নিজস্ব প্রতিনিধি: নিম্নচাপের হাত ধরে আড়াই দিনের ধারাপাত রাজ্যের বুকে বেশ কিছু এলাকায় পুজোর মুখে বন্যা ডেকে এনেছে। সেই সব এলাকার মধ্যে অন্যতম হল হুগলি জেলার আরামবাগ মহকুমার খানাকুল এলাকা। সেখানে এদিন দুর্গত মানুষদের উদ্ধারের পাশাপাশি জলবন্দী মানুষদের মধ্যে ত্রাণ বিলির কাজে নেমে পড়লো সেনাবাহিনীর জওয়ানরা। তবে এর মধ্যেই কিছুটা স্বস্তির খবর শুনিয়েছে ডিভিসি। শনিবার সকাল থেকেই দূর্গাপুর জলাধার থেকে জল ছাড়ার পরিমান কমানো হয়েছে। ঘটনাচক্রে এদিনই হাওড়া জেলার উদয়নারায়নপুর ও হুগলি জেলার খানাকুল পরিদর্শন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নিম্নচাপের হাত ধরে এবারে সব থেকে বেশি বৃষ্টি হয়েছে বাঁকুড়া ও পশ্চিম বর্ধমান জেলায়। পাশাপাশি ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হয়েছে ঝাড়খণ্ডের ছোটনাগপুর মালভূমিতেও। তার জেরেই ডিভিসি যেমন জল ছেড়েছে তেমনি জল ছাড়া হয়েছে শিকাতিয়া ও তিলপাড়া জলাধার থেকেও। শিকাতিয়ার জল অজয় দিয়ে বয়ে এসে পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রাম ১ ও ২, মঙ্গলকোট এবং কেতুগ্রাম ২ ব্লকের বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত করেছে। একই সঙ্গে অজয়ের বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বীরভূমের নানুর ব্লকের বিস্তীর্ন এলাকা। তিলপাড়ার জল ময়ূরাক্ষী ধরে নেমে এসে মুর্শিদাবাদের কান্দি মহকুমার বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত করেছে। শিলাবতী, শালি, গন্ধেশ্বরী, বোদাই দিয়ে বাঁকুড়া জেলার জমা জল অনেকটা নেমে গেলেও এই জলেই এখন প্লাবিত হয়েছে বাঁকুড়া জেলার বড়জোড়া, সোনামুখী, পাত্রসায়র ব্লক, পূর্ব বর্ধমান জেলার রায়না ২ ব্লক, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতা ১, চন্দ্রকোনা ১ ও ২, ঘাটাল, কেশপুর, পিংলা ও সবং ব্লক। আংশিক ভাবে প্লাবিত হয়েছে ঝাড়গ্রাম জেলার সাঁকরেল ও নয়াগ্রাম ব্লক, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পটাশপুর, ভগবানপুর, এগরা, ময়না, এলাকার ব্লকগুলি। তবে সব থেকে খারাপ অবস্থা হুগলি জেলার আরামবাগ মহকুমা ও হাওড়া জেলার উদয়নারায়নপুর এলাকা। মূলত দ্বারকেশ্বর ও দামোদরের জলেই প্লাবিত হয়েছে এই এলাকা।
এদিন ডিভিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শনিবার সকাল ৭টা পর থেকে ১ লক্ষ ৫৪ হাজার ৫০০ কিউসেক করে জল ছাড়া হচ্ছে। গতকাল সন্ধ্যায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছিল দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে। সেই হিসাবে এদিন প্রায় ২৫ হাজার কিউসেক করে কমানো হয়েছে জল ছাড়ার পরিমাণ। সকাল ১০টা নাগাদ ১ লক্ষ ৮৯ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছিল। মূলত সেই জলই এখন ডুবিয়েছে আরামবাগ মহকুমা ও উদয়বারায়পুরকে। দুই জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দিগরা এলাকায় দ্বারকেশ্বরের বাঁধ ভেঙে জলমগ্ন হয়েছে আরামবাগ পুরসভার বিস্তীর্ণ এলাকা। আরামবাগ ব্লকে প্রায় ৫ হাজার কাঁচাবাড়ি ভেঙে পড়েছে। ২৫টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে শুধু আরামবাগেই। জলমগ্ন গোঘাটের একাধিক গ্রামও। খানাকুল, জাঙ্গিপাড়াতেও বানভাসি অবস্থা। কোথাও বুক সমান, তো কোথাও মানুষ সমান জল।