নয়াগ্রামের ভোটযুদ্ধে ফের মুখোমুখি মামা-ভাগ্নে
Share Link:

নিজস্ব প্রতিনিধি: কথায় বলে মামা-ভাগ্নে যেখানে, বিপদ নেই সেখানে। কিন্তু যখন মামা-ভাগ্নের অবস্থান সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে। লড়াই যখন একে অন্যের বিরুদ্ধে, তখন হয়তো এই কথাটা আর খাটে না। ঠিক যেমনটা হতে চলেছে ঝাড়গ্রামের নয়াগ্রামে। সেখানে তৃণমূলের প্রার্থী, এলাকার দুবারের বিধায়ক দুলাল মুর্মু ও বিজেপি প্রার্থী বকুল মুর্মু। সম্পর্কে তাঁরা মামা-ভাগ্নে। গত লোকসভা ভোটের নিরিখে পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল। স্বাভাবিকভাবেই এই কেন্দ্রে বকুল মামার বিরুদ্ধে ভাগ্নে দুলালের লড়াই হবে সমানে সমানে।
ঝাড়গ্রাম জেলার ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত নয়াগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রটি। ২২০ নম্বর নয়াগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রটি নয়াগ্রাম এবং গোপীবল্লভপুর-১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক এবং চোরচিতা, কুলিয়ানা ও নোটা গ্রাম পঞ্চায়েত গুলি গোপীবল্লভপুর-২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক এর অন্তর্গত। এই কেন্দ্রটি তপসিলি উপজাতির জন্য সংরক্ষিত। ২০১৬-র মতো এবারেও তৃণমূল ও বিজেপির প্রার্থী তালিকায় কোনও পরিবর্তন নেই।
তৃণমূল প্রার্থী- দুলাল মুর্মু
বিজেপি প্রার্থী- বকুল মুর্মু
সংযুক্ত মোর্চা- হরিপদ সোরেন
এসইউসিআই- কালীচরণ বেসরা
নয়াগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে প্রথম নির্বাচন হয় ১৯৬২ সালে। জাতীয় কংগ্রেসের দেবেন্দ্রনাথ হাঁসদা ছিলেন নয়াগ্রামের প্রথম বিধায়ক। একনজরে দেখে নেওয়া যাক নয়াগ্রামের বিধায়কদের তালিকা।
নির্বাচনের বছর | বিধায়ক | রাজনৈতিক দল |
১৯৬২ | দেবেন্দ্রনাথ হাঁসদা | জাতীয় কংগ্রেস |
১৯৬৭ | জাগরতি হাঁসদা | বাংলা কংগ্রেস |
১৯৬৯ | জাগরতি হাঁসদা | বাংলা কংগ্রেস |
১৯৭১ | দশরথি সোরেন | জাতীয় কংগ্রেস |
১৯৭২ | দশরথি সোরেন | জাতীয় কংগ্রেস |
১৯৭৭ | বুদ্ধদেব সিং | সিপিএম |
১৯৮২ | অনন্ত সোরেন | সিপিএম |
১৯৮৭ | অনন্ত সোরেন | সিপিএম |
১৯৯১ | অনন্ত সোরেন | সিপিএম |
১৯৯৬ | সুভাষ চন্দ্র সোরেন | সিপিএম |
২০০১ | ভূতনাথ সোরেন | সিপিএম |
২০০৬ | ভূতনাথ সোরেন | সিপিএম |
২০১১ | দুলাল মুর্মু | তৃণমূল কংগ্রেস |
২০১৬ | দুলাল মুর্মু | তৃণমূল কংগ্রেস |
নয়াগ্রামের বিদায়ী বিধায়ককেই ফের একবার প্রার্থী করেছে তৃণমূল। গতবারে ওই আসনে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিল বিজেপি। মামা বকুল মুর্মুকে ৪৩ হাজার ২৫৫টি ভোটে হারিয়েছিলেন দুলাল। মোট ৯৮ হাজার ৩৯৫টি ভোট পেয়েছিলেন ভাগ্নে দুলাল। কিন্তু সমীকরণ পাল্টে যায় গত লোকসভা ভোটে। জঙ্গলমহলের অন্যান্য লোকসভা আসনগুলির মতো ঝাড়গ্রামেও খাতা খোলে বিজেপি। ১১ হাজার ৭৬৭ টি ভোটে তৃণমূল প্রার্থী বীরবাহা সোরেনকে হারিয়েছিলেন বিজেপির কুনার হেমব্রম। নয়াগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্র থেকেও ৩ হাজার ৩৩৮টি ভোটে এগিয়ে ছিল বিজেপি। একনজরে দেখে নেওয়া যাক, লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে নয়াগ্রাম বিধানসভায় কোন দলের প্রাপ্ত ভোট কত...
রাজনৈতিক দল | প্রার্থী | প্রাপ্ত ভোট |
বিজেপি | কুনার হেমব্রম | ৮৪৩১৬ |
তৃণমূল | বীরবাহা সোরেন | ৮০৯৭৮ |
সিপিএম | দেবলীনা হেমব্রম | ৭৩০৫ |
কংগ্রেস | যোগেশ্বর হেমব্রম | ২২৬০ |
লোকসভা ভোটের নিরিখে নয়াগ্রাম বিধানসভায় বিজেপি এগিয়ে থাকলেও সম্প্রতি সেখানে বিজেপির একাধিক সভা ঘিরে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। সোমবার ঝাড়গ্রামে সভা থাকলেও যাননি অমিত শাহ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কপ্টার বিভ্রাটের অজুহাত দেখালেও অভিযোগ উঠছে, যথেষ্ট পরিমাণে কর্মী-সমর্থকদের ভিড় না হওয়াতেই নাকি সভা করেননি অমিত শাহ। এর আগেও অবশ্য বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা পূর্ব কর্মসূচি অনুযায়ী ঝাড়গ্রামে সভা করতে এসেও মঞ্চে ওঠেননি। সেক্ষেত্রেও একই কারণ তুলে ধরা হয়েছিল তৃণমূলের তরফে। তবে শেষপর্যন্ত নয়াবাদে তৃণমূল কি জয় ধরে রাখতে পারবে, না কী লোকসভার মতোই বিধানসভা ভোটেও জয়জয়কার হবে বিজেপির? তার জন্য অবশ্যই নজর রাখতে হবে মামা-ভাগ্নের রাজনৈতিক লড়াইয়ের দিকে। অপেক্ষা করতে হবে ২ মে পর্যন্ত।
Leave A Comment