24ºc, Haze
Thursday, 23rd March, 2023 3:07 am
নিজস্ব প্রতিনিধি: পুজো এলেই আরেকটি বিষয় নিয়ে সবাই খুব মেতে ওঠে। তা হল, বনেদি বাড়ির পুজো নাকি বারোয়ারি পুজো, কোন পুজো আপনার প্রিয়। বনেদি বাড়ির পুজো বলতে রাজবাড়ির অথবা জমিদার বাড়ির পুজোকেই বোঝায়। তবে বর্তমানে বনেদি বাড়ির পুজো আস্তে আস্তে বিলুপ্ত প্রায় হয়ে উঠছে। কারণ একান্নবর্তী পরিবারে ভেঙে জায়গায় জায়গায় ফ্ল্যাট বাড়ি তৈরি হচ্ছে। রাজবাড়ির সদস্যরাও কেউ কেউ বাড়ি ছেড়ে আবাসনে স্থানান্তরিত হচ্ছেন বা চাকরির জন্যে বিদেশ পারি দিচ্ছেন। এছাড়াও অনেক জমিদার বাড়িতে অর্থের জন্যও বাড়ির পুজো বন্ধ করে দেওয়া হয়, অথবা মানুষের অভাবে। কারণ দুর্গাপূজো করতে প্রচুর অর্থের এবং অনেক মানুষের দরকার হয়, তাই পুরাকালে কোনো জমিদার বাড়িতে পুজো হলেই পুজো পাড়া সেই পুজোতে মেতে উঠতেন। তবে এখন সময় বদলেছে, দুর্গা পুজোর সংখ্যাও অনেক বেড়েছে। কোনো কোনো এলাকার একই পাড়াতে একাধিক পুজো হচ্ছে।
বনেদি বাড়ির পূজা
সাধারণত, পারিবারিক স্তরে বা কলকাতা শহরের পুরনো ধনী পরিবারগুলির দুর্গাপূজাকে “বনেদি বাড়ির পূজা” বলা হয়। ষোড়শ শতক থেকেই বাংলার রাজবাড়ি ও জমিদারবাড়ি গুলোতে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে। এ ব্যাপারে কেউ কেউ বলেন, মালদা ও দিনাজপুরের বনেদি বাড়ি থেকেই প্রথম বনেদি পুজো শুরু হয়। দুর্গাপুজো সামাজিক চেহারা নিতে শুরু করল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের হাত ধরে। ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধে জেতার পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চিফ অফিসার লর্ড ক্লাইভ ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য একটা উৎসব করতে চাইছিলেন। এই অবস্থায় সাহেবের স্বপ্নপূরণ করেন শোভাবাজার রাজবাড়ির রাজা নবকৃষ্ণ দেব। কলকাতার প্রথম দুর্গাপুজোটা শোভাবাজার রাজবাড়ি থেকেই শুরু হয়। মেলা টাকা খরচও করা হয় বিনোদনের জন্য। জানা যায়, এই রাজ বাড়ির পুজোতে সুভাষচন্দ্র বসু-সহ প্রমুখ জাতীয়তাবাদী নেতারা বিভিন্ন সর্বজনীন পূজার সঙ্গে যুক্ত থাকতেন।
বারোয়ারি পূজা
বারোয়ারির পুজোর ইতিহাসটা আবার অন্য। ১৭৬০ সালে হুগলির গুপ্তিপাড়ায় ১২ জন ব্রাহ্মণ বন্ধু চাঁদা তুলে দুর্গাপুজো শুরু করেন, তখন থেকেই বারোয়ারি পুজোর চল শুরু। কোনও একটা বাড়ির পুজোয় তাঁদের অংশ না নিতে দেওয়ার জন্যে তাঁরা ক্ষোভে, নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলে প্রথম পুজো শুরু করেন। আর কলকাতায় প্রথম বারোয়ারি পুজো শুরু করেন, কাশিমবাজারের রাজা হরিনাথ ১৮৩২ সালে। তখন থেকেই বারোয়ারি পুজো সর্বজনীন পুজোয় পরিণত হয়। তবে বর্তমানে সর্বজনীন পূজায় “থিম” বা নির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক মণ্ডপ, প্রতিমা ও আলোকসজ্জার প্রবণতাই বেশি দেখা যায়।