নিজস্ব প্রতিনিধি: তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছেন তিনি। দাঁড়িয়েছিলেন ভোটেও। কিন্তু দেখতে পাননি সাফল্যের মুখ। এমনকি দলের জেতা আসনও ধরে রাখতে পারেননি তিনি। এবার টুইটে রাজ্য সরকারের সাফল্য স্বীকার করে উপনির্বাচনে হারের কারণও তুলে ধরলেন তিনি। আর তাতেই তীব্র অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছে গেরুয়া শিবির। তিনি জিতেন্দ্র তিওয়ারি(Jitendra Tiwari)। আসানসোল পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র ও পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্রের প্রাক্তন বিধায়ক। এবার তিনিই টুইট(Tweet) করে আসানসোল(Asansol) লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির হারের কারণ তুলে ধরলেন। আর সেই কারণেই উঠে এল রাজ্য সরকারের চালু করা একাধিক আর্থসামাজিক প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা, যেগুলিকে নিয়ে গেরুয়া শিবিরের তরফে শুধু যে অহরহ আক্রমণ শানানো হয় তাই নয়, সেগুলিকে নিয়ে নিরন্তর মিথ্যা প্রচারও চালানো হয়। কিন্তু জিতেন্দ্র’র টুইট বলে দিচ্ছে, বিজেপির তরফে রাজ্য সরকারের আর্থসামাজিক প্রকল্পগুলি নিয়ে যতই বদনাম ছড়ানো হোক না কেন, বাস্তবে বাংলার আমজনতা তার প্রত্যক্ষ সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন।
ঠিক কী লিখেছেন জিতেন্দ্র? আসানসোলে লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে হারের কারণ খুঁজতে গিয়ে জিতেন্দ্র তাঁর টুইটে লিখেছেন, ‘আমার ব্যক্তিগত অভিমত লক্ষ্মীর ভান্ডার, কন্যাশ্রী ও স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের সুবিধা সাধারণ মানুষ দুয়ারে সরকারের ক্যাম্পে গিয়ে সহজে পেয়েছেন। এর প্রভাব পড়েছে ভোটারদের উপর।’ একই সঙ্গে তিনি অবশ্য ওই টুইটে এটাও লিখেছেন যে, ‘গত বছর থেকে লাগাতার ভোট পরবর্তী হিংসায় ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তাঁরা শাসকদলের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করতে ভয় পাচ্ছেন।’ কিন্তু তাঁর টুইটের প্রথম অংশ ঘিরেই কার্যত মুখ পুড়ছে গেরুয়া শিবিরের। আরও বলা ভাল বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের। কেননা একরকম নিয়ম করেই বিজেপির নেতা থেকে সাংসদ, বিধায়কেরা স্বাস্থ্যসাথী, খাদ্যসাথী, সবুজসাথী, কন্যাশ্রী, সবুজশ্রী, ঐক্যশ্রী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, জয় জোহর, কৃষকবন্ধু প্রভৃতি জনপ্রিয় প্রকল্পগুলিকে নিয়ে আক্রমণ চালায়। সেগুলিকে ‘ভাঁওতাবাজি’ বলে তুলে ধরে বিজেপি(BJP)। চালায় প্রকল্পগুলি নিয়ে মিথ্যা প্রচারও। কিন্তু এদিন জিতেন্দ্রের টুইটই বিজেপির সেই অপচেষ্টায় জল ঢেলে দিয়েছে। তাতেই কার্যত মুখ পুড়েছে গেরুয়া শিবিরের।
জিতেন্দ্রের এহেন কীর্তিতে বঙ্গ বিজেপির কোনও নেতাই এখনও পর্যন্ত মুখ খোলেননি। তবে তৃণমূলের তরফে ঘটনাটি নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁদের দাবি, ‘একথা সবাই জানেন রাজ্যের প্রতিটি মানুষ এখন লক্ষ্মীর ভান্ডার, স্বাস্থ্যসাথী, কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুধিবা দুয়ারে সরকারে মাধ্যমে সহজে পেয়ে যাচ্ছেন। বিজেপির নেতারা মানুষের এই উন্নয়নকে সহ্য হচ্ছে না। তাই তাঁরা নিরন্তর এই সব প্রকল্প নিয়ে মিথ্যা প্রচার চালিয়ে যান। কিন্তু আসানসোলে হারের পর জিতেন্দ্র তিওয়ারির এখন মনে হচ্ছে মানুষ সত্যিই এইসব প্রকল্পের সুযোগ পাচ্ছেন আর তাই তাঁরা দুইহাত উপুড় করে তৃণমূলকে ভোট দিচ্ছেন। বিজেপির মিথ্যাচার মানুষ ধরে ফেলেছে। সম্ভবত জিতেন্দ্র নিজে সেটা বুঝেছেন আর হয়তো তিনিও সত্যিটা দেখতে পেয়েছেন।’
তৃণমূলের এই দাবির পাশাপাশি এদিন আরও একটি জল্পনা ছড়িয়েছে জিতেন্দ্রকে ঘিরে। তিনি কী এবার ফের তৃণমূলমুখী হতে চান? কেননা একসময় যে পাণ্ডবেশ্বর থেকে তিনি তৃণমূলের বিধায়ক হয়েছেন সেখানেই আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তৃণমূল(TMC) সব থেকে বেশি লিড পেয়েছে। তৃণমূল আসানসোলে জিতেছে ৩ লক্ষেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে। যার মধ্যে প্রায় ১ লক্ষ ভোটে এগিয়ে থাকার ব্যবধান এসেছে পাণ্ডবেশ্বর থেকে। যদিও জিতেন্দ্র জানিয়েছেন, ‘বিজেপি ছাড়ার রটনা সম্পূর্ণ ভুয়ো। সাধারণ মানুষ এই প্রকল্পগুলির সুবিধা পাচ্ছেন। ভোটেন আগে যদি কাউকে বলা হয় বিজেপি-কে ভোট দিলে তাঁর লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা পাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে, তিনি কি সেক্ষেত্রে ভোট দেবেন? এই কথাটাই টুইটের মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছিলাম। তার অপব্যাখা করা হয়েছে।’ ব্যাখা যাই তিনি এখন দিন না কেন, তাঁর টুইট বাণে এখন বিদ্ধ বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব।