নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজ্যের ৩ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ফলাফল যে বঙ্গ বিজেপিতে বড়সড় ধাক্কা দিয়ে দেবে সে আশঙ্কা আগেই ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই আশঙ্কাকে সত্যি করেই এবার জগন্নাথ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে সেখানে দলীয় পদ থেকে ইস্তফে দিয়ে দিলেন শান্তিপুর শহর বিজেপির সভাপতি বিপ্লব কর। তৃণমূল যখন শান্তিপুরে তাঁদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দিয়েছে, একরকম প্রচারও শুরু করে দিয়েছে তখন বিপ্লব করের ইস্তফাই বলে দিচ্ছে উপনির্বাচনের ধাক্কায় গেরুয়া শিবির এখন ঠিক কতটা বেহাল দশায় পড়ে গিয়েছে। ভুললে চলবে না জগন্নাথ সরকার শুধু ওই এলাকার সাংসদই নন, তিনিই একুশের নির্বাচনে সেখান থেকে ১৫ হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন। তাঁর ইস্তফা দেওয়ার কারনেই এখন শান্তিপুরে অকাল নির্বাচন হচ্ছে। সেই জগন্নাথের বিরুদ্ধেই বিদ্রোহ খোদ বিজেপির অন্দরে। আর সেটাও উপনির্বাচন যখন দোরে কড়া নাড়ছে।
বিপ্লব করের ইস্তফার ঘটনা সামনে আসতেই রীতিমত অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে নদিয়া জেলা বিজেপি নেতৃত্বকে। তাঁরা এখন বিষয়টিকে লঘু করে দেখাতে চেয়ে জানাচ্ছে, বিপ্লব করের ইস্তফা গৃহীত হয়নি। দলে এই নিয়ে আলোচনা চলছে। যদিও সূত্রে জানা গিয়েছে বিপ্লব করের ওপর রীতিমত চাপ দিতে শুরু করেছে জেলা বিজেপি নেতৃত্ব এই ইস্তফা পত্র ফেরতের জন্য। তবে বিপ্লব ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গিয়েছে সম্ভবত বিজেপি ছেড়ে এবার তিনি পা বাড়াতে চলেছেন তৃণমূলের পথে। তাঁর সঙ্গে আরও বেশ কয়েকজন বিজেপি ছাড়তে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে। নিজের ইস্তফা পত্রে বিপ্লব জানিয়েছেন, দলের সাংসদ জগন্নাথ সরকার দলেরি কর্মীদের প্রতি চূড়ান্ত অবহেলা প্রদর্শন করে চলেছেন। জগন্নাথ জনপ্রতিনিধি হয়েও মানুষের জন্য ঠিকমতো কাজ করছেন না। তিন বছর ধরে সাংসদ হওয়া সত্ত্বেও শান্তিপুরের জন্য তিনি কোনও কাজ করেননি। এমনকী বিধায়ক হয়েও শান্তিপুরের মানুষের কথা না ভেবে তিনি নিজের ইচ্ছামত পদত্যাগ করেছেন। এমন মানুষ যে দলে রয়েছেন, সেই দলে তাঁর পক্ষে থাকা সম্ভব নয়।
বিজেপিতে যখন এই কুরুক্ষেত্র বেঁধে গিয়েছে তাও শান্তিপুরের মতো পবিত্র ভূমিতে তখন বেশ কিছুটা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই সেখানে প্রচারের মাঠে নেমে পড়েছে তৃণমূল। গতকালই তৃণমূল সুপ্রিমো জানিয়ে দেন, শান্তিপুরের ভূমিপুত্র ব্রজকিশোর গোস্বামীই এবার সেখানে দলের প্রার্থী। সেই ঘোষণার পর থেকেই শান্তিপুরের তৃণমূলকর্মীরা ব্রজকিশোরকে নিয়ে প্রচারের মাঠে নেমে পড়েছে। শান্তিপুরে এখনও অবধি কোনওদিনই ঘাসফুল ফোটেনি। পরিবর্তনের এক দশক বাদেও কার্যত কংগ্রেসি শহর হিসাবে পরিচিত শান্তিপুরে এবার তাই ঘাসফুল ফোটাতে মরিয়া হ্যে উঠেছেন স্থানীয় তৃণমূলকর্মীরা। সন্দেহ নেই, এই পবিত্র বৈষ্ণব তীর্থভূমে বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী বাড়ির বংশধর ব্রজকিশোর গোস্বামীকে প্রার্থী করে তৃণমূলনেত্রী কার্যত মাস্টারস্ট্রোক দিয়ে বসে আছেন। ৩২ বছরের ব্রজকিশোর গোস্বামী অদ্বৈত আচার্যের বংশধর। শান্তিপুরের বিগ্রহ বাড়িগুলির সঙ্গে তার আন্তরিক যোগাযোগ রয়েছে। রাজনৈতিক জগতের এহেন নতুন মুখকে প্রার্থী করে এখন বিজেপির জেতা আসনে তৃণমূল যে যুদ্ধ শুরুর আগে অনেকটাই এগিয়ে গেল সে নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।