নিজস্ব প্রতিনিধি: সম্প্রতি উপগ্রহ চিত্রে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ময়না ব্লকের চণ্ডিয়া নদীর পাড়ে খনিজ তেলের সন্ধান মিলেছে। সেই বিষইয়ে নিশ্চিত হতেই ওএনজিসি কর্তৃপক্ষ ময়না ব্লকের সুদামপুর গ্রাম সংলগ্ন চণ্ডিয়া নদীর পাড়ে খননও শুরু করেছে। তবে কেবল ময়না ব্লকেই নয়, চণ্ডিয়া নদীর দুই তীরেই খনিজ তেল মজুত থাকার ছবি ধরা পড়েছে উপগ্রহ চিত্রে। তাই পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া চণ্ডিয়া নদীর পাড়ে মোট ৮টি পয়েন্ট চিহ্নিত করে বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে মাটি খোঁড়ার কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে সমস্যা তৈরি হয়েছে ময়নাতেই। কেননা সুদামপুর গ্রাম সংলগ্ন চণ্ডিয়া নদীর পাড়ে খনন করে খনিজ তেলের সন্ধান করতে গিয়ে চাষজমির ক্ষতি হয়েছে। কার্যত তার জেরেই এখন মাথায় হাত পড়েছে স্থানীয় কৃষকদের। যদিও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা রয়েছে তবুও কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
জানা গিয়েছে, শীতকালে চণ্ডিয়া নদীর দুই ধারেই সর্ষে ও বিভিন্ন ধরনের শাকসবজির চাষ হয়ে থাকে৷ খনিজ তেলের সন্ধান করতে গিয়ে স্বাভাবিকভাবেই এই সমস্ত চাষের ক্ষতি হচ্ছে। ফলে দুঃস্থ প্রান্তিক চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় কৃষকদের একাংশ৷ ওএনজিসি কর্তৃপক্ষের তরফে সংস্থার আধিকারিকেরা অবশ্য জানিয়েছেন, খনন করতে গিয়ে চাষের ফসল বা জমির কোনও ক্ষতি হলে সংস্থার তরফে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে জমির মালিক ও কৃষকদের। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও পঞ্চায়েতের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করা হচ্ছে বলেও ওএনজিসি কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে। কিন্তু কৃষক থেকে জমির মালিকদের ক্ষোভ ছড়িয়েছে মূলত ক্ষতিপূরণের পরিমান নিয়ে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক থেকে জমির মালিকদের দাবি, ওএনজিসি যে পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে তা ক্ষতির তুলনায় কিছুই নয়।
কৃষকদের এই ক্ষোভের আঁচ পেয়েছেন জেলাশাসকও। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি চণ্ডিয়া নদীর পাড়ে খনিজ তেলের সন্ধানে মাটি খননের বিষয়টি জানেন। কিন্তু তিনি নিশ্চিত নন আদৌ সেখানে খনিজ তেল মজুত রয়েছে কিনা। তাই কৃষকদের ক্ষোভের কথা কানে যেতেই জেলা প্রশাসনের তরফে ওএনজিসি’র তরফে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে খননের জেরে চাষ ও চাষের জমির ক্ষয়ক্ষতির পরিমানও জানতে চাওয়া হয়েছে কৃষক ও জমির মালিকদের কাছ থেকে। খোঁজ নেওয়া হচ্ছে ওএনজিসি কতটা ক্ষতিপূরণ দেবে তা নিয়েও। তবে সুদামপুর গ্রামের চাষীদের দাবি, ওএনজিসি কর্তৃপক্ষ যতটা জমি নিয়ে পরীক্ষা করার কথা তাঁদের বলেছিল তার থেকে অনেকটা বেশি জমি নিয়েই খনন করছে। আর তার জেরেই তাঁদের মাঠের ফসল সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এই ফসল বিক্রি করেই তাঁদের সারা বছরের সংসার চলে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমান লাখ টাকার ওপর, অথচ সেখানে ওএনজিসি মাত্র ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলেছে। আর এই নিয়েই এখন ক্ষোভ চড়ছে ময়না ব্লকের সুদামপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়।