এই মুহূর্তে




কোথায় আছে এই প্রাচীনতম বগলামুখী সিদ্ধপীঠ ?




পৃথ্বীজিৎ চট্টোপাধ্যায়: দেবী ভাগবত পুরাণ অনুযায়ী দশমহাবিদ্যার অষ্টম মহাবিদ্যা দেবী বগলামুখী হিন্দু শাস্ত্রে এক প্রাচীন দেবী। যিনি  আদিশক্তির এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রূপ। দেবী বগলা একাধারে রক্ষাকর্ত্রী, জ্ঞানদায়িনী ও মুক্তি দায়িনী। জানা যায়, ভারতে এই দেবীর বেশ কিছু প্রাচীন মন্দির বিদ্যমান, তবে সেই মন্দিরগুলির মধ্যে মধ্যপ্রদেশের আগর মালওয়া জেলার নলখেরা শহরে অবস্থিত মা বগলামুখী মন্দির ভারতের অন্যতম শ্রদ্ধেয় তান্ত্রিক শক্তিপীঠ। এই মন্দিরটি ইন্দোর শহর থেকে প্রায় ১৬৫ কিলোমিটার দূরে, লখুন্দর নদীর তীরে অবস্থিত, যা পূর্বে লক্ষণ নদী নামে পরিচিত ছিল। এটি ভারতের তিনটি প্রধান বগলামুখী সিদ্ধপীঠ – দাতিয়া, কাংড়া এবং নলখেরার মধ্যে অন্যতম। কথিত আছে, এই মন্দিরটি আনুমানিক ৫০০০ বছরেরও বেশি পুরানো, যা মহাভারতের সমসাময়িক।

পীঠস্থান ও ধর্মীয় গুরুত্ব

তন্ত্রসাহিত্যে বর্ণিত দশ মহাবিদ্যার অষ্টম রূপ হলেন মা বগলামুখী। পীঠনির্ণয় তন্ত্র অনুসারে, নলখেরা সেই পবিত্র স্থান, যেখানে দেবী সতীর একটি অঙ্গ পতিত হয়েছিল। তাই একে সিদ্ধপীঠ হিসেবে গণ্য করা হয়। দেবী এখানে ত্রিমুখী রূপে বিরাজমান, এবং শাস্ত্রমতে তাঁর মূর্তি স্বঘোষিত ও জাগ্রত, অর্থাৎ কোনও মানুষ দ্বারা নির্মিত নয়। এখানে দেবী বগলামুখীর পাশাপাশি লক্ষ্মী, সরস্বতী, শ্রীকৃষ্ণ, হনুমান ও ভৈরবের মূর্তিও পূজিত হয়। জগৎজোড়া বিপদ-আপদ, শত্রু নাশ ও তান্ত্রিক বাধা দূর করতে ভক্তরা মা বগলামুখীর শরণাপন্ন হন।

দেবীর রূপ ও তন্ত্রাচার

মা বগলামুখীকে তন্ত্রে বলা হয় স্তম্ভ শক্তির দেবী, অর্থাৎ যিনি শত্রু বা অশুভ শক্তিকে স্থবির করে দিতে পারেন। তিনি সর্বদা হলুদ রঙের পোশাক ও গহনা ধারণ করেন, এবং তাই তাঁকে “পীতাম্বরা” বা “পীতাম্বরি” নামেও ডাকা হয়। মূর্তিতে দেবীর ত্রিনেত্র, অর্ধচন্দ্র, ও এক হাতে ত্রিশূল এবং অন্য হাতে শত্রুর জিভ ধরে রাখতে এবং আরেক হাতে গদা বা মুগুর ধরে রাখতে দেখা যায়।

বিশ্বাস করা হয়, এই মন্দিরটি এক শ্মশানের ওপর নির্মিত, যা একে তান্ত্রিক সাধনার জন্য বিশেষ উপযোগী করে তোলে। সারা দেশ থেকে তান্ত্রিক সাধক, শৈব ও শক্তোপাসকরা এখানে সাধনা করতে আসেন, বিশেষত অমাবস্যা ও নবরাত্রি তিথিতে।

স্থাপত্য ও পরিবেশ

নলখেরা মন্দিরটি ঐতিহ্যবাহী হিন্দু স্থাপত্য শৈলী অনুসরণে তৈরি। মন্দিরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে জটিল খোদাই, প্রাণবন্ত রঙ ও আধ্যাত্মিক প্রশান্তি। মন্দির প্রাঙ্গণে নীরবতা ও পবিত্রতার মিশ্রণে সৃষ্টি হয় এক অপার্থিব পরিবেশ, যা ধ্যান ও মনঃসংযোগের জন্য উপযুক্ত।

মন্দির চত্বর জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন দেবদেবীর ছোট ছোট মন্দির, যা ভক্তদের বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয়। প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত চলে আরতি, পুজো ও বিশেষ পাঠ।

ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও ভক্তসমাগম

নবরাত্রি, অমাবস্যা ও গুরুপূর্ণিমা উপলক্ষে এখানে বিরাট উৎসব হয়। তখন দেশ-বিদেশ থেকে হাজার হাজার ভক্ত এসে জড়ো হন। বিশেষ পূজা, যজ্ঞ, তন্ত্রাচার এবং ভক্তিমূলক গানের মধ্য দিয়ে দেবীর আরাধনা হয়।

ভক্তরা বিশ্বাস করেন যে, দেবী বগলামুখীর আশীর্বাদে জীবনের কঠিন সময়ে রক্ষা, শত্রু নিধন এবং মানসিক শান্তি লাভ করা যায়। অনেকেই এখানে মন্ত্রসিদ্ধি ও তান্ত্রিক পুরস্কার লাভের আশায় আসেন।

আধ্যাত্মিকতা ছাড়াও সমাজকল্যাণ

এই মন্দির শুধুমাত্র ধর্মীয় কেন্দ্রে সীমাবদ্ধ নয়, বরং একটি সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবেও কাজ করে। মন্দির কমিটি শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও দরিদ্র সহায়তায় নিয়মিত কাজ করে থাকে। স্থানীয় মানুষের জীবনমান উন্নয়নে এই মন্দিরের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মন্দিরে পুজো দেওয়ার সময়

মন্দির সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে জানা যায়, মায়ের মন্দির সকাল ৬টা  থেকে রাট ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

কত মূল্যের পুজো দেওয়া যায়

মন্দিরে ২,১০০টাকা থেকে ১১,০০০ টাকা মূল্যের পুজো দেওয়া যায়।

ওঁ হ্লীঁ বগলামুখী সর্বদুষ্টানাং বাচং মুখং পদং স্তম্ভয় জিহ্বাং কীলয় বুদ্ধিং বিনাশয় হ্লীঁ ওঁ স্বাহা ।।




Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

ঐতিহ্যবাহী বোল্লা রক্ষাকালী মন্দিরে মা রক্ষাকালীর তিন কেজি ওজনের রুপার মুখাবয়ব স্থাপন

স্কুলছাত্রের উপর অমানবিক অত্যাচার, পাকিস্তানি পতাকায় মূত্রত্যাগ করতে বাধ্য করল দুষ্কৃতীরা

কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখায় মুখোমুখি ভারত ও পাক বায়ু সেনার যুদ্ধবিমান!

পুলিশের ভ্যান থেকে ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যু ১ আসামির, পথ অবরোধ নিহতের পরিবারের

বিশ্বের সেরা ধনকুবেরদের তালিকায় ১৪ নম্বরে মুকেশ আম্বানি, ধারে-কাছে নেই আদানি

ভয় পেয়েছে মোল্লা ইউনূস, ৬ মাস বাদে আচমকা জামিন ইসকন সন্ন্যাসী চিন্ময় প্রভুর

Advertisement




এক ঝলকে
Advertisement




জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর