নিজস্ব প্রতিনিধি: দুর্গা পুজো শুধু উৎসব নয়, একটা জাতির পরিচয়, জাতির ঐতিহ্য। বাঙালি জাতির অহঙ্কার হল শারদ উৎসব। সারা বিশ্বের দরবারে এই উৎসব বাঙালির পরিচয় বহন করে। প্রতিমায় যখন মাটি দেওয়া হইত, তখন থেকেই সবার মনে পরম আনন্দ শুরু হয়ে যায়। কাজেই, বাংলার বুকে দুর্গাপুজো নিয়ে আবেগ চিরন্তন। আজ হাওড়া জেলার এক বাড়ির পুজোর কথা আপনাদের জানাবো। হাওড়া জেলার আন্দুল বাজার বাসস্টপের কাছ থেকে কিছুটা দূরেই অবস্থিত কুণ্ডু চৌধুরীদের বিশাল জমিদার বাড়ি। জায়গাটার নাম মহিয়ারী। জানেন কী, এই বাড়িতে বছরে দুবার দুর্গা পুজো হয় – একবার চৈত্র মাসে বাসন্তী পুজো, অন্যটি এই শরৎকালের শারদীয়ার অকাল বোধন। এদের পুজোর বৈশিষ্ট্য গুলি সংক্ষেপে আলোচনা করা যাক।
প্রথমত এখানে দেবী মহিষাসুরমর্দিনী রূপে নয়, দেবী সম্পূর্ণ একটি পারিবারিক রূপে পূজিত হন। মহিষাসুরমর্দিনীর রূপে নয়, বরং পুত্র কন্যা স্বামীর সঙ্গে মিলে এই বাড়ির প্রতিমা হয় হরগৌরীর। ষাঁড়ের পিঠে বসে আছেন শিব, তাঁর পাশেই মা দুর্গা অত্যন্ত শান্ত রূপে, তাঁদের ঘিরে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক গণেশ – সম্পূর্ণ নিটোল পারিবারিক ছবি। বাসন্তী পুজো আর শারদীয়া – দুই ক্ষেত্রেই এই বাড়ির মায়ের একই মূর্তি। একই কাঠামোর ওপরেই মা দুবাই পূজিত হন, আর সেই কাঠামো পুজো হয় উল্টোরথের দিন।
এঁদের গৃহ দেবতা লক্ষ্মী জনার্দন, বছরে নিত্য দিন পূজিত হন। ফলে এখানে পুজোও হয় বৈষ্ণব মতে। পুজোর কয়েকদিন এই বাড়িতে আমিষের কোন ভূমিকা থাকে না। শুধুমাত্র দশমীর দিন মায়ের বিসর্জনের পরেই এই বাড়িতে মাছ খাওয়ার প্রথা রয়েছে। এদের পুজোর আরো একটি বৈশিষ্ট – হরগৌরীর পাশাপাশি এখানে গরুড়ের পুজোও হয়। এমনকি পুরনো প্রথা অনুযায়ী এখনও দুর্গা পুজোর সময়ে এই বাড়িতে নৌকো পুজো হয়। অষ্টমী পুজোর দিন ধুনো পোড়ানোয় বাড়ীর সব গৃহিণীরা অংশগ্রহণ করেন। আগে সরস্বতী নদীতে এই ঠাকুরের বিসর্জন হলেও এখন তা হয় গঙ্গাতেই।