27ºc, Haze
Wednesday, 29th March, 2023 12:12 am
সুব্রত রায়: কাতারে বিশ্বকাপ ঘিরে উন্মাদনা গোটা বিশ্ববাসীর পাশাপাশি কলকাতাবাসীর। বছর কয়েক আগে এই কাতারে বসেই বাংলাদেশে তোলাবাজি করত সেদেশের ত্রাস তথা কুখ্যাত অপরাধী নুর উন লতিফ নবি। অপরাধ জগতে যে পরিচিত ছিল ‘ম্যাক্সন’(Maxcon) নামে। অনেকে তাকে বলত ‘জঙ্গি নেতা’। তোলাবাজির দুনিয়ায় সে ছিল অন্যতম ডন ।কাতার থেকে চোরাপথে কলকাতায় এসে লিভ ইন শুরু করেছিল এক যুবতীর সঙ্গে। কলকাতায় গ্রেফতারির পর পেয়েছিল জামিন। সম্প্রতি দক্ষিণ শহরতলির হরিদেবপুরে থাকত ওই বান্ধবীর সঙ্গে। ওই বান্ধবীও বিবাহিতা ছিলেন। মঙ্গলবার বেশি রাতে ঘরের ভিতর থেকে তার দেহ উদ্ধার করেন ওই যুবতী। গলায় ছিল দোপাট্টার ফাঁস। এই মৃত্যু ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে রহস্য। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের ধারণা, আত্মঘাতী হয়েছে ম্যাক্সন। জামিন পাওয়ার পর হাতে কোনও কাজ ছিল না তার। তাই বান্ধবীর রোজগারের ওপরই নির্ভর হয়ে ছিল সে। মাদক সেবন নিত্যকার অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আর তা নিয়েই যুগলের মধ্যে গোলমাল বাধত। বান্ধবীর সঙ্গে গোলমালের জেরে সে আত্মঘাতী(Suicide) হয়েছে, এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না পুলিশ।
বাংলাদেশের (Bangladesh)সংগঠন ইসলামি ছাত্র শিবিরের সঙ্গে যুক্ত ছিল ম্যাক্সন। বাংলাদেশে তোলাবাজি থেকে শুরু করে অস্ত্র সরবরাহ, বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিল সে। বাংলাদেশ থেকে পলাতক অপরাধী করোনা পরিস্থিতির আগেই মধ্য প্রাচ্যের কাতার থেকে চোরাপথে ভারতে প্রবেশ করে। চলে আসে কলকাতায়। নিজেকে নিউ মার্কেটের মাছের ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দিয়ে এক যুবতীর সঙ্গে বন্ধুত্ব করে। লকডাউনের সময় থেকে তাঁর সঙ্গেই লিভ টুগেদার শুরু করে ম্যাক্সন। ভোল পাল্টে লতিফ নবি হয়ে যায় তমাল চৌধুরি। ওই নামেই ভুয়া পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট তৈরি করে সে। বাংলাদেশের চট্টগ্রামের পুলিশ ও র্যাবের কাছ থেকে গোপনে খবর পেয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ডানলপের কাছ থেকে তাকে গ্রেফতার করে বরানগর থানা ও সিআইডি(CID)। বাংলাদেশি ওই যুবকের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশ, জালিয়াতি, প্রতারণার অভিযোগ দায়ের হয়। প্রথমে পুলিশ ও জেল হেফাজতে থাকে। এর কয়েক মাস পর বারাকপুরের আদালতস থেকে জামিনও পেয়ে যায় সে।
এর পর সে ডানলপের(Dunlop) ডেরা পাল্টে বান্ধবীকে নিয়ে গত এপ্রিল থেকে হরিদেবপুরের মতিলাল গুপ্ত রোডে ভাড়া বাড়িতে থাকতে শুরু করে। তখন থেকে বাংলাদেশ পুলিশও তাকে খুঁজছিল। বেকার অবস্থায় মাদক নিতে থাকে সে। তার বান্ধবী বরানগরের একটি শপিং মলে চাকরি করেন। গত এক সপ্তাহ ধরে মানসিক অবসাদে ভুগছিল। বান্ধবীর সঙ্গে একাধিকবার গোলমালও করে। মাদক নিতে বারণ করা হলেও কর্ণপাত করত না। মঙ্গলবার সকালে ওই যুবতী কাজে বের হন। রাত ন’টা নাগাদ বাড়ি ফিরে দেখেন দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। অনেকক্ষণ ধরে কোনও সাড়া না পাওয়ায় এলাকার বাসিন্দাদের সাহায্যে তিনি দরজার লক ভাঙেন। দেখেন, ঘরের মেঝেয় পড়ে রয়েছে ম্যাক্সন। তার গলায় দোপাট্টার ফাঁস বাধা ।আর ওই দোপাট্টার বাকি ছেঁড়া অংশ ঝুলছে সিলিং ফ্যান থেকে। রাতেই এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। দেহ ময়নাতদন্ত করা হয়। মৃত্যুর খবর বাংলাদেশে পাঠানো হয়।
২০১১ সালে চট্টগ্রামের (Chattagram)ব্রাহ্মণবেড়িয়া থেকে ম্যাক্সন ও বায়াজিদ থেকে সারোয়ার এবং গিত্তু মানিককে র্যাব গ্রেফতার করে। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় একে ৪৭ ও প্রচুর বুলেট। সারোয়ার ও ম্যাক্সন চট্টগ্রামের জেলে বসেই তোলাবাজি চালাত। ২০১৭ সালে সারোয়ার, ম্যাক্সন জামিন পাওয়ার পর চোরাপথে কাতার পালায়। চট্টগ্রামের স্কুলছাত্রী খুনের অভিযুক্ত সঙ্গী এক্রামও তাদের পিছু নেয়। কাতারে বসে বাংলাদেশে ক্রমাগত তোলাবাজি করতে থাকে। এক গাড়ি ব্যবসায়ী টাকা দিতে না চাইলে তাঁর বাড়ির সামনে ম্যাক্সনের অনুগামীরা বোমা ছোড়ে। সেই অভিযোগে গ্রেফতার হয় পাঁচজন। এর পর কাতার পুলিশের হাতে ধরা পড়ার ভয়ে লকডাউনের আগে কলকাতায় পালিয়ে আসে ম্যাক্সন। তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে তদন্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এদিকে হরিদেবপুরে জঙ্গির দেহ উদ্ধার হওয়ার পর সোরগোল পড়ে গিয়েছে প্রশাসনিক মহলে।
হরিদেবপুর থানা(Haridabpur P.S.) অন্তর্গত মতিলাল গুপ্ত রোডে ম্যাক্সন নামে জঙ্গি কি করে নাম বদলে আত্মগোপন করেছিল তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, এর আগে সিআইডি তাকে গ্রেফতার করেছিল। বাংলাদেশের একটি জঙ্গি দলের সাথে তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। তবে ৮ এপ্রিল তিনি ছাড়া পান এবং পরবর্তীকালে তিনি জীবনের মূল শোতে ফেরার চেষ্টা করেছিলেন। এখানে তিনি কিছুদিন হল এসেছিলেন এর আগে আরো দু-তিন জায়গাতে তিনি ভাড়া ছিলেন। স্থানীয় লোকের বক্তব্য এই ফ্ল্যাটে অনেকেরই যাতায়াত ছিল ।