নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলার(Bengal) হাসপাতাল(Hospital) থেকে মাঝেমধ্যেই রোগী উধাও(Patient Missing) হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। কিন্তু তা বলে ১টি হাসপাতাল থেকে ১ বছরের মধ্যে ৭০০’রও বেশি রোগী উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনা কখনও শুনেছেন কী? বাংলা কেন, ভারতের কোনও হাসপাতালে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে শোনা যায়নি। কিন্তু এই ঘটনাই ঘটেছে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে(Durgapur SDH)। নিখোঁজ রোগীর সংখ্যা সেখানে একবছরের মধ্যেই প্রায় হাজার ছুঁই ছুঁই। ইদানীং বেডে রোগীকে খুঁজে না পেলে আর অবাক হন না সেখানকার চিকিৎসক, নার্স বা হাসপাতালকর্মীরা। সরকারি হাসপাতাল থেকে এভাবে নিয়মিত রোগী নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় অস্বস্তি বাড়ছে পশ্চিম বর্ধমান(Paschim Burdhwan) জেলা প্রশাসনেরও। আরও মজার কথা, রোগী নিখোঁজের ঘটনায় কখনই পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ দায়ের করেন না রোগীর পরিজনেরা। নিয়মিত ভাবে সেই কাজ করতে হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
আরও পড়ুন মমতার অপেক্ষায় প্রহর গুণছে শিলিগুড়ি
জানা গিয়েছে, দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ রোগী চিকিৎসা করাতে আসেন। দুর্গাপুর মহকুমার বিভিন্ন ব্লক ছাড়াও বীরভূমের ইলামবাজার ও বাঁকুড়া জেলার বড়জোড়া ব্লকের রোগীরা এই হাসপাতালে আসেন চিকিৎসা করাতে। আবার বর্তমানে হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিদিন প্রায় ২০০ রোগী জরুরি বিভাগের মাধ্যমে ভর্তি হয়ে থাকেন। দেখা যাচ্ছে এই ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যেই প্রতিদিন কেউ না কেউ গা ঢাকা দিচ্ছেন। অভিযোগ। হাসপাতাল গেটে নিরাপত্তারক্ষীরা উপস্থিত থাকেন ২৪ ঘণ্টা। রয়েছে সিসি ক্যামেরাও। তবুও নানা বাহানায় রোগীরা হাসপাতালের বাইরে বেরিয়ে পড়েন। প্রায় সুস্থ হয়ে ওঠা বা স্বল্প শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে পালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা বেশি বলে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, সরকারিভাবে রেজিস্ট্রেশন করে ভর্তি হওয়ায় রোগীদের এই আচরণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন হাসপাতালের কর্মীরা এবং কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালে থাকতে ভালো না লাগলে রোগীরা ছুটি নিয়ে অন্যত্র যেতেই পারেন। কিন্তু সেটা জানিয়ে যেতে অসুবিধা কোথায়!
আরও পড়ুন সমপ্রেমের সম্পর্কের টানাপোড়নেই খুন বরানগরে, সন্দেহ পুলিশের
তবে একদম হাত গুটিয়ে বসে থাকছেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। শুরু হয়েছে হাসপাতাল চত্বর ও আশেপাশের এলাকায় পোস্টারের মাধ্যমে রোগী ও পরিজনদের এই বিষয়ে সতর্ক করার পদক্ষেপ। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়া যে একধরনের অপরাধ সেটা তাঁদের জানানো হচ্ছে। পোস্টার দিয়ে প্রচারের পরেও যদি ছবিটা না বদলায় তাহলে পুলিশকে কড়া পদক্ষেপ নিতে বলবেন তাঁরা। এই প্রসঙ্গে হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান কবি দত্ত জানিয়েছেন, মহকুমা হাসপাতালে উন্নতমানের চিকিৎসার প্রায় সবরকম ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু রোগীরা পালিয়ে যাওয়ায় হাসপাতালের বদনাম হচ্ছে। এই প্রবণতা রুখতে আমরা পোস্টার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু তাতেও যদি পরিস্থিতি না বদলায় তাহলে আমরাও পুলিশকে বলতে বাধ্য হবো পলাতক রোগীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে। পালিয়ে যাওয়া রোগীদের জন্য হাসপাতালে অস্বস্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি হচ্ছে, একথা স্বীকার করছেন হাসপাতালের চিকিৎসকেরাও। তাঁদের দাবি, ‘আমরা নজরদারি চালালেও রোগীদের পালানো থামছে না। এক বছরে প্রায় সাতশোর বেশি রোগী অনুমতি না নিয়েই হাসপাতাল ছেড়েছেন। আমাদের ওই রোগীদের বিরুদ্ধে প্রতিদিনই নিউ টাউনশিপ থানার পুলিসকে তথ্য পৌঁছতে হয়। কিন্তু ওই নিখোঁজ রোগীদের পরিবারের লোকজন কোনও অভিযোগ জানান না আমাদের কাছে। আমাদের ধারণা, অধিকাংশ রোগীই বাড়ি চলে যান। আর সেটাও আমাদের না জানিয়ে।’