নিজস্ব প্রতিনিধি: অতিমারী থাক বা না থাক, কলকাতার পুজো আলাদাই ঐতিহ্য। পাড়ার হোক কিংবা বারোয়ারি থিমের পুজো কিংবা সাবেকী বনেদি বাড়ির প্রতিটা পুজোর মধ্যেই রয়েছে অদ্ভুত সৌন্দর্য। অনেকেই থিমের পুজোর চাইতে বনেদি বাড়ির পুজোকে পছন্দ করেন বেশি। অর্থাৎ প্রায় দুশো বা তিনশ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসছে যে পুজো গুলি সেটিতেই আগ্রহ প্রত্যেকের। বছরের অন্যান্য সময় এই বাড়িগুলোর দরদা বন্ধ থাকলেও পুজোর সময় সবাইকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় এই বাড়িগুলিতে। তাই বনেদি বাড়ির অন্দরমহল তখনই দেখে চোখ জুড়িয়ে নেন সবাই। জেনে নিন কলকাতার কিছু বনেদি বাড়ির পুজো।
১) মল্লিক বাড়ি, ভবানীপুর
মল্লিকবাড়ির সাবেকী পুজো মানেই অভিনেত্রী কোয়েল মল্লিকের বাড়ির পুজো। এক ঝাঁক তারকার দেখা পেতে চাইলেই এই বাড়িতে চলে আসতে পারেন। এখানে পশুবলি না হলেও বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে কুমারী পুজো থেকে শুরু বাকি সব আচার-অনুষ্ঠানই পালন করা হয়।
২) অক্রুর দত্তের বাড়ি, ওয়েলিংটন
এই বাড়ির পুজোর রীতি একচালা ডাকের সাজের মহিষাসুরমর্দিনী প্রতিমা। এই পুজোর কাঠামো পুজো হয় রথের দিন। ষষ্ঠাদিকল্পে পুজো, তাই ষষ্ঠীর দিনে হয় বোধন। আগে এই বাড়িতে পশুবলি দেওয়া হলেও এখন আখ ও ছাঁচিকুমড়ো বলি দেওয়া হয়।
৩) গঙ্গাপ্রসাদ সেনের বাড়ি, কুমোরটুলি
১৮৫৭ সাল থেকে একই বাড়িতে দুর্গাপুজো হয়। অন্যান্য পুজোর থেকে এই পুজোর তফাৎ হল এখানে গণেশের জায়গায় কার্তিক আর কার্তিকের জায়গায় গণেশকে বসানো হয়। এটি পূর্ব বঙ্গের রীতি। এই বাড়ির পুজো হয় ‘কালিকাপুরাণ’ পুথিমতে ‘নবম্যাদিকল্প’ অনুযায়ী। এই বাড়িতে চালকুমড়ো, আখের বলি দেওয়া হয়। এই পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, অষ্টমীর রাতে দুর্গার সঙ্গে কালীপুজো করা হয়।
৪) সেনবাড়ি, বৈঠকখানা
প্রায় একশ বছরেরও বেশি পুরনো এই বাড়ির প্রতিমা দ্বিভুজা অভয়া দুর্গা। তার পায়ের নীচে থাকে সিংহ। দুর্গার পাশে লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ ও কার্তিকের মূর্তি।
৫) চন্দ্রবাড়ি, ওয়েলিংটন স্কোয়ার
চন্দ্রবাড়ির সাবেক একচালা ডাকের সাজের মহিষাসুরমর্দিনী প্রতিমা এক সময়ে বাড়িতেই তৈরি করা হলেও, এখন কুমোরটুলি থেকে তৈরি করে আনা হয় এই মূর্তি। এই পুজোর বৈশিষ্ট্য, সন্ধিপুজোর সময়ে দক্ষিণাকালীর মন্ত্রে দুর্গার পুজো করা। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী এই তিন দিনেই এই বাড়িতে কুমারীপুজো করা হয়।
৬) হাটখোলার দত্তবাড়ি
দত্তবাড়ির পুজো হয় মঠচৌড়ি পদ্ধতিতে। অর্থাৎ এই ঠাকুরের মাথায় থাকে তিনটি চালা। দত্তবাড়ির দুর্গা প্রতিমার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল দেবীকে শাড়ি না পরিয়ে তাঁর গায়েই তুলি দিয়ে অপূর্ব কায়দায় শাড়ি এঁকে দেওয়া হয়।
৭) বাগবাজারের হালদার বাড়ি
হালদার পরিবারের এক পূর্বপুরুষ বালেশ্বরে বেড়াতে গিয়ে স্বপ্নাদেশ পান। স্বপ্নে দেবী তাঁকে এক মুসলমান জেলে পরিবারের বাড়ির ১৪ ফুট গভীরে দেবীকে উল্টো করে শায়িত করা আছে সেখান থেকে মুক্তি করার আদেশ দেন। আজও পুজো হয় সেই কষ্টিপাথরের দেবী মূর্তির। দেবীর মুখ থাকে দক্ষিণে।