নিজস্ব প্রতিনিধি: গুঞ্জন ছড়িয়েছিল অনেক আগেই। ফের তৃণমূলে ফিরতে পারেন তিনি। শাসক দলের দুই মন্ত্রী নাকি মধ্যস্থাকারীর কাজ করছেন। যদিও সেই গুঞ্জন উড়িয়েছিলেন তিনি নিজেই। জানিয়ে ছিলেন তিনি, বিজেপিতেই থাকছেন। কিন্তু গত সোমবার বিজেপির ডাকা বনধ প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানাতেই সেই ধামাচাপা পড়া গুঞ্জনকে আবারও চাঙ্গা করে দিয়েছিলেন তিনি। আর শনিবার তো সেই গুঞ্জন প্রবল ভাবে ডানা মেলে দিল বঙ্গ বিজেপির চিন্তন বৈঠকে তাঁর অনুপস্থিতি ঘিরে। প্রশ্ন উঠে গেল তাঁর সঙ্গে কী এবার বঙ্গ বিজেপির দূরত্ব বাড়া শুরু হয়ে গেল? নজরে শুভেন্দু অধিকারী(Suvendu Adhikari)।
উনিশের ভোটে ঐতিহাসিক সাফল্য। কিন্তু সেই প্রথম আর সেই শেষ। পরবর্তীকালে রাজ্যের আর কোনও ভোটেই বিজেপি(BJP) জয়ের মুখ দেখেনি। বরঞ্চ একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে বাংলায় বিজেপির হাল থেকে এখন অনেকেই বলতে শুরু করে দিয়েছেন যে, বাংলায়(Bengal) পদ্ম শিবিরের অন্তর্জলী যাত্রা শুরু হয়ে গিয়েছে। কারণ বিভিন্ন নির্বাচনের ফল বলে দিচ্ছে বাংলার বিরোধী পরিসরে আবারও ফিরতে শুরু করে দিয়েছে বামেরা। একই সঙ্গে ক্রমশ কমতে শুরু করে দিয়েছে বিজেপির প্রতি আমজনতার সমর্থন। সদ্য সদ্য হয়ে যাওয়া পুরনির্বাচনেই দেখা গেল বামেরা পেয়েছে ১৪ শতাংশ ভোট আর বিজেপি পেয়েছে ১৩ শতাংশ ভোট। এমনকি সেই নির্বাচনে হারলেন বিজেপির ৪জন বিধায়ক। ৬০টিরও বেশি পুরসভায় বিজেপি খাতাই খুলতে পারেনি। উনিশের ভোটে যে উত্তরবঙ্গ, জঙ্গলমহল ও মতুয়াপ্রভাবিত এলাকায় চোখ ধাঁধানো ফল করেছিল সেই সব জায়গাতেও মুখ থুবড়ে পড়েছে বিজেপি। এই সবই কিন্তু বলে দিচ্ছে বাংলায় বিজেপি এখন ক্রমশ প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত হচ্ছে।
আর ঠিক এই অবস্থায় শুভেন্দুকে ঘিরে জোর জল্পনা ছড়ালো বঙ্গ বিজেপির অন্দরে। সেই জল্পনা এখন বিজেপি ছড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ছে বাংলার রাজনীতিতেও। এদিন কলকাতার ন্যাশানাল লাইব্রেরিতে বসেছিল বঙ্গ বিজেপির চিন্তন বৈঠক। লক্ষ্য ছিল, দলকে এই খারাপ অবস্থা থেকে কীভাবে বের করে আনা যায় সেই নিয়ে দলের নেতাদের মধ্যেই মত বিনিময়। সেই বৈঠকে পদাধিকার বলে ডাক পেয়েছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দু ডাক পেলেও বঙ্গ বিজেপি বাকি বিধায়করা সেভাবে ডাক পাননি। য়ার সেই বৈঠকেই দেখা গেল গরহাজির শুভেন্দু। যদিও বঙ্গ বিজেপির তরফে জানানো হয়েছে, শুভেন্দু নাকি শুক্রবার রাতেই জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি আসতে পারবেন না। আর এখানেই উঠছে প্রশ্ন। কেন এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক এড়িয়ে গেলেন বাংলার বিরোধী দলনেতা? তাহলে কী বঙ্গ বিজেপির সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়ছে? যদিও এই প্রশ্নের সরাসরি কোনও উত্তর মেলেনি বঙ্গ বিজেপির কোনও নেতার কাছ থেকেই। কিন্তু জল্পনা থামছে না তাতে। বরং তা এখন নতুন করে আরও জোরালো ভাবে ডানা মেলে দিয়েছে।
রাজ্য রাজনীতির(Politics) বিশেষজ্ঞরা কিন্তু মনে করছেন শুভেন্দুর জার্সি বদল দ্রুত না হলেও আগামী ভবিষ্যতে যে ঘটবে না সেকথা জোর দিয়ে বলা যায় না। কেননা অধিকারীদের হাতে এখন পেনসিল ভিন্ন কিছুই অবশিষ্ট নেই। শুভেন্দুর হাতে রাজ্যের বিরোধী দলনেতার পদ এবং শিশির ও দিব্যেন্দুর হাতে সাংসদ পদ ভিন্ন আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। যা পরিস্থিতি তাতে শিশিরের সাংসদ পদ গেলে কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রে যদি উপনির্বাচন হয় তাহলে তাতে তৃণমূলের জয় নিশ্চিত। একই সঙ্গে শিশির বা অধিকারী পরিবারের কাউকেই আর ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী করবে না তৃণমূল(TMC)। এই অবস্থায় শুভেন্দুই বা কী করবেন! রাজ্যের বিরোধী দলনেতার পদ আঁকড়ে রাজ্যে জনবিচ্ছিন্ন, প্রত্যাখ্যাত দলকে কতটুকু এগিয়ে দিতে পারবেন? নিজেই বা কী পাবেন এই সব প্রশ্ন কিন্তু তাঁকেও ভাবতে হবে। তাই সেই জায়গা থেকে অদূর ভবিষ্যতে তিনি তৃণমূলে ফিরলে অবাক হওয়ার মতো কিছু থাকবে না। লক্ষ্যণীয় বিষয় তৃণমূল সাম্প্রতিককালে শুভেন্দুকে কঠোর ভাবে আক্রমণ করার রাস্তায় যেমন হাঁটেনি, শুভেন্দুও কিন্তু সেই রাস্তায় হাঁটেননি তৃণমূলকে আক্রমণ করার ক্ষেত্রে। অনেকেই মনে করছেন কোথাও একটা বোঝাপড়া শুরু হয়ে গিয়েছে যা হয়তো আগামী দিনে প্রকাশ্যে আসবে।