নিজস্ব প্রতিনিধি: একটানা হয়ে চলা বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পর প্লাবিত দক্ষিণবঙ্গের একাংশ। একাধিক জেলায় বাঁধ ভেঙে নদীর জল ঢুকে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে নদীর জল। তবে এই প্রথম নয়, এর আগে জুলাই-অগস্ট মাসেও একই পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছিল দক্ষিণবঙ্গবাসীকে। কিন্তু এক বর্ষায় কীভাবে দু’বার বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হল? এর কারণ জানানো হল নবান্নের তরফে। একইসঙ্গে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে রাজ্য।
রীতিমতো বিজ্ঞপ্তি জারি করে নবান্নের তরফে মুখ্যসচিব হরেকৃষ্ণ দ্বিবেদী জানিয়েছেন, দামোদর ও অজয় নদ নিয়েই মূল সমস্যা। বিশেষ করে ডিভিসি রাজ্যের অনুমতি না নিয়েই লাগাতার জল ছেড়ে যাচ্ছে। নবান্নের দাবি, গত ৩০ সেপ্টেম্বর বেলা বারোটায় ৪৯ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়। এর ঘণ্টাখানেকের মধ্যে বেলা একটার সময় ফের এক লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়। আবার সাড়ে আটটায় সময় ১ লক্ষ ২৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়ে ডিভিসি। শুক্রবার সকাল সওয়া আটটায় আবারও ১ লক্ষ ৫০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়। এর পাশাপাশি ঝাড়খণ্ডের সিকাতিয়া ব্যারেজ থেকেও বৃহস্পতিবার রাত তিনটে নাগাদ ৮০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। এদিন সকালে ফের ১ লক্ষ ২০ হাজার জল ছেড়েছে।
যার ফলে বাঁধ ভেঙে হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর এলাকা প্লাবিত হয়েছে। হুগলির আরামবাগে দু’টি ও খানাকুলে দু’টি বাঁধ ভেঙে এলাকার পর এলাকা চলে গিয়েছে জলের তলায়। বাঁধ ভেঙেছে বীরভূমের নানুর ব্লকেও। অন্যদিকে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত পূর্ব বর্ধমানের আউসগ্রামও। দামোদর, দ্বারকেশ্বরের জল বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। কারণ যে পরিমাণ জল ছাড়া হয়েছে, তার ধারণক্ষমতা নেই বাংলার নদ-নদীগুলির। প্রায় ২২ লক্ষেরও বেশি মানুষ বন্যার কবলে। এক লক্ষের বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত। প্রায় চার লক্ষ মানুষকে সরানো হয়েছে। দেড় লক্ষ মানুষকে ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাকিদের ত্রিপল দেওয়া হয়েছে। ২ হাজার মেট্রিক টন চাল দেওয়া হয়েছে।
ঘাটালে বাড়ি চাপা পড়ে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আট কলাম সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে। পশ্চিম বর্ধমান ও হুগলিতে তিন কলাম করে ও হাওড়াতে দুই কলাম বাহিনী নামানো হয়েছে। এছাড়াও এনডিআরএফের ২৫টি টিম মোতায়েন করা হয়েছে। এসডিআরএফের ২৪টি টল নামানো হয়েছে। পাশাপাশি আরও আটটি স্পেশাল এনডিআরএফ টিম দিল্লি থেকে আনা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে ২০০টি বোট। প্রতিটি জেলার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আইপিএস অফিসারদের। পশ্চিমবর্ধমানে রাজেশ পাণ্ডে, হুগলিতে মনোজ আগরওয়াল, বাঁকুড়ায় অভিনব চন্দ, বীরভূমে বিজয় ভারতী, পশ্চিম মেদিনীপুরে এম ভি রাও ও হাওড়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আইপিএস মনীশ জৈনকে।