নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলা জানে, ভারতবর্ষ জানে, জানে গোটা বিশ্ব। তিনিই শান্তির পথে হেঁটে শান্ত করেছেন জঙ্গলমহলকে(Jungalmahal)। নিত্যদিনের নৃশংস খুনখারাপি বন্ধ করে জঙ্গলমহলকে তিনি হাঁটিয়েছেন উন্নয়নের পথে, শান্তির পথে। নতুন করে হাসি ফুটিয়েছেন জঙ্গলমহলের জনতার মুখে। তাঁর সেই শান্তি প্রক্রিয়ার নীতি এখন দেশের অনান্য রাজ্যের কাছেও চর্চার বিষয় মাও(Maoist) প্রভাব ঠেকাতে। এদিন সেই জঙ্গলমহলের বুকে দাঁড়িয়ে আবারও তিনি জানালেন শান্তির আর্জি। ‘আর রক্ত যেন না ঝড়ে জঙ্গলমহলে’। তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। তাঁর সরকারই ভোল বদলে দিয়েছে জঙ্গলমহলের। জঙ্গলের জনতাকে ফিরিয়েছে জঙ্গলের অধিকার। দিয়েছে জমির অধিকার, পাট্টা। জঙ্গলের জনতা এখন তাঁর সরকারের হাত ধরে পেয়েছে খাদ্যসাথী, স্বাস্থ্যসাথী, সবুজসাথী, জয় জোহর, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, কৃষকবন্ধু, বাংলার বাড়ি, তপশিলী বন্ধু, মেধাশ্রী, শিক্ষাশ্রী, পথশ্রী। এদিন ঝাড়গ্রামে(Jhargram) ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনিক সভা। সেই সভা থেকেই তিনি দিয়েছেন শান্তির বার্তা(Peace Message)।
মমতা এদিন একদিকে যেমন শান্তির আর্জি রেখেছেন তেমনি আদিবাসীদের সংস্কৃতি ও সভ্যতাকেও সেলাম জানিয়েছেন। এদিন ঝাড়গ্রামের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী লেখক কালীপদ সোরেনকে বঙ্গবিভূষণ সম্মাণে ভূষিত করেন। গোরাচাঁদ মুর্মুকে কবি সারদা প্রসাদ কিষ্কু স্মৃতি পুরস্কার সম্মাণিত করেন। একই সঙ্গে এদিন মুখ্যমন্ত্রী ৩ আদিবাসী সমাজের লেখক দুগাই টুডু, যতীন টুডু ও প্রসেনজিৎ মান্ডির হাতে তুলে দেন ৩টি পুরষ্কার। দুগাই টুডুকে প্রদান করেন সাধু রামচাঁদ মুর্মু স্মৃতি পুরস্কার এবং যতীন টুডু ও প্রসেনজিৎ মান্ডিকে তুলে দেন পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু স্মৃতি পুরস্কার। এদিনের সভা থেকে আদিবাসীদের মধ্যে জমির পাট্টাও তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। নিজ বক্তব্য রাখার সময়ে তিনি জেলার জনতাকে জেলার উন্নয়নের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘২০১৭ সালে ঝাড়গ্রাম নতুন জেলা হয়েছে, এই সাত বছরে এই জেলা নতুন রূপ পেয়েছে। নতুন মেডিকেল কলেজ হয়েছে, দুটি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল হয়েছে, আর্চারি আকাডেমি হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হয়েছে। কলকাতায় আদিবাসী ভবন তৈরি হয়েছে। ঝাড়গ্রাম এবং কালিম্পংয়ে আরও দুটি ভবন হবে। তার জন্য জমি চিহ্নিত হয়ে গিয়েছে। ঝাড়গ্রামের ছেলেমেয়েরা তিরন্দাজিতে ভাল করছেন। তাই আর্চারি অ্যাকাডেমি করে দিয়েছি। আমার বিশ্বাস, এখানকার ছেলেমেয়োরা অলিম্পিক্সে যাবে। আমি জানি তিরন্দাজিতে আদিবাসীদের ধারে পাশে কেউ নেই। আমি চাই আপনারা অলিম্পিক্স জিতুন।’
তবে এদিনের সভা থেকে মমতা সব থেকে বেশি জোর দিয়েছেন, জঙ্গলমহলে শান্তি বজায় রাখার ওপরেই। তিনি জানিয়েছেন, ‘আগে এই জঙ্গলমহলে রক্ত ঝড়েছে নিত্যদিন। আমি লালগড়ের পথে পথে ঘুরেছি। বেলপাহাড়ীর পথে পথে হেঁটেছি। এখন জঙ্গমহলে আর রক্ত ঝড়ে না। আগামী দিনেও যেন আর না ঝড়ে। ১১ বছর আগে এখানে রক্ত ঝরত, আমরা আর রক্ত দেখতে চাই না, শান্তি বিরাজ করুক। আর রক্ত যেন না ঝড়ে জঙ্গলমহলে। খুনোখুনি আর নয়, অনেক রক্ত ঝরেছে। এবার উন্নয়ন করতে হবে।’ ঘটনাচক্রে মুখ্যমন্ত্রীর জঙ্গলমহল সফরকালেই শিলদার ইএফআর ক্যাম্পে মাওবাদী হানার ঘটনার মামলার রায় প্রদান করেছে আদালত। প্রথম দফার রায়ে ১৩জনকে যাবজ্জীবন কাণ্ডে দন্ডিত করা হয়েছে। এই হামলার ঘটনাই ছিল জঙ্গলমহলের বুকে মাওবাদীদের সব থেকে বড় হামলার ঘটনা। সেই ঘটনায় ২৪জন পুলিশ কর্মী যেমন মারা গিয়েছিলেন, তেমনি ৫জন মাওবাদীও মারা গিয়েছিলেন। আবার মাওবাদী নেতা সব্যসাচী গোস্বামী ওরফে কিশোরদাকে গ্রেফতারের পরে তাঁকে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, কিষেণজির মৃত্যু এবং তারপরে একাধিক মাওবাদী নেতার আত্মসমর্পণ ও গ্রেফতারের পরে ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়া মাও বাহিনীকে আবারও ঘুরে দাঁড় করাতে তাঁকে সামনে রেখে সশস্ত্র স্কোয়াড তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছিল মাওবাদীদের একাংশ। আর তাই এদিন বাড়তি গুরুত্ব পেয়ে গেল মুখ্যমন্ত্রীর জঙ্গলমহলের বুকে শান্তি বজায় রাখার আর্জি।