নিজস্ব প্রতিনিধি: একুশের নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসেনি। ২০০ আসন পার করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হলেও দলের চাকা থেমে গিয়েছিল ৭৭ ছুঁতে না ছুঁতেই। সেই জায়গাও ধরে রাখতে পারেনি বঙ্গ বিজেপি। দলে ক্রমাগতই চলেছে রক্তক্ষরণ। একের পর এক বিধায়ক দল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। এই অবস্থায় বদল ঘটেছে বঙ্গ বিজেপির সভাপতি পদেও। সরেছেন দিলীপ ঘোষ, এসেছেন সুকান্ত মজুমদার। দলের রাজ্য সভাপতির এই বদলের জেরেই এবার বাংলার বুকে দলের সাংগঠনিক ক্ষেত্রে বেশ বড় কিছু রদবদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সেই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতেই এদিন জরুরী ভিত্তিতে দিল্লিতে তলব করা হয়েছে বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন ও বর্তমান সভাপতিকে। সেই তলবে সাড়া দিয়ে দিল্লির পথে পা বাড়িয়েছেন দিলীপ ও সুকান্ত। এদিন রাতেই বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার বাড়িতে বৈঠক বসতে চলেছে তাতে নাড্ডা, সুকান্ত আর দিলীপ ছাড়াও থাকতে পারেন অমিত শাহ।
দিলীপ ঘোষ একুশের বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর থেকেই দাবি করে আসছিলেন এবার বঙ্গ বিজেপির সংগঠনে বিশেষ ভাবে নজর দেওয়া উচিত। এর কারন হিসাবে তিনি তুলে ধরেছিলেন দলে অনেক নতুন যোগ্য নেতা উঠে আসা, পুরাতন অনেক নেতার বসে যাওয়া, আদি কিছু নেতাকর্মীকে বাড়তি গুরুত্বপ্রদান ও সর্বোপরি কর্মদক্ষতা দেখে পদ প্রদানের মতো বিষয়গুলি। পাশাপাশি একথাও বলেছিলেন বিজেপি বাংলার ক্ষমতা দখল করতে না পারলেও এখন তাঁরাই বাংলার বিরোধী দল। ২০১৬ সালে যা ছিল মাত্র ৩ সেটাই এই ৫ বছরে বেড়ে হয়েছে ৭৭। তাই দলকে এবার ভবিষ্যতের কথা ভেবে সংগঠন সাজাতে হবে। বলা বাহুল্য দিলীপবাবুর এই দাবির কয়েক মাসের মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সবার আগে তাঁকেই তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে। সেই পদে এসেছেন সুকান্ত। এদিন দুইজনকেই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তলব করেছেন বঙ্গ বিজেপির সাংগঠনিক রদবদল নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে। লক্ষ্যণীয় বিষয় সেই বৈঠকে কিন্তু ডাক পাননি বাংলার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। যদিও দিলীপ সরতেই বাংলা জুড়ে মোটামুটি একটা ধারনা ছড়িয়ে পড়েছিল যে, শুভেন্দু এবার বঙ্গ বিজেপিতে খোলা হাতে ব্যাট চালাবেন। কিন্তু দিল্লির বৈঠকে তাঁর ডাক না পাওয়া বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। সন্দেহ থাকছে শুভেন্দু আগামী দিনে কতখালি খেলার সুযোগ পাবেন তা নিয়েও।
রাজ্য বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বিজেপির সাংগঠনিক সে রদবদল হতে পারে এই রাজ্যে তাতে দুটি বড় পরিবর্তন ঘটতে পারে। এক লকেট চট্টোপাধ্যায়কে রাজ্যের সংগঠনে বড় পদ দেওয়া হতে পারে এবং সোউমিত্র খাঁকে দলের যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতির পদ থেকে সরানো হতে পারে। এর পাশাপাশি দলের সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেতে পারেন দেবশ্রী চৌধুরী। তবে পদ হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে বিজেপির মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী অগ্নিমিত্রা পালের। দলের সংগঠনে গুরুত্ব বাড়তে পারে রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের, তবে ধাক্কা খেতে পারেন সায়ন্তন বসু। তবে এসবই অনুমান, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে আজকের বৈঠকে। মনে করা হচ্ছে দিলীপ লবিকে যতটা সম্ভব কম ধাক্কা দিয়েই এই সাংগঠনিক রদবদল সেরে ফেলতে চান শাহ-নাড্ডা।