নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজনীতি(Politics) সকলের জন্য নয়। সে বড়ই কঠিন খেলা। অনেকটাই চক্রব্যুহের মতো। চক্রে ঢোকা যায়, কিন্তু বেড়িয়ে আসার রাস্তাটা কারোর জানা নেই। তাই রাজনীতিতে যারা পারদর্শী নন, তাঁরা যদি রাজনীতির জগতে পা রাখেন তাহলে একটা সময় দেখা যাবে তিনি যে সব কাজ করছেন, যা সব বলছেন বা কিছু করছেন সবটাই হাস্যকর ভিন্ন আর কিছুই নয়। সেই সব আচরণ না কেউ সমর্থন করছেন না কেউ মেনে চলছেন। কার্যত রাজনীতির মতো মাঠে থেকেও সেই সব ব্যক্তিত্বকে একদম একা হয়ে এককোনে পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। এর সব থেকে বড় উদাহরণ এখন হয়ে উঠেছেন বিনয় তামাং(Binay Tamang)। একসময় যিনি পাহাড়ে বনধের বিরোধিতা করে রাজ্য রাজনীতির উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে উঠে এসেছিলেন এখন তিনি রাজনীতির কানাগলিতে আবদ্ধ হয়ে পাহাড়ে বনধের ডাক দিয়ে বসলেন। আর সেটাও ডাকলেন কবে, না ২৩ ফেব্রুয়ারি যেদিন থেকে রাজ্যে মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। এখন বিনয়ের এহেন কীর্তি দেখে লোকে হাসবে না কাঁদবে সেটাই ভেবে পাচ্ছে না।
আরও পড়ুন স্বাস্থ্যসাথীতে কোন হাসপাতাল কোন ক্ষেত্রে কত পাবে, দেখে নিন
বিনয় তামাং একসময় বিমল গুরুংয়ের(Bimal Gurung) গোর্খা জনমুক্তি মোর্চারই সদস্য ছিলেন। গুরুংয়ের বনধ বিরোধীতা করে পাহাড়(Darjeeling Hill) ও রাজ্য রাজনীতিতে তার উত্থান। কার্যত রাজ্য সরকারের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক তাঁকে রাতারাতি রাজ্য রাজনীতিতে হেভিওয়েট নেতা করে তুলেছিল। অনেকেই ভেবেছিলেন বিনয়ই পাহাড়ের রাজনীতিতে নতুন সকাল নিয়ে আসবেন। কিন্তু গুরুংয়ের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সুসম্পর্ক গড়ে উঠতেই কোনঠাসা হতে শুরু করেন বিনয়। তারপর একের পর এক দলবদল তাঁকে কার্যত রাজনীতিতে কানাগলির বাসিন্দা বানিয়ে দিয়েছেন। এখন তাঁর পাশে না আছে কোনও দল, না আছেন কেউ। সোমবার ‘বঙ্গভঙ্গ বিরোধী প্রস্তাব’ পাশ রয়েছে বিধানসভায়। তার প্রতিবাদে পাহাড়ে আমরণ অনশন শুরু করেছেন GTA বিরোধীরা। সেই অনশনকারীদের মধ্যে রয়েছেন বিনয় তামাং, হামরো পার্টির প্রতিষ্ঠাতা অজয় এডওয়ার্ড-সহ জিটিএ-র ৭ সদস্য। তাঁরা আপাতত ২৪ ঘণ্টার অনশন শুরু করেছেন। দার্জিলিঙের ভানু ভবনের সামনে শুরু হয়েছে তাঁদের অনশন। সেখানে বসেই তাঁরা আগামী আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ বৃহস্পতিবার পাহাড়ে ১২ ঘণ্টার বন্ধের ডাক দিয়েছেন। কিন্তু মজা হচ্ছে তাঁদের অনশন আন্দোলনকে যেখানে পাহাড়ের কেউ পাত্তাও দিচ্ছে না সেখানে বনধ ঢেকে তাঁরা কী পাবেন, সেই প্রশ্নটা ঘুরছে লোকের মুখে মুখে।
আরও পড়ুন দিল্লিতে নিষিদ্ধ Ola, Uber, Rapido – কলকাতায় কী হবে…
পাহাড়ের রাজনীতিতে নিজের প্রভাব প্রতিপত্তি ফিরে পেতে একসময় বিমল গুরুংও আমরণ অনশনে বসেছিলেন। সেদিন কেউ তাঁর সেই অনশনকে পাত্তা দেননি। এখন বিনয় তামাংদের ‘নাটক’কেও কেউ আর পাত্তা দিচ্ছে না। আসলে পাহাড়ের মানুষ এদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ভীষণ ভাবে। তাঁরা এখন উন্নয়ন চান, শান্তি চান। তাই যে ফের পাহাড়কে সামান্যতম উত্তপ্ত করে তোলার চেষ্টা করছেন তাঁকেই শিকড়শুদ্ধো উপড়ে ফেলতে ২ মিনিটের বেশি ৩ মিনিটের সময় নিচ্ছেন না তাঁরা। তা সে তিনি বা তাঁরা পাহাড়ের যতই দাপুটে নেতা হোন না কেন। বিনয় তামাং এখন সেই শিকড় হারা নেতা। ঘটনাচক্রে এদিনই উত্তরবঙ্গ সফরে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। যাচ্ছেন তিনি পাহাড়েও। তার আগে বিনয় দেখিয়ে দিলেন তিনি এক ‘কাগুজে বাঘ’ ব্যতীত আর কিছুই নন।