নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ২০২৪ সালে লিঙ্গ পরিবর্তন করে ছেলে থেকে মেয়ে হয়েছেন প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার এবং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গারের ছেলে আরিয়ান বাঙ্গার। শুধু তাই নয়, নামও পরিবর্তন করিয়েছেন তিনি। বর্তমানে তাঁর নাম আনায়া বাঙ্গার। গতবছর হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি এবং লিঙ্গ পুননির্মাণ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ছেলে থেকে মেয়ে হয়েছেন আরিয়ান। বর্তমানে তিনি রূপান্তরের যাত্রা উপভোগ করছেন। তবে লিঙ্গ পরিবর্তনের পর তিনি আর ক্রিকেট খেলতে পারছেন না, তাঁকে খেলতে দেওয়া হচ্ছে না। এ কথা তিনি নিজেই জানিয়েছেন। যদিও বর্তমানে তিনি এ দেশে থাকেন না, ইউনাইটেড ম্যাঞ্চেস্টার শহরে থাকেন। তবে শুরু থেকেই তাঁর ক্রিকেট যাত্রা ভাল ছিল না। তিনি তাঁর বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে অনুর্ধ্ব-১৫ টিমে খেলেছেন। কিন্তু সেই সময়ে তাঁকে নানাভাবে যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়েছিল।

সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে আনায়া ক্রিকেট জগতের ‘বিষাক্ত পুরুষতন্ত্র’-এর বিষয়ে মুখ খুলেছেন। জানিয়েছেন, ক্রিকেটাররা তাঁকে নাকি নগ্ন-উলঙ্গ ছবি পাঠাতেন। সাক্ষাৎকারে, আনায়াকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ‘আপনি কখন বুঝতে পেরেছিলেন যে, তিনি ভুল লিঙ্গ ধারণ করেছেন? তাঁকে এবার লিঙ্গ পরিবর্তন করতে হবে? অতএব, কেন তিনি লিঙ্গ পরিবর্তনের কথা ভাবলেন?’ জবাবে ‘ছেলে থেকে মেয়ে হওয়া’ আনায়া বলেন, “যখন আমি আট বা নয় বছর বয়সী ছিলাম, তখন আমি আমার মায়ের আলমারি থেকে কাপড় বের করে পরতাম। তারপর, আমি আয়নার দিকে তাকিয়ে বলতাম, আমি একজন মেয়ে। আমি একজন মেয়ে হতে চাই। বড় হয়ে আমি মুশির খান, সরফরাজ খান, যশস্বী জয়সওয়ালের মতো কিছু সুপরিচিত ক্রিকেটারের সঙ্গে খেলেছি। কিন্তু আমার বাবা যেহেতু একজন সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব, তাই আমাকে নিজের সম্পর্কে গোপনীয়তা বজায় রাখতে বলতেন। কারণ তিনি জানতেন, ক্রিকেট দুনিয়া নিরাপত্তাহীনতা এবং বিষাক্ত পুরুষত্বে ভরা।” এরপর আনায়াকে লিঙ্গ পুনর্নির্ধারণ অস্ত্রোপচারের পর সহকর্মী ক্রিকেটারদের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “কিছু আমাকে সমর্থন করেছিল, কিন্তু কিছু খেলোয়াড় এর দ্বারা আমি হয়রানির শিকার হয়েছি। কারণ কিছু ক্রিকেটার আমাকে লাগাতার তাঁদের নগ্ন ছবি পাঠিয়ে যেতেন।”

এরপর তিনি নাম না করে একজন ব্যক্তির উদ্দেশ্যে বলেন, ‘একজন মানুষ সবার সামনে আমাকে গালিগালাজ করত। তারপর সেই ব্যক্তিই আমার পাশে এসে বসে আমার ছবি চাইত। আরেকবার, যখন আমি ভারতে ছিলাম, তখন আমি এক প্রবীণ ক্রিকেটারকে আমার পরিস্থিতির কথা বলেছিলাম। সে আমাকে বলেছিল চলো গাড়িতে যাই, আমি তোমার সঙ্গে শুতে চাই।” সুতরাং তাঁর কথাতেই স্পষ্ট, লিঙ্গ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি খুব ভালোবাসি কাজ করেছেন। কারণ ক্রিকেট খেলার সময় তাঁর ‘মেয়ে মেয়ে ভাবটা’ সকলেই বুঝে গিয়েছিলেন এবং তাঁকে যৌন হয়রানি করেছেন। উল্লেখ্য, সঞ্জয় বাঙ্গারের মতো, আনায়াও একজন ক্রিকেটার। যিনি স্থানীয় ক্লাব ক্রিকেটে ইসলাম জিমখানার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান লিসেস্টারশায়ারের হিঙ্কলি ক্রিকেট ক্লাবের হয়েও খেলেছেন। তবে, ২০২৩ সালের নভেম্বরে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (ICC) তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, ট্রান্সজেন্ডার ক্রীড়াবিদদের মহিলা ক্রিকেটে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হবে না। সেই সময়ে আনায়া ইনস্টাগ্রামে, আইসিসির নতুন নিয়মের প্রতি হতাশাও প্রকাশ করেছিলেন। এরপরেই ক্রিকেট ছেড়ে দিয়েছেন আনায়া। অনায়া বর্তমানে ম্যাঞ্চেস্টারে থাকেন এবং ইনস্টাগ্রামে তিনি খুবই সক্রিয় এবং সর্বদা অনুসারীদের আপডেট রাখেন।