নিজস্ব প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ: শেখ হাসিনা ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ হওয়ার আগের দিন সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় হামলা চালিয়ে ১৫ পুলিশ কর্মীকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে খুন করেছিল বিক্ষুব্ধ জনতা। আত্মসমর্পণ করতে চেয়েও বাঁচতে পারেননি ওই হতভাগ্য পুলিশ কর্মীরা। থানায় আগুন ধরানোর পরে খুঁজে-খুঁজে পুলিশ কর্মীদের বের করে পিটিয়ে খুন করা হয়েছিল। হিন্দু হওয়ায় এক আধিকারিকের লাশ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল গাছে। গোটা দেশ তো বটে, সারা বিশ্ব ওই নৃশংস খুনের ঘটনায় শিহরে উঠেছিল। মোল্লা মুহাম্মদ ইউনূস সরকার ক্ষমতায় এসেই ওই ঘটনার দায় চাপিয়ে জেলে পুরেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তথা শেখ হাসিনা জমানার প্রাক্তন মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাসকে। পাকিস্তানি রাজাকার মোল্লা ইউনূসের মুখে ঝামা ঘষে দিয়ে ঘটনার ৫ মাসের মাথায় ১৫ পুলিশ কর্মীকে খুনের কথা বুক বাজিয়ে দাবি করেছেন সিরাজগঞ্জের দাপুটে বিএনপি নেতা সাইদুর রহমান।

গত বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়িতে মিল্ক ভিটার উদ্যোগে প্রাথমিক সমবায় সমিতির সদস্যদের নিয়ে মতবিনিময় সভায় হাজির ছিলেন সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তথা সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নবনিযুক্ত সভাপতি সাইদুর রহমান বাচ্চু। শেখ হাসিনা উচ্ছেদ আন্দোলনের সময়ে জেলার এনায়েতপুর থানায় ১৫ পুলিশ কর্মীকে পিটিয়ে নৃশংসভাবে খুন করার কৃতিত্ব দাবি করে তিনি বলেন, ‘সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে যদি ১৫ জন পুলিশ নিহত না হতো, তাহলে বাংলাদেশের পুলিশের মেরুদণ্ড ভাঙত না। আমরা সিরাজগঞ্জে আন্দোলন করে, বাংলাদেশের পুলিশের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়ে ২০২৪ সালের আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করেছি। ১৫ পুলিশ কর্মীকে কুকুরের মতো মেরে দেশের বাকি জায়গার মানুষকে পুলিশ নিধন যজ্ঞে সামিল হওয়ার উ‍ৎসাহ জুগিয়েছি।’ পুলিশকে খুন করার কৃতিত্ব জাহির করেই ক্ষান্ত হননি দাপুটে বিএনপি নেতা। সেই সঙ্গে ওই বক্তব্যের ভিডিও নিজের ফেসবুকেও পোস্ট করেছিলেন। নিমিষেই ওই বক্তব্যের ভিডিও সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। অনেক নেটা নাগরিকরা সমাজমাধ্যমে লেখেন, ‘তাহলে ঝুলি থেকে বাঘ বেরিয়েই পড়ল। এতদিন তো পুলিশ খুনের দায় আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে চাপিয়ে হাজার-হাজার মিথ্যা মামলা দায়ের হয়েছে। সেই মামলার কী হবে?’ সমালোচনা আর নিন্দার ঝড় উঠতেই ফেসবুকে পোস্ট করা ভিডিও ডিলিট করে দেন দাপুটে বিএনপি নেতা। উল্টে সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করেন, তার বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা উচ্ছেদ আন্দোলনে যখন গোটা দেশ অগ্নিগর্ভ তখনই ৪ অগস্ট সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। সেই সময় থানায় ৪০ পুলিশ সদস্য কর্তব্যরত ছিলেন। প্রাণ ভয়ে  কেউ থানার ছাদে, কেউ পাশের বাড়িতে, কেউ শৌচাগারে, কেউবা জঙ্গলে আশ্রয় নেন। সেখান থেকেই খুঁজে এনে একে একে ১৫ জনকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। তাদের মধ্যে ছিলেন থানার ওসি আবদুর রাজ্জাকও। শুধু ১৫ জন পুলিশ কর্মীকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে খুনই করা হয়নি, থানার অস্ত্র ভান্ডার লুঠ করার পাশাপাশি থানায় অগ্নিসংযোগও করা হয়েছিল।