চন্দননগর: তৃণমূলের বিদায়ী মন্ত্রী বনাম বিজেপির রাজ্য সম্পাদকের লড়াই
Share Link:

নিজস্ব প্রতিনিধি: চন্দননগর বললেই আপামর বাঙালির চোখে ভেসে ওঠে জগদ্বাত্রী পুজোর ছবিই। চাউলপট্টির আদি মা থেকে শুরু করে নিত্যনতুন থিমের পুজো, আজও প্রধান আকর্ষণ আলোর সাজসজ্জা। তবে একসময় এই চন্দননগরের নাম ছিল ফরাসডাঙা। ফরাসিদের উপনিবেশ ছিল এটি। যে কারণে স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় বিল্পবীরা নিরাপদ আশ্রয় পেত ফরাসডাঙায়। ১৯১১ সালে মতিলাল রায়ের প্রবর্তক সংঘর ভেতর প্রথম পরীক্ষা করা হয়েছিল রাসবিহারী বসুর বোমাটি। যা পরে নিক্ষেপ করা হয় বড়লাট হার্ডিঞ্জ-এর ওপর। ঋষি অরবিন্দও এখানে কিছুদিন আত্মগোপন করে থাকার পর পুদুচেরী গিয়েছিলেন। কলকাতার মতোই চন্দননগরেও আছে স্ট্র্যান্ড রোড, বড়বাজার, বাগবাজার, বউবাজার। ফরাসি আমলে চন্দননগরের প্রভূত উন্নতি হয়। আজও রাস্তাঘাট, নিকাশি সবেতেই ফরাসি দক্ষতার পরিচয় পাওয়া যায়। এই চন্দননগরই একুশের বিধানসভা নির্বাচনের চতুর্থ দফার অন্যতম নজরকাড়া কেন্দ্র। রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী করেছে বিদায়ী বিধায়ক ইন্দ্রনীল সেনকে। অন্যদিকে বিজেপির রাজ্য সম্পাদক দীপাঞ্জন কুমার গুহকে প্রার্থী করেছে দল। সংযুক্ত মোর্চার পার্থী সিপিএমের গৌতম সরকার পেশায় শিক্ষক। একনজরে দেখে নেওয়া যাক, চন্দননগরে কোন দলের প্রার্থী কে...
তৃণমূল কংগ্রেস----------------------- ইন্দ্রনীল সেন
বিজেপি------------------------------- দীপাঞ্জন কুমার গুহ
সংযুক্ত মোর্চা (সিপিএম)-------------- গৌতম সরকার
চন্দননগর পুরসংস্থা এবং ভদ্রেশ্বর পুরসভা নিয়ে গঠিত চন্দননগর বিধানসভা কেন্দ্রটি। এটি হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। ১৯৫৭ সালে প্রথমবার নির্বাচন হয় এই কেন্দ্রে। বিধায়ক হয়েছিলেন নির্দল প্রার্থী হিরেন্দ্রকুমার চট্টোপাধ্যায়। তারপর ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এই কেন্দ্রের দখল ছিল বামেদের হাতে। মাঝে দু'বার কংগ্রেস জিতলেও ২০০৬ সালে ফের সিপিএম জেতে। ২০১১ সাল থেকে চন্দননগরেও জিতছে তৃণমূল কংগ্রেস। একনজরে দেখে নিন, চন্দননগরের অতীতে বিধায়ক কারা ছিলেন...
নির্বাচনের বছর | বিধায়ক | রাজনৈতিক দল |
১৯৫৭ | হিরেন্দ্রকুমার চট্টোপাধ্যায় | নির্দল |
১৯৬২ | ভবানী মুখোপাধ্যায় | সিপিআই |
১৯৬৭ | ভবানী মুখোপাধ্যায় | সিপিএম |
১৯৬৯ | ভবানী মুখোপাধ্যায় | সিপিএম |
১৯৭১ | ভবানী মুখোপাধ্যায় | সিপিএম |
১৯৭২ | ভবানী মুখোপাধ্যায় | সিপিএম |
১৯৭৭ | ভবানী মুখোপাধ্যায় | সিপিএম |
১৯৮২ | ভবানী মুখোপাধ্যায় | সিপিএম |
১৯৮৭ | সন্ধ্যা চট্টোপাধ্যায় | সিপিএম |
১৯৯১ | সন্ধ্যা চট্টোপাধ্যায় | সিপিএম |
১৯৯৬ | কমল মুখোপাধ্যায় | জাতীয় কংগ্রেস |
২০০১ | কমল মুখোপাধ্যায় | জাতীয় কংগ্রেস |
২০০৬ | শিবপ্রসাদ বন্দোপাধ্যায় | সিপিএম |
২০১১ | অশোককুমার সাউ | তৃণমূল কংগ্রেস |
২০১৬ | ইন্দ্রনীল সেন | তৃণমূল কংগ্রেস |
২০১১ সালে সিপিএম প্রার্থী শিবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ৪৩ হাজার ৩৯ ভোটে হারিয়ে চন্দননগরের বিধায়ক হয়েছিলেন অশোককুমার সাউ। ২০১৬ সালে অবশ্য সিপিএমের গৌতম সরকারকে মাত্র ২ হাজার ১১৪ ভোটে হারিয়ে বিধায়ক হয়েছিলেন ইন্দ্রনীল সেন। তাঁকে মন্ত্রীও করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে হুগলি থেকে বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায় জিতলেও চন্দননগরে ২ হাজার ৮৭৫ ভোটে এগিয়ে ছিল তৃণমূলই। আর সেই ফলাফলই বিধানসভায় ফের একবার জেতার আশা জোগাচ্ছে শাসকদলকে। একনজরে দেখে নিন, গত লোকসভার ফলাফলে চন্দননগরে কোন দল কত ভোট পেয়েছিল...
রাজনৈতিক দল | প্রার্থী | প্রাপ্ত ভোট |
বিজেপি | লকেট চট্টোপাধ্যায় | ৬৮৩২১ |
তৃণমূল কংগ্রেস | রত্না দে নাগ | ৭১১৯৬ |
সিপিএম | প্রদীপ সাহা | ২৩৪৬০ |
ব্যবধান কম হলেও তৃণমূল কার্যত চন্দননগরে জয় নিয়ে নিশ্চিত। তবে বিজেপি এবার সরকার গড়তে মরিয়া। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেছেন, দু'শোর বেশি আসন নিয়ে বাংলায় সরকার গড়বে বিজেপি। আর তাই, প্রতিটি সম্ভাবনাময় আসনে শক্তিশালী প্রার্থী দিয়েছে। ঠিক যেভাবে চন্দননগরে প্রার্থী করা হয়েছে দলের রাজ্য সম্পাদককে। এলাকায় দীপাঞ্জন গুহর জনপ্রিয়তাও রয়েছে। অন্যদিকে গতবারের রানারস-আপ গৌতম সরকারও জয় নিয়ে আশাবাদী। তাঁকে রসদ জোগাচ্ছে কংগ্রেস ও আইএসএফের ভোটব্যাঙ্ক। তবে কে জিতবেন, তা জানা যাবে ২ মে ভোটের ফলাফলে।
Leave A Comment