নিজস্ব প্রতিনিধি: একটা সময় ছিল যখন মুর্শিদাবাদ(Murshidabad) মানেই বোঝাত কংগ্রেসের(INC) গড়। এমনকি বাম জমানার ৩৪ বছরের রাজত্বপাটও সেখানে সেভাবে কোনও ছাপ ফেলতে পারেনি। বছর বছর সেখানে বাম বনাম কংগ্রেসের লড়াই হত। তাতে দুই শিবিরেই রক্ত ঝরত, জীবন যেত। কিন্তু লড়াইটা চলত সেয়ানে সেয়ানে। কখনও বামেরা এগোত তো কখনও কংগ্রেস। এমনকি কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূলের জন্মের পরে বা বাম জমানার অবসান শেষে তৃণমূলের আমলেও ছবিটা সেই ভাবে বদলায়নি। কিন্তু ছবিটা আমূল বদলে যেতে শুরু করে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকেই। জেলায় প্রথমবারের জন্য লোকসভা নির্বাচনে জয়ের মুখ দেখে তৃণমূল। বহরমপুরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী(Adhir Ranjan Chowdhury) আসন ধরে রাখতে সক্ষম হলেও জঙ্গিপুর ও মুর্শিদাবাদ আসন চলে যায় তৃণমূলের দখলে। শুধু তাই নয় একুশের বিধানসভা নির্বাচনেও জেলায় ২টি বাদে বাকি ২০টি আসনেই ফোটে ঘাসফুল। কার্যত কংগ্রেসের গড়ে বিলুপ্ত হয় কংগ্রেস। এবার সেই জেলাতেই মঙ্গলবার ভারত জোড়ো যাত্রা শেষ করলেন অধীর। কিন্তু তার সঙ্গে সঙ্গে একটা প্রশ্নও উঠে গেল, এই যাত্রা কী আদৌ মুর্শিদাবাদের মাটিতে মৃত কংগ্রেসকে জীবনদান করবে?
আরও পড়ুন বিনিয়োগের স্বার্থে শিল্পের জমির দাম কমানোর সিদ্ধান্ত রাজ্যের
প্রশ্ন হচ্ছে মুর্শিদাবাদের মাটিতে কংগ্রেসের এহেন খারাপ দশা কেন? এর কারণ হিসাবে অধিকাংশ মানুষ ও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এই অবস্থার জন্য দায়ী অধীরবাবু নিজেই। তিনিই জেলাতে তো বটেই কার্যত গোটা বাংলা থেকেই কংগ্রেসকে একাই ধুয়ে মুছে সাফ করে দিয়েছেন। তাঁর অতিবড় মমতা বিরোধিতা এবং বামেদের সঙ্গে দহরম মহরম ও জোট মুর্শিদাবাদের মানুষ তো বটেই বাংলার মানুষও ভাল ভাবে নিতে পারেনি। সব থেকে বড় কথা নিরন্তর তৃণমূল বিরোধিতার কারণে মুর্শিদাবাদের আমজনতাও প্রায় এক দশক ধরে রাজ্য সরকারের সিংহভাগ আর্থসামাজিক প্রকল্পের সুযোগসুবিধা নিতে পারেননি। কেননা স্থানীয় কংগ্রেসের নেতারাই তাঁদের ভুল বুঝিয়ে সেই সব প্রকল্প থেকে দূরে সরিয়ে রাখতেন। কিন্তু ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকেই বোঝা যায় মুর্শিদাবাদ জেলার মানুষেরাও রাজ্য সরকারের যাবতীয় আর্থসামাজিক প্রকল্পের সুবিধা নিতে ইচ্ছুক। সেই কারণেই কিবা জেলা পরিষদে, কিংবা পঞ্চায়েত সমিতি বা গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে তাঁরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তৃণমূলের(TMC) প্রার্থীদেরই জয়ী করেন।
আরও পড়ুন বন্দে ভারতে হামলার ঘটনায় দোষী নয় রাজ্য, বোঝালেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী
কার্যত সেই জয়কেই তাঁরা আরও এগিয়ে নিয়ে যান ২০১৯ এর লোকসভা ও ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে। দুটি ক্ষেত্রেই জেলার মানুষের সমর্থন ছিল তৃণমূলের দিকেই। যে সংখ্যালঘু সমাজের ভোট ব্যাঙ্কের ওপর ভর দিয়ে বাংলার মাটিতে কংগ্রেস বেঁচে ছিল সেই সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদ জেলা থেকেই কার্যত মুছে যায় কংগ্রেস। শুধু তাই নয়, বিধানসভা নির্বাচনের আগে অধীন নিজে যেভাবে বিজেপির সুরে সুর মিলিয়ে তৃণমূলকে আক্রমণ শানিয়েছিলেন তার জেরে দেখা যায় একুশের ভোটে তাঁর নিজের শহর বহরমপুর ও পাশের মুর্শিদাবাদে জয়ী হয়েছে বিজেপি(BJP)। এখন অধীর রাহুল গান্ধির(Rahul Gandhi) দেখানো ভারত জোড়ো যাত্রার নকল করে যে যাত্রাই করুন না কেন, বাংলার মাটিতে বিজেপি যতক্ষণ না দুর্বল হয় ততক্ষণ মুর্শিদাবাদে কংগ্রেস আদৌ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কিনা সেটাই প্রশ্ন। কেননা সাম্প্রতিককালের নির্বাচনী ফলাফল বলে দিচ্ছে জেলায় বিজেপির আগ্রাসন ঠেকাতে ও উন্নয়নের প্রশ্নে সংখ্যালঘুরা তৃণমূলের ওপরেই আস্থা রেখেছেন আর চট করে তাঁরা কংগ্রেসে ফিরে যেতেও ইচ্ছুক নন। স্বাভাবিক ভাবেই মুর্শিদাবাদের বুকে অধীর যতদিন ধরেই ভারত জোড়ো যাত্রা করুন না কেন, কংগ্রেসের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।