নিজস্ব প্রতিনিধি: ভোটের ফলাফল সামনে আসতেই জল্পনা ছড়িয়েছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই জল্পনা আরও বেড়েছে বই কমেনি। শহরের আমজনতার সিংহভাগই চাইছেন শহরের বিধায়কের হাতেই যাক শহরের উন্নয়নের ভার। কিন্তু তাতে সায় নেই রাজ্যের শাসক দলের। কেননা শহরেরই বাসিন্দারা শাসক দলের হাতে শহরের সিংহভাগ ওয়ার্ড তুলে দিয়েছেন। তাই কোনও মতেই ভিন্ন দলের কাউকে ভাড়া করে এনে শহরের পুরপ্রধান করা হবে না। কেননা সেক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠবে হরেক। তাই যা জল্পনাই ছড়াক না কেন, পুরপ্রধান হবেন দলেরই কোনও কাউন্সিলর। আর সেক্ষেত্রে কোনও মহিলা কাউন্সিলরের পুরপ্রধান হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। নজরে খড়গপুর(Kharagpur) পুরসভা।
খড়গপুর পুরসভা আগে তৃণমূলের দখলেই ছিল। প্রদীপ সরকার ছিলেন সেই পুরবোর্ডের চেয়ারম্যান। এবারেও তিনি শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী হয়েছেন। এবারেও তাঁর চেয়ারম্যান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এবারে ভোটের ফলাফল সামনে আসার পরেই শহরজুড়ে জল্পনা ছড়িয়েছে খড়গপুর শহরের বিজেপি(BJP) বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়(Hiran Chatterjee) এবার তৃণমূলের সমর্থনে পুরপ্রধান হতে পারেন। হিরণ আগে তৃণমূলেই ছিলেন। পরে তিনি আসেন বিজেপিতে। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলা সহ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় মুখ থুবড়ে পড়ে বিজেপি। কিন্তু রাজ্যের রেল শহর হিসাবে পরিচিত খড়গপুরে জয়ী হন হিরণ। যদিও পরবর্তীকালে তাঁর সঙ্গে বিবাদ বাঁধে স্থানীয় বিজেপি সাংসদ তথা বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষের। এমনকি সেই বিবাদের জেরেই হিরণ দিলীপের কোনও অনুষ্ঠানে যেতেন না। এমনকি দলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়েও বেড়িয়ে যান। পরে দল তাঁকে আবারও সেই গ্রুপে যেমন ফিরিয়েছে তেমনি খড়গপুরের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তাঁকে পুরযুদ্ধে প্রার্থীও করে। যদিও হিরণের প্রস্তাবিত প্রার্থী তালিকাকে গুরুত্ব দেয়নি বিজেপি নেতৃত্ব।
এবারের পুরনির্বাচনে খড়গপুরের ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২০টি ওয়ার্ড গিয়েছে তৃণমূলের দখলে। বিজেপি ও কংগ্রেস ৬টি করে আসনে জয়ী হয়েছে। বামেরা জিতেছে ২টি আসনে। ১টি আসনে জয়ী হয়েছেন এক নির্দল প্রার্থী। ঘটনা হচ্ছে যা ফলাফল এসেছে তাতে তৃণমূল(TMC) একক শক্তিতেই পুরবোর্ড গড়ে ফেলতে পারবে। কিন্তু শহরজুড়ে জল্পনা ছড়িয়েছে তৃণমূলের সমর্থনে এবার খড়গপুরের পুরপ্রধান(Municipal Chairman) হতে পারেন হিরণ। বিজেপি যে ৬টি ওয়ার্ডে জিতেছে তার মধ্যে হিরণ যে ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন সেই ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডও রয়েছে। তাই হিরণ এখন বিধায়ক হওয়ার পাশাপাশি কাউন্সিলরও। তাঁকে ঘিরে যে শহরে জল্পনা ছড়াচ্ছে সেটা টলিউডের এই ব্যর্থ নায়ক বিলক্ষণ জানেন। রূপালি পর্দার সাফল্য ধরে রাখতে না পারলেও রাজনীতির ময়দানে হিরণ তাঁর সাফল্য ধরে রাখতে পারবেন বলেই এখন অনেকে মনে করছেন। আর তাই বাড়তি সাবধানী হিরণ নিজেও। ইতিমধ্যেই তিনি দূরত্ব বাড়াতে শুরু করে দিয়েছেন বিজেপি থেকে। হাজির হননি গতকালের চিন্তন বৈঠকে। শহরে ছড়িয়ে পড়া জল্পনার জেরে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘সকলে যদি চান, তাহলে আমার না বলার ক্ষমতা নেই।’
যদিও তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, দল পূর্ণ গরিষ্ঠতা পাওয়ার পরেও যদি বিজেপি থেকে কাউকে এনে পুরপ্রধান করতে হয় তাহলে দলের নীচুতলার কর্মী মহলে ভুল বার্তা যাবে। আমজনতার কাছেও তৃণমূল নিয়ে ভুল বার্তা যাবে। তাই দলের কাউন্সিলর হিসাবে যারা জিতেছেন তাঁদেরই কাউকে পুরপ্রধান করা হবে। তবে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন দলের শীর্ষ নেতৃত্বই। নতুন কোনও মহিলাকে শহরের পুরপ্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।