নিজস্ব প্রতিনিধি, রায়গঞ্জ: অবশেষে বিজেপির সঙ্গে সব সম্পর্ক ত্যাগ করলেন রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী। শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলন করে সাফ জানিয়ে দিলেন, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী সঙ্গে একই দলে তাঁর পক্ষে আর কাজ করা সম্ভব নয়। এদিকে দলের তরফে দাবি করা হয়েছে, বিভিন্ন দলবিরোধী কার্যকলাপের জন্য বৃহস্পতিবার তাঁকে শোকজ করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি তার কোনও উত্তর দেননি।
বিধানসভা নির্বাচনের পর যখন একে একে বিজেপি বিধায়ক তৃণমূলে নাম লেখানো শুরু করেছে, ঠিক সেই সময় প্রথমবারের জন্য বেসুরো মন্তব্য শোনা গিয়েছিল রায়গঞ্জের বিধায়কের মুখে। একইসঙ্গে তৎকালীন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও দেবশ্রী চৌধুরীর বিরুদ্ধে আক্রমণ শাণিয়েছিলেন তিনি। জেলা সংগঠনে তাঁর গুরুত্ব ক্রমশ কমিয়ে দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। জানিয়ে দিয়েছিলেন, দলের সমস্ত কর্মসূচি থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন তিনি। জেলা সভাপতি বাসুদেব সরকারের বিরুদ্ধেও একরাশ ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছিলেন কৃষ্ণ কল্যাণী। এরমাঝে দিল্লি গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাতেও কোনও সমাধান খুঁজে না পেয়ে অবশেষে বিজেপি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে কৃষ্ণ কল্যাণী বলেন, ‘সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী এলাকা থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছেন। তিনি আবার আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। মীরজাফরের মতো পেছন থেকে আমার পিঠে ছুড়ি মারবে আমি সেটা মেনে নেব না। আর তাই তিনি যে দলে, সেই দলে আমি থাকতে পারি না।’
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে রায়গঞ্জে গিয়েছেন সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী। দীর্ঘক্ষণ সেখানে দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। মনে করা হচ্ছে, ওই বৈঠকেই কৃষ্ণ কল্যাণীকে শোকজের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উত্তর দিনাজপুর জেলা বিজেপির সভাপতি বাসুদেব সরকার জানান, দলবিরোধী কার্যকলাপের জন্য বৃহস্পতিবার শোকজের নোটিস পাঠানো হয় বিধায়ককে। যদিও কৃষ্ণ কল্যাণীর দাবি, তিনি কোনও আইনি নোটিস পাননি। বরং দল শোকজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কয়েকঘণ্টার মধ্যেই বিজেপি ছাড়লেন কৃ্ষ্ণ কল্যাণী।
উল্লেখ্য, বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের থেকেই ভাঙন শুরু হয়েছে বিজেপিতে। শুধু কর্মী নন, একাধিক তাবড় তাবড় নেতা দল ছেড়ে যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। এনিয়ে বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যকে প্রশ্ন করা হলে, তিনি জানিয়েছিলেন ‘চারজন বিধায়ক তৃণমূলে গিয়েছেন, এখন ৭৩ জন বিধায়ক তালিকায় আছেন।’ সেদিনই অনেকটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল অবশিষ্ট বিধায়কদের নিয়ে স্বস্তিতে নেই বঙ্গ বিজেপি। তবে এবার কৃষ্ণ কল্যাণী তৃণমূলে যোগ দেন কিনা, সেটাই দেখার।