কৃষিনির্ভর সিঙ্গুরে ফের শিল্পের খোঁজ, প্রতিশ্রুতি বন্যায় ভাসছে সব দল
Share Link:

নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার নেপথ্যে যে ক'টি আন্দোলনের ভূমিকা রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম সিঙ্গুর আন্দোলন। রাজ্য সরকারের স্কুলপাঠ্যে স্থান পেয়েছে সিঙ্গুর আন্দোলনের কথা। তাই নতুন করে আর তেমন বলার কিছু নেই। তবে গত কয়েক মাসে যেভাবে সিঙ্গুরের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়েছে, তার সঙ্গে পাঠ্যবইয়ের ইতিহাস আর হয়তো খাপ খাইয়ে উঠতে পারবে না।
২০০৬ সাল, সপ্তমবারের জন্য ক্ষমতায় এসেই বামফ্রন্ট প্রথম যে কাজে মনোনিবেশ করে, তা হল হুগলির সিঙ্গুরে গাড়ি কারখানা তৈরির প্রকল্প। ওইবছর ২ ডিসেম্বর সিঙ্গুরের অধিগৃহীত জমিতে জোর করে বেড়া দেওয়ার কাজ শুরু হয়। বাধা দিলে একটি দু'বছরের শিশু-সহ মোট ৭৩ জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। কৃষকদের আন্দোলনের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেলে টানা ২৬ দিন অনশন করেছিলেন তিনি। তারপর ২০০৮-এ দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে লাগাতার ১৫ দিনের ধরনা আন্দোলন সিঙ্গুর থেকে টাটা গোষ্ঠীকে তাড়িয়ে ছেড়েছিল। ওইবছর ২ সেপ্টেম্বর কারখানার কাজ স্থগিত করে টাটা কর্তৃপক্ষ। তারপর ৩ অক্টোবর সিঙ্গুর ছেড়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করে তারা। তবে সে দিনই জয়ী হয়নি সিঙ্গুর। তারও প্রায় ৮ বছর পর ২০১৬ সালের ৩১ অগস্ট সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়, সিঙ্গুরের জমি কৃষকদের ফিরিয়ে দিতে হবে। ওই রায়ে উচ্ছ্বাস দেখা গিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস শিবিরে। এর পরের বছরই অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবইতে সিঙ্গুর আন্দোলনের অন্তর্ভুক্তি হয়। কিন্তু বইয়ের পাতায় লেখা সিঙ্গুর আন্দোলনের অন্যতম নেতা তথা সিঙ্গুরের চারবারের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টচার্যকে বয়সের কারণে আর টিকিট দেয়নি তৃণমূল। তাতেই ক্ষুব্ধ মাস্টারমশাই রাতারাতি বদলে নিয়েছেন শিবির। একুশের নির্বাচনে তিনি আবারও সিঙ্গুরের প্রার্থী, কিন্তু এবার বিজেপির টিকিটে। তৃণমূল প্রার্থী করেছে সিঙ্গুর আন্দোলনের আর এক নেতা বেচারাম মান্নাকে। তৃণমূল-বিজেপির রেষারেষির মাঝে সিঙ্গুরে সিপিএমের প্রার্থী তরুণ তুর্কী সৃজন ভট্টাচার্য। যে শিল্পের কামড়ে সিঙ্গুরে পা কেটেছিল বাম সাম্রাজ্যের, সেই শিল্পায়নের বার্তা নিয়েই সিঙ্গুর চষে বেড়াচ্ছেন তিনি।
তৃণমূল কংগ্রেস----------------------- বেচারাম মান্না
বিজেপি--------------------------------- রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য
সংযুক্ত মোর্চা (সিপিএম)-------------- সৃজন ভট্টচার্য
আনন্দনগর, বাগডাঙ্গা চিনামোড়, বারুইপাড়া পালতাগড়, বেড়াবেড়ি, বিগহাটি, বৈচিপোতা, বড়া, বড়াই পাহালামপুর, গোপালনগর, মির্জাপুর-বাঁকিপুর, নসীবপুর, সিঙ্গুর-১ এবং সিঙ্গুর-২ গ্রামপঞ্চায়েতগুলি নিয়ে সিঙ্গুর সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক ও চন্ডীতলা-২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক নিয়ে গঠিত সিঙ্গুর বিধানসভা কেন্দ্রটি। এটি হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। ১৯৫১ সালে এই কেন্দ্রের যুগ্ম বিধায়ক হন সিপিআইয়ের সৌরেন্দ্রনাথ সাহা ও অজিতকুমার বসু। মাত্র ৪ বার এই সিঙ্গুরে জয় পেয়েছে কংগ্রেস। একসময় এই কেন্দ্রটিও বামেদের গড় ছিল। তবে ২০০১ সাল থেকে এই সিঙ্গুরে জিতে আসছেন রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। একনজরে দেখে নেওয়া যাক, সিঙ্গুরের বিধায়কদের তালিকা...
নির্বাচনের বছর | বিধায়ক | রাজনৈতিক দল |
১৯৫১ | সৌরেন্দ্রনাথ সাহা অজিতকুমার বসু |
সিপিআই সিপিআই |
১৯৫৭ | প্রভাকর পাল | জাতীয় কংগ্রেস |
১৯৬২ | প্রভাকর পাল | জাতীয় কংগ্রেস |
১৯৬৭ | প্রভাকর পাল | জাতীয় কংগ্রেস |
১৯৬৯ | গোপাল বন্দোপাধ্যায় | সিপিএম |
১৯৭১ | অজিতকুমার বসু | সিপিআই |
১৯৭২ | অজিতকুমার বসু | সিপিআই |
১৯৭৭ | গোপাল বন্দোপাধ্যায় | সিপিএম |
১৯৮২ | তারাপদ সাধুখাঁ | জাতীয় কংগ্রেস |
১৯৮৭ | বিদ্যুৎকুমার দাস | সিপিএম |
১৯৯১ | বিদ্যুৎকুমার দাস | সিপিএম |
১৯৯৬ | বিদ্যুৎকুমার দাস | সিপিএম |
২০০১ | রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য | তৃণমূল কংগ্রেস |
২০০৬ | রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য | তৃণমূল কংগ্রেস |
২০১১ | রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য | তৃণমূল কংগ্রেস |
২০১৬ | রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য | তৃণমূল কংগ্রেস |
২০০১ সালেই তৃণমূলের টিকিটে প্রথবার সিঙ্গুরের বিধায়ক হয়েছিলেন মাস্টারমশাই রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ক্ষমতায় আসার পরে মন্ত্রীও করা হয় তাঁকে। ২০১৬ সালে লড়াইটা ছিল আরও কঠিন। প্রতিপক্ষ ছিলেন সিপিএমের পোড়খাওয়া নেতা রবীন দেব। কিন্তু সেবারও ২০ হাজার ৩২৭ ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন মাস্টারমশাই। কিন্তু গত লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রে ধাক্কা খায় তৃণমূল। বিজেপি এগিয়ে যায় ১০ হাজার ৪২৯ ভোটে। একনজরে দেখে নেওয়া যাক, ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে সিঙ্গুরে কোন দল কত ভোট পেয়েছিল...
রাজনৈতিক দল | প্রার্থী | প্রাপ্ত ভোট |
বিজেপি | লকেট চট্টোপাধ্যায় | ৯৩১৭৭ |
তৃণমূল কংগ্রেস | রত্না দে নাগ | ৮২৭৪৮ |
সিপিএম | প্রদীপ সাহা | ১৭৬৩২ |
কৃষিনির্ভর সিঙ্গুরে শিল্পই যেন মূল ইস্যু একুশের নির্বাচনে। ইতিমধ্যেই সেখানে শিল্পের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রোড শো করেছেন অমিত শাহ। যদিও তৃণমূলত্যাগী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে প্রার্থী হিসাবে মেনে নিতে পারেনি এলাকার পুরনো বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। এ নিয়ে একাধিক বিক্ষোভও হয়েছে। অন্যদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সিঙ্গুরে তৈরি করা হবে অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রি। তারপর বড় শিল্পও তিনি করবেন বলে জানিয়েছেন। এদিকে বিজেপি ও তৃণমূলের শিল্পের প্রতিশ্রুতির মাঝেই সিঙ্গুরে চাঙ্গা হচ্ছে বামফ্রন্ট। তারাই প্রথম শিল্প করতে চেয়েছিল সিঙ্গুরে। সেকথা মনে করিয়ে সিপিএম প্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্যের মিছিল থেকে ফের শ্লোগান উঠছে, 'কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ।' তবে নন্দীগ্রামের মতোই সিঙ্গুরও একুশের নির্বাচনে যে বড় ফ্যাক্টর, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। শেষ পর্যন্ত সিঙ্গুর কোন দলের দখলে যায়, তা জানা যাবে ২ মে।
More News:
20th April 2021
20th April 2021
20th April 2021
18th April 2021
15th April 2021
15th April 2021
কার্শিয়াং: দার্জিলিংয়ের মতোই দুই ভাগে বিভক্ত প্রায় প্রতিটি শিবির
15th April 2021
সংযুক্ত মোর্চায় ফাটল, কৃষ্ণগঞ্জে ফায়দা খুঁজছে বিজেপি ও তৃণমূল
Leave A Comment