নিজস্ব প্রতিনিধি: গত সপ্তাহ দুয়েক জুড়ে রাজ্য রাজনীতিতে জল্পনা ছড়িয়েছে যে খুব শীঘ্রই দলবদল করতে চলেছেন হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। সোম সকালে সেই জল্পনাকে আরও উস্কে দিলেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। এদিন তিনি টুইট করে লকেটকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিজেপি নেতাদের শত অনুরোধেও ভবানীপুরে এসে প্রচার না করার জন্য। যেহেতু ভবানীপুরে তৃণমূলের প্রার্থী স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর লকেটকে তাঁর বিরুদ্ধেই প্রচারের জন্য বলা হয়েছিল, তাই এখন কুণালের টুইটই কার্যত বলে দিচ্ছে লকেট মমতার বিরুদ্ধে প্তহে নামতে নারাজ। কার্যত তাঁর এই অবস্থানই বলে দিচ্ছে যা রটে তার কিছু তো ঘটে। এখন কী ঘটে আর কবে ঘটে তা দেখার জন্য বঙ্গবাসীকে অবশ্যই অপেক্ষা করতে হবে।
ভবানীপুর উপনির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়ালের হয়ে প্রচার করার জন্য ‘তারকা প্রচারক’দের তালিকায় নাম ছিল হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের। কিন্তু গেরুয়া শিবিরের হেভিওয়েট নেতাদের শত অনুরোধ এলেও ভবানীপুরে প্রচারে আসেননি লকেট। এদিনই উপনির্বাচনের প্রচারের শেষ দিন। অথচ এখনও পর্যন্ত লকেট মমতাঁর বিরুদ্ধে প্রিয়াঙ্কার হয়ে প্রচারের জন্য ভবানীপুরে পাও রাখেননি। আর তার পরে পরেই এদিন সকালে কুণালের টুইট নতুন করে বঙ্গ রাজনীতিতে লকেটকে ঘিরে জল্পনা উস্কে দিল। তবে এই বিষয়ে লকেট এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। তবে রাজ্য বিজেপির সূত্রে জানা গিয়েছে, একুশের বিধানসভা নির্বাচনে লকেটের সংসদীয় কেন্দ্র হুগলি থেকে বিজেপি একটি আসনেও জয়লাভ করতে পারেনি। আর তাঁর জেরেই দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাঁকে বাংলা থেকে উত্তরাখণ্ডে সরিয়ে দিয়েছে দলের হয়ে প্রচার করার জন্য। কিন্তু এই বিষয়টিই ভালো ভাবে নেননি লকেট। অন্তত তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে তেমনটাই জানা যাচ্ছে।
রাজ্য বিজেপি সূত্রে এটাও জানা গিয়েছে, লকেটকে ভবানীপুর উপনির্বাচনে মমতার বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে। কিন্তু লকেট তাতে সাড়া দেননি। পরে তিনি ভবানীপুরে প্রচারেও এলেন না। আর তাঁর জেরেই এদিন কুণাল করলেন টুইট। লিখলেন, ‘ভবানীপুরে প্রচারে না আসায় তারকা প্রচারক লকেট চট্টোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। বিজেপি-র অনেক অনুরোধ সত্ত্বেও আপনি প্রচার করেননি। আপনি যেখানেই থাকুন বন্ধু হিসাবে আপনার সাফল্য কামনা করি। পৃথিবী খুব ছোট। আশা করছি আপনার রাজনীতি শুরু করার দিনগুলি আবার ফিরে আসুক।’ আর এখানেই উঠছে প্রশ্ন। ‘আপনার রাজনীতি শুরু করার দিনগুলি আবার ফিরে আসুক’ বলতে কুণাল ঠিক কী ইঙ্গিত দিলেন? লকেট কী তাহলে ফের ফিরছেন তৃণমূলে। ভুললে চলবে না তৃণমূলে যোগ দিয়েই লকেটের যেমন রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয়েছিল ঠিক তেমনি গতবছর লকেট কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পরে তাঁকে ফোন করে তাঁর খবরাখবর নেন স্বয়ং তৃণমূলনেত্রী। সেই ঘটনা ছিল ‘বড় দিদির’ মতো অভিভাবক সুলভ পদক্ষেপ যা বঙ্গ রাজনীতিতে সাড়া ফেলে দিয়েছিল। অনেকেই মনে করেন কার্যত সেই সময় থেকেই লকেটের তৃণমূলে প্রত্যাবর্তনের সলতে পাকানো শুরু হয়ে গিয়েছিল তৃণমূলে। বিজেপির তরফে এখনও লকেটকে দলে ধরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিছুদিন আগে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা নিজে লকেটের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেছিলেন। কিন্তু তাতে যে চিঁড়ে ভেজেনি সেটা এদিন বুঝিয়ে দিল কুণালের টুইট।