নিজস্ব প্রতিনিধি: পহেলগাঁও হামলার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বেশ কিছু কড়া পদক্ষেপ করেছে ভারত। তার মধ্যে রয়েছে আটারি সীমান্ত বন্ধের নির্দেশ।  ভারতের আক্রমণাত্মক পদক্ষেপের প্রতি পদক্ষেপ স্বরূপ জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) একটি বৈঠকের পর বৃহস্পতিবার ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধের নির্দেশ দিল পাকিস্তান। এই বৈঠকে শীর্ষ বেসামরিক ও সামরিক নেতৃত্ব উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (পিএমও) কর্তৃক জারি করা এক বিবৃতি অনুসারে, বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা জাতীয় নিরাপত্তা পরিবেশ এবং আঞ্চলিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে পহেলগাঁও হামলা নিয়ে আলোচনা করেছেন।

পিএমও কর্তৃক জারি হওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “পর্যটকদের প্রাণহানির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে কমিটি ২৩শে এপ্রিল ঘোষিত ভারতীয় পদক্ষেপগুলি পর্যালোচনা করেছে এবং এগুলিকে একতরফা, অন্যায্য, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং আইনি যোগ্যতাহীন বলে অভিহিত করেছে।”

পড়শি দেশে প্রধানমন্ত্রীর আরও সংযোজন যে ভারতের বেপরোয়া ও দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব ও ইচ্ছামতো আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতাকে উপেক্ষা করে করা হয়েছে। এর প্রতিশোধ হিসেবে এনএসসি একাধিক পদক্ষেপ করছে।

সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ হিসেবে, পাকিস্তান ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তি স্থগিত করেছে এবং বলেছে যে এর ফলে ভারতের সঙ্গে থাকা ওয়াঘা সীমান্তকে বন্ধ করে দেওয়া হবে।

পিএমও’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “যতক্ষণ না ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসবাদ উস্কে দেওয়া, আন্তঃজাতিক হত্যাকাণ্ডের এবং আন্তর্জাতিক আইন ও কাশ্মীরের বিষয়ে জাতিসংঘের প্রস্তাব অমান্য করার প্রকাশ্য আচরণ থেকে বিরত থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে সমস্ত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্থগিত রাখার অধিকার প্রয়োগ করবে, যার মধ্যে সিমলা চুক্তিও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।”

প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় সূত্রে খবর, পাকিস্তান তাৎক্ষণিকভাবে ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করে দেবে। এই পথ দিয়ে ভারত থেকে সমস্ত আন্তঃসীমান্ত পরিবহন স্থগিত করা হবে। যারা বৈধ অনুমোদন নিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করেছেন তাঁদের এই পথ দিয়ে ফিরে আসার জন্য ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সময়সীমা ব বেঁধে দিয়েছে। পাশাপাশি সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত রাখার বিষয়ে ভারতের ঘোষণাকে পাকিস্তান তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করে পিএমও বলেছে, সিন্ধু জল চুক্তি একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি, যা ভারত একা স্থগিত করতে পারে না। এটি পাকিস্তানের জনগণের জন্য একটি জীবনরেখা, তাই এর সঙ্গে কোনও আপোষ করা হবে না।

পাশাপাশি পাকিস্তান অত্যন্ত স্পষ্টভাবে হুমকি দিয়ে বলেছে যে ভারত যদি পাকিস্তানের অংশের জল বন্ধ করে দেয় বা অন্য দিকে সরিয়ে দেয়, তাহলে এটি যুদ্ধের পদক্ষেপ হিসাবে বিবেচিত হবে। সম্পূর্ণ জাতীয় শক্তি এর জবাবও দেওয়া উচিত।

পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিয়ম এবং জাতিসংঘের প্রস্তাব লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে। তাদের অভিযোগ ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে দেয়, অবৈধভাবে কাশ্মীর দখল করে এবং সেখানকার জনগণের উপর নির্যাতন চালায়।

পাকিস্তান যে সিদ্ধান্তগুলি নিয়েছে এক নজরে দেখে নিন

পাকিস্তান ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। ভারতে আসা-যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়াও, যারা বৈধ ভিসা নিয়ে পাকিস্তান গিয়েছেন তাদের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে ফিরে আসতে বলা হয়েছে।

সার্ক ভিসা প্রকল্পের অধীনে ভারতীয়দের দেওয়া সমস্ত ভিসা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র শিখ তীর্থযাত্রীরাই ছাড় পাবেন। বাকি সকলকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে পাকিস্তান ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় প্রতিরক্ষা, নৌ ও বিমান বাহিনীর উপদেষ্টাদের অবাঞ্ছিত ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। তাঁদের , তবে ৩০ এপ্রিলের আগে পাকিস্তান ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পাকিস্তানে ভারতীয় হাইকমিশনে কর্মী সংখ্যা ৩০ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলির জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমা অবিলম্বে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ভারতের সঙ্গে সকল ধরণের বাণিজ্য, এমনকি তা কোনও তৃতীয় দেশের মাধ্যমে হলেও তা অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নয়াদিল্লির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে যে ভারতে থাকা সমস্ত পাকিস্তানি নাগরিককে ২৯ এপ্রিলের মধ্যে দেশ ত্যাগ করতে হবে। বুধবার ভারত আটারি সীমান্ত বন্ধ করে দেয়। পাকিস্তান সরকারের দাবি কোনও প্রমাণ ছাড়াই সিন্ধু জল চুক্তি (IWT) স্থগিত করার একতরফা ঘোষণা করা হয়েছে। ভারতীয় গোয়েন্দা বিভাগ জানিয়েছে, সন্দেহভাজন হামলাকারীদের মধ্যে দু’জন পাকিস্তানি এবং নিষিদ্ধ লস্কর-ই-তৈবার সদস্য। পাকিস্তান এই হামলায় তার কোনও ভূমিকা অস্বীকার করেছে এবং পহেলগাঁওয়ে প্রাণহানির জন্য সমবেদনা জানিয়েছে।