্রী তাঁকে স্বপ্নাদেশ দিয়ে বলেন, চাষা পাড়ার যে সমস্ত লেঠেলরা আছেন তারাই দেবীর জগদ্ধাত্রী পুজোর আয়োজন করবেন। সেই থেকেই শুরু কৃষ্ণনগরের চাষা পাড়ায় বারোয়ারি জগদ্ধাত্রী পুজো। কালক্রমে আনুমানিক ৭০-৭৫ আগে এখানকার মাতৃ প্রতিমার নাম হয় বুড়িমা। সেই থেকে আজ পর্যন্ত কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর সেরা আকর্ষণ বুড়িমা। আরেকটি জনশ্রুতি অনুযায়ী, কৃষ্ণনগরের রাজা সাধারণ মানুষের মধ্যে জগদ্ধাত্রী পুজো ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে অর্থসাহায্য় করতেন। সেই থেকেই চাষা পাড়া সর্বজনীনের পুজো চালু হয়েছিল। তবে বর্তমানে সাধারণ মানুষের দান এবং চাঁদাতেই বুড়িমা পুজো হয়।


গোটা কৃষ্ণনগরবাসীর কাছেই বুড়িমা খুব জাগ্রত দেবী। আর সেই থেকে বুড়িমার মহিমা ছড়িয়েছে রাজ্য ছাড়িয়ে দেশ ও বিদেশেও। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পুজোর দিন দান স্বরূপ নগদ অর্থ শাড়ি এবং সোনা-রুপোর গয়না আসে বুড়িমার কাছে। মানুষের বিশ্বাস, মন দিয়ে বুড়িমার কাছে কিছু চাইলেই তা পূরণ হয়। তাই কৃষ্ণনগরে বুড়িমাকে নিয়ে রয়েছে অনেক অলৌকিক কাহিনী। আজও কৃষ্ণনগরের সমস্ত প্রতিমা আগে বিসর্জন হবে আর সবার শেষে বুড়িমা। বুড়িমা যতক্ষণ না পর্যন্ত বিসর্জন হয় রাস্তার দুই ধারে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন ভক্তরা।


অপরদিকে রাজবাড়ির পুজোও যথেষ্ট ঐতিহ্যমণ্ডিত। নবমীর সন্ধেয় তিলধারণের জায়গা থাকে না কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে। ওই একটি দিনই যেন পুরোনো প্রাণ ফিরে পায় রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের প্রাসাদ। কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির জগদ্ধাত্রী পুজো কবে শুরু হয়েছিল সেটা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে অনেকেই মনে করেন এই পুজোর প্রচলন হয়েছিল ১৭৫৪ সালে। কথিত আছে, ১২ লক্ষ খাজনা দিতে না পারার জন্য রাজা কৃষ্ণচন্দ্রকে বন্দি করেছিলেন তৎকালীন বাংলার নবাব আলিবর্দি খাঁ। যেদিন তিনি ছাড়া পেলেন সেদিন ছিল দুর্গাপুজোর বিজয়া দশমী। নৌকাযোগে কৃষ্ণনগর ফেরার পথে বিসর্জনের বাজনা শুনে বিষন্ন রাজা। সেদিন রাতেই তিনি স্বপ্নে মা জগদ্ধাত্রীকে দেখতে পান। স্বপ্নে মহারাজা দেখেছিলেন এক রক্তবর্ণা চতুর্ভুজা কুমারী দেবীকে। মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রকে তিনি কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে পুজোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই বারই প্রথম কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে জগদ্ধাত্রী পুজো করেন মহা ধুমধামের সঙ্গে। এখনও আগের মতো নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী তিনবার পুজো হয়। খিচুড়ি, পোলাও, তিন কিংবা পাঁচ রকমের মাছ, তরকারি, মিষ্টি, পায়েস দিয়ে মূলত ভোগ দেওয়া হয়।

More News:

Leave a Comment

Don’t worry ! Your email & Phone No. will not be published. Required fields are marked (*).

এক ঝলকে

জেলা ভিত্তিক সংবাদ

Alipurduar Bankura PurbaBardhaman PaschimBardhaman Birbhum Dakshin Dinajpur Darjiling Howrah Hooghly Jalpaiguri Kalimpong Cooch Behar Kolkata Maldah Murshidabad Nadia North 24 PGS Jhargram PaschimMednipur Purba Mednipur Purulia South 24 PGS Uttar Dinajpur

Subscribe to our Newsletter

624
মিশন দিল্লি, পিকের চাণক্যনীতি কতটা কাজ দিল মমতার?

You Might Also Like